পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে যুদ্ধের বিষবাষ্প। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে মানুষই আজ মানুষের বড় শত্রু। দেশে দেশে সংঘাতে জারি মৃত্যুমিছিল। যুদ্ধের বলি নিষ্পাপ শিশুরাও। কোথাও আবার সরকারের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থান নাড়িয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত। কোথাও সংখ্যালঘুদের হাহাকারে ভারী বাতাস। বাদ যায়নি প্রকৃতির রুদ্ররোষও। বছরভর এমনই দুনিয়া কাঁপানো ঘটনা ফিরে দেখল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
১. জাপানে ভূমিকম্প- ১ জানুয়ারি, ২০২৪। বিভিন্ন দেশ যখন বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠে সেসময়ই প্রকৃতির রুদ্ররোষে পড়ে জাপান। বছরের প্রথম দিনেই ৭.৬ মাত্রার তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে উদীয়মান সূর্যের দেশ। আঘাত হানে সুনামিও। প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রাণ হারান শতাধিক মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বিস্তর।
২. ভারত-মালদ্বীপ সংঘাত- ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষদ্বীপ সফরের পরেই মালদ্বীপ-ভারত সংঘাত তুঙ্গে ওঠে। মোদিকে নিয়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্য করেন দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর দলের একাধিক নেতা। এমনকী ভারতের সমুদ্র সৈকতগুলো নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত বলেও কটাক্ষ করেন সেদেশের কয়েকজন নেতা। তারপরই নিন্দার ঝড় ওঠে। গোটা ভারত জুড়ে শুরু হয় ‘বয়কট মালদ্বীপ’।
৩. ফের বাংলদেশের মসনদে শেখ হাসিনা- ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন ভোট বয়কট করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে আমেরিকা। কিন্তু সমস্ত কিছু নস্যাৎ করে বিপুল জনসমর্থন পান হাসিনা। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ফের সরকার গড়ে তাঁর দল আওয়ামি লিগ। ১০ জানুয়ারি টানা চতুর্থবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন মুজিবকন্যা।
৪. তাইওয়ানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন- ১৩ জানুয়ারি তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট হন লাই চিং তে ওরফে উইলিয়াম লাই। নিঃসন্দেহে এই জয়ে অস্বস্তি বাড়ে চিনের। বরাবরই অভিযোগ ছিল, এই নির্বাচনে কলকাঠি নাড়ছে বেজিং। তাইপেইতে নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্ট চাইছিল কমিউনিস্ট দেশটি। আর সেই কারণেই লাইকে ‘বিপজ্জনক বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলে প্রচার চালিয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত শেষ হাসি হাসেন শাসক ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির নেতাই। এর আগে তিনিই ছিলেন তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
৫. ব্রিটেনের রাজার মারণ রোগ- ৬ ফেব্রুয়ারি আচমকাই জানা যায়, মারণ ব্যাধি ক্যানসারে ভুগছেন ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস। বিবৃতি জারি করে এই খবর জানায় বাকিংহাম প্যালেস। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল, প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত চার্লস। কিন্তু ব্রিটিশ রাজপরিবারের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়, রাজার শরীরে ক্যানসারের বাসা বাঁধার ঘটনাটি ‘পৃথক সমস্যা’। তবে কোন ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত তৃতীয় চার্লস, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি বিবৃতিতে।
৬. পাকিস্তানে নির্বাচন- লাগাতার নাশকতার মধ্যেই ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। জেলে বসেই আমজনতার জন্য বিশেষ বার্তা দেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভোটের ফল গণনার পর দেখা যায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, শাহবাজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পান ইমরানের দল পিটিআই সমর্থিত নির্দলরা। কিন্তু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকার কারণে তারা সরকার গঠন করতে পারেননি। ফলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন শাহবাজ শরিফ।
৭. ইউক্রেন যুদ্ধের দুবছর: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২। ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। সীমান্ত পেরিয়ে বাঁধভাঙা জলের মতো ঢুকে পড়ে রুশ ফৌজ। দুই প্রাক্তন সোভিয়েত সদস্যভুক্ত দেশের মধ্যে শুরু হয় প্রবল যুদ্ধ। কিন্তু এখনও কিয়েভ দখল করতে পারেননি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। লড়াইয়ে কয়েক হাজার সেনা ও বিপুল অস্ত্র খুইয়েছে মস্কো। দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করে ভাঁড়ারে টান পড়েছে ইউক্রেনেরও। কিন্তু থামেনি সংঘাত। এভাবেই যুদ্ধের দুবছর পূর্ণ করেছে যুযুধান দুপক্ষ। একের একের বিপুল অঙ্কের সামরিক প্যাকেজ ঘোষণা করে বন্ধু কিয়েভের পাশে রয়েছে আমেরিকা।
৮. অ্যালেক্সেই নাভালনির মৃত্যু- ১৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পয়লা নম্বর ‘শত্রু’ অ্যালেক্সেই নাভালনির। রাশিয়ার ফেডারেল জেল বিবৃতি জারি করে জানায়, হাঁটতে বেরিয়েছিলেন নাভালনি। তখনই অসুস্থতা বোধ করেন রাশিয়ার বিরোধী নেতা। খানিকক্ষণের মধ্যেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যান তিনি। দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স টিম হাজির হয় ঘটনাস্থলে। সেই দলই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে। তারপর থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে রাশিয়ার রাজনীতি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের খুনের অভিযোগ তোলে নাভালনির পরিবার।
৯. হাইতিতে হাহাকার- চরম অরাজকতা, লুঠতরাজে জেরবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ছোট দেশ হাইতি। মাফিয়াদের তাণ্ডবে বিপন্ন সাধারণ মানুষের জীবন। ১৫ মার্চ রাজধানী পর্তোপ্রাঁসের ৮০ শতাংশ দখল করে নেয় গ্যাংগুলো। ইস্তফা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়াল হেনরি। একাধিক শহরের কারাগার ভেঙে অপরাধীদের বেরও করে দেয় মাফিয়ারা। এমনকী প্রধানমন্ত্রী যাতে আর সুরক্ষিতভাবে দেশে ফিরতে না পারেন তার জন্য হাইতির প্রধান বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণও নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে তারা।
১০. রাশিয়ায় নির্বাচন- ১৭ মার্চ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় রাশিয়ায়। ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় ভ্লাদিমির পুতিনের ঝুলিতে রয়েছে ৮৭.৮ শতাংশ ভোট। ফলে বিপুল জনসমর্থন পেয়ে ফের একবার রাশিয়ার মসনদে বসেন পুতিন। টানা পঞ্চমবার প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধ, বিরোধী নেতা নাভালনির মৃত্যু কোনও কিছুই প্রভাব ফেলেনি নির্বাচনে। ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার মসনদে রয়েছেন পুতিন। এবারেও রেকর্ড ভোটে জিতে ২০৩০ পর্যন্ত ক্ষমতায় রাশ ধরে রাখলেন তিনি। এই মেয়াদ যদি শেষ করতে পারেন তাহলে রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্ট থাকার নজির গড়বেন পুতিন। টপকে যাবেন জোসেফ স্ট্যালিনকেও।
১১. ব্রিটিশ রাজবধূর ক্যানসার– ২৩ মার্চ ফের ফের ব্রিটিশ রাজ পরিবারের দুঃসংবাদ মেলে। ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার খবর নিজেই জানান ব্রিটেনের রাজবধূ কেট মিডলটন। গত প্রায় এক বছর ধরে লন্ডনের একটি ক্লিনিকে তাঁর পেটে বেশ কয়েকবার অস্ত্রোপচার হয়। অবশেষে জানা যায়, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত।
১২. ইরান-ইজরায়েল সংঘাত- ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামাস্কাসে ইরানের দূতাবাসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। প্রাণ হারান অন্তত ১৩ জন। মৃতদের মধ্যে ছিলেন তিন ইরানি সেনাকর্তাও। এই হামলার পিছনে ইজরায়েলকে দায়ী করে তেহরান। লাগাতার সতর্কবার্তার পর ১৩ এপ্রিল ইজরায়েলে একের পর এক মিসাইল ছুড়তে শুরু করে ইরান। সব মিলিয়ে ৩০০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ১৯ এপ্রিল ইসলামিক দেশটিকে পালটা মার দেয় ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ইরানের একাধিক শহর। ছড়িয়ে পড়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক।
১৩. তাইওয়ানে ভূমিকম্প- ৩ এপ্রিল ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তাইওয়ান। রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৭.৪। মৃত্যু হয় ১০০-র কাছাকাছি মানুষের। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বড় বড় হোটেল। ফাটল ধরে একাধিক রাস্তাতে। গত ২৫ বছরের মধ্যে এটাই তাইওয়ানে হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।
১৪. বন্যায় বিধ্বস্ত ব্রাজিল- ৫ মে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ব্রাজিল। সঙ্গে দোসর প্রবল বর্ষণ। প্রকৃতির রুদ্ররোষে মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যায়। ঘরছাড়া প্রায় দেড় লক্ষ। প্লাবনে তলিয়ে গিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। বন্যার জেরে ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ রিও গ্র্যান্ডে ডো সুলে জলের তলায় চলে যায়। এই প্রদেশের রাজধানী তথা ব্রাজিলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর পোর্তো আলেগ্রের অবস্থা ছিল সবচেয়ে খারাপ। সব মিলিয়ে অন্তত ৪৯৭টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ৮০ বছরের মধ্যে এটাই ব্রাজিলের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা।
১৫.‘অল আইজ অন রাফা’- ৭ মে প্যালেস্টাইনের জঙ্গি সংগঠন হামসকে খতম করতে দক্ষিণ গাজার রাফায় ঢুকে পড়ে ইজরায়েলের ট্যাঙ্কবাহিনী। শুরু হয় অভিযান। রাফার শরণার্থী শিবিরে হামলায় প্রাণ যায় ৪৫ জনের। তারপর থেকেই সোশাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হয় ‘অল আইজ অন রাফা’। দক্ষিণ গাজার এই শহরে অভিযান শুরু করা নিয়ে ইজরায়েলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে আমেরিকার। তেল আভিভে অস্ত্রের সরবরাহে হ্রাস টানে হোয়াইট হাউস। রাষ্ট্রসংঘের তোপের মুখে পড়েন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
১৬. ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু- ১৯ মে কপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। জানা যায়, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আরস নদীর উপরে একটি বাঁধ উদ্বোধন করার কথা ছিল রাইসির। সেই কর্মসূচিই ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনে। একটি পার্বত্য অঞ্চল পেরিয়ে যাওয়ার সময় কপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উত্তর-পশ্চিম ইরানের একটি পাহাড়ে আছড়ে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় ইজরায়েলের দিকে ষড়যন্ত্রের আঙুল ওঠে। কিন্তু সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দেয় তেল আভিভ।
১৭. ঋষি সুনাকের পরাজয়- ৫ জুলাই ব্রিটেনের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়। নজির গড়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন কিয়ের স্টার্মার। তাঁর দল লেবার পার্টির কাছে ভরাডুবি হয় কনজারভেটিভ পার্টির। প্রধানমন্ত্রীর গদি হারান ঋষি সুনাক। ১৪ বছর পর টোরি শাসনের অবসান ঘটে রাজার দেশে।
১৮. ইরানে নির্বাচন- ইব্রাহিম রাইসির আকস্মিক মৃত্যুর পর নির্বাচন হয় ইরানে। ৬ জুলাই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সংস্কারপন্থী নেতা মাসুদ পেজেস্কিয়ান। জোর টক্কর দিয়ে তিনি পরাজিত করেন কট্টরপন্থী নেতা সাইদ জালিলিকে। পেজেস্কিয়ানের শপথগ্রহণে গিয়েই গুপ্তঘাতকের হাতে তেহরানে মৃত্যু হয় হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহর। এই খুনে অভিযোগের আঙুল ওঠে ইজরায়েলের দিকে।
১৯. গদিচ্যুত শেখ হাসিনা- নির্বাচন জেতার আট মাসের মধ্যেই গদিচ্যুত হন শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন মুজিবকন্যা। এরপর ৮ আগস্ট মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
২০. লেবাননে হামলা ইজরায়েলের- ১৯ সেপ্টেম্বর পেজার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে লেবানন। সশস্ত্র সংগঠন হেজবোল্লার সদস্য-সহ প্রাণ যায় অন্তত ৫০০ জনের। আহতের সংখ্যা ৪ হাজার পেরিয়ে যায়। এই ঘটনার পরদিন থেকেই লেবাননে হামলা শুরু করে ইজরায়েল। ২৭ সেপ্টেম্বর ইজরায়েলি সেনার অভিযানে নিহত হন হেজবোল্লা প্রধান হাসান নাসরাল্লা। কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর উত্তরসূরি হাশেম সাফেদ্দিনকেও খতম করে তেল আভিভ। নয়া কমান্ডার হিসাবে নাইম কাসেমের নাম ঘোষণা করে হেজবোল্লা। এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ইরানও।
২১. গাজা যুদ্ধের এক বছর- ৭ অক্টোবর। ইজরায়েলের বুকে বেনজির হামলা চালায় প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র সংগঠন হামাস। প্রাণ হারান অন্তত দেড় হাজার মানুষ। ২৫০ জনকে অপহরণ করে গাজা ভূখণ্ডে নিয়ে যায় হামাস। তারপরই অপারেশন ‘আয়রন সোর্ড’ শুরু করে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস বা ইজরায়েলের সেনা। বোমার আঘাতে কার্যত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। এখনও পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ হাজার প্যালেস্তিনীয়। নিহত শতাধিক ইজরায়েলি সেনাও। রাষ্ট্রসংঘ-সহ আন্তর্জাতিক মহলে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়লেও সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে তেল আভিভ। এক বছর পূর্ণ হলেও মেলেনি রফাসূত্র। এর মধ্যেই ১৭ অক্টোবর ইজরায়েলের হামলায় খতম হয় নয়া হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
২২. ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন- ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় আমেরিকায়। শুরুতে ৮২ বছরের জো বাইডেনকে প্রার্থী হিসেব বেছে নিয়েছিল ডেমোক্র্যাট। কিন্তু পরে ভোটের লড়াই থেকে সরে যান বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে শামিল হন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হতে দেখা যায় কমলাকে অনেকটা পিছনে ফেলে দিয়েছেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচন জিতে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটান তিনি।
২৩. বাংলাদেশে হিন্দুদের হাহাকার- হাসিনাহীন বাংলাদেশে চরমে হিন্দু নির্যাতন। ২৫ নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। হিন্দুদের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। দিকে দিকে সংখ্যালঘুদের মারধর, বাড়ি-ঘরে হামলা চালায় মৌলবাদীরা। বাদ যায়নি ইসকনের মন্দিরও। পোড়ে লক্ষ্মীনারায়ণের মূর্তি। হিন্দু নিপীড়ন নিয়ে ভারত-ব্রিটেনের মতো বিভিন্ন দেশ কড়া বার্তা দিলেও দ্বেষের বাংলাদেশে থামছে না হিংসা।
২৪. আসাদ সাম্রাজ্যের পতন- ২৭ নভেম্বর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ভয়ংকর রূপ নেয়। আল কায়দার শাখা সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নেতৃত্বে আলেপ্পো দখল করে নেওয়ার ঘোষণা করে বিদ্রোহীরা। তারপর একে দারা, হোমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করার পর ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামাস্কাসে পৌঁছয় বিদ্রোহীরা। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করে তারা। পতন ঘটে আসাদ সাম্রাজ্যের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.