সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট হয়ে উঠেছে কার্স্ক। রুশ ভূখণ্ডের এই অঞ্চলে ঢুকে পড়েছিল কয়েক হাজার ইউক্রেনীয় সেনা। তাদের মারে পিছু হঠতে বাধ্য হয় পুতিনবাহিনী। কিন্তু এবার হারানো জমি পুনরুদ্ধারে নেমেছে রাশিয়ার ফৌজ। কার্স্ক অঞ্চলে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে তারা। যা শামাল দিতে বেকায়দায় পড়েছে কিয়েভ। কোণঠাসা হচ্ছে ইউক্রেনীয় ফৌজ। এই কার্স্কই আলোচনার টেবিলে দর কষাকষির জন্য ‘হাতিয়ার’ হতে পারত ইউক্রেনের। কিন্তু এখন সেটাও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির।
গত বছরের আগস্ট মাসে হঠাৎই সীমান্তবর্তী কার্স্কে ঢুকে পড়ে প্রায় ইউক্রেনের প্রায় তিন হাজার সৈন্য। এই হামলা সম্পর্কে আগে থেকেই কিছুই বুঝতে পারেনি রাশিয়া। জেলেনস্কি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার জন্য উত্তর কোরিয়ার শরণাপন্ন হয় মস্কো। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে কার্স্কে প্রায় ১২ হাজার সেনা পাঠায় সেদেশের রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উন। কিন্তু তাঁর সেনাকেও মার দিয়ে ধরাশয়ী করে দেয় ইউক্রেন। কিন্তু এখন কার্স্কে লড়াইয়ের চিত্রটা বদলে গিয়েছে। কিমের সেনাকে সঙ্গে নিয়ে ভয়ংকর আক্রমণ শানাচ্ছে রুশ ফৌজ। এবার সেখানে পিছু হঠছে জেলেনস্কি বাহিনী।
এনিয়ে ইউক্রেনীয় সেনার এক আধিকারিক বোহদান মাইরোশনিকভ সংবাদমাধ্যমে জানান, “এই মুহূর্তে কার্স্কের পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। আমরা রসদ সরবরাহের রাস্তা পরিষ্কার না করি তাহলে যেকোনও মুহূর্তে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।” ফলে আমেরিকার চোখ রাঙানির মাঝে বিপদ কমার বদলে বেড়েই চলেছে ইউক্রেনের। গত মাসে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, “আমরা রাশিয়াকে কার্স্ক দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমার কিছু শর্ত রয়েছে। আমাদের যে জায়গাগুলো রাশিয়া দখল করে রেখেছে সেগুলো ছেড়ে দিতে হবে পুতিনকে।” মনে করা হচ্ছিল, রুশ ফৌজের নিয়ন্ত্রণে থাকা দোনবাস অঞ্চল ফিরে পেতে এই কার্স্ক অঞ্চলই বড় অস্ত্র ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের। কিন্তু বাস্তবে সেই সুযোগ হারাচ্ছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি, ইউক্রেন-আমেরিকার খনিজ চুক্তি এই সব বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন তিনি। কিন্তু আলোচনার মধ্যেই বাদানুবাদে জড়ান দুই রাষ্ট্রনেতা। তুমুল বচসার পর জেলেনস্কি ও তাঁর প্রতিনিধি দলকে হোয়াইট হাউস ছাড়ার নির্দেশ দেন ট্রাম্প। তারপরেই মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর মেলে, ইউক্রেনের জন্য সমস্ত সামরিক সহায়তা বন্ধ করল আমেরিকা। যতদিন পর্যন্ত না শান্তি স্থাপনের জন্য ইউক্রেনের নেতারা রাজি হবেন, ততদিন পর্যন্ত সামরিক সহায়তা বন্ধ থাকবে। শিয়রে বিপদ দেখে তড়িঘড়ি ট্রাম্পকে চিঠি লেখেন জেলেনস্কি। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে সেই বার্তা পড়ে শোনান ট্রাম্প। চিঠিতে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘শান্তির লক্ষ্যে কাজ করতে আলোচনার টেবিলে আসতে প্রস্তুত আমরা। আমেরিকার নেতৃত্বে কাজ করতে প্রস্তুত।’
এই মুহূর্তে সৌদি আরবে রয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের মধ্যস্থতায় জেদ্দায় আমেরিকার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি। সৌদির যুবরাজের আশা করছেন, এই আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়ার-ইউক্রেন যুদ্ধের রফাসূত্র মিলতে পারে। কিন্তু এখন কার্স্কের যা পরিস্থিতি তাতে আলোচনায় দর কষাকষির জন্য জেলেনস্কির হাতে কিছুই থাকবে না। অন্যদিকে, শর্ত না মানলে অস্ত্র সরবরাহ নিয়েও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে আমেরিকা। ফলে সব মিলিয়ে এখন প্রবল চাপে ইউক্রেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.