শেয়ার এবং বন্ড দুই মার্কেটেই খবরের ছড়াছড়ি। ইনভেস্টরদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনটি প্রাধান্য বেশি, আর কোনটিরই বা কম এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সব ছাপিয়ে অবশ্য যে বিষয়টি বড়সড় রূপ ধারণ করে, তা লগ্নির সম্ভাব্য গন্তব্য সংক্রান্ত। নীলাঞ্জন দে’র সঙ্গে প্রশ্নোত্তরে মাইপ্লেক্সাসের কর্ণধার প্রসুনজিৎ মুখার্জি।
প্র. এই মুহূর্তে নতুন লগ্নির জন্য সব থেকে বড় সহায়ক শর্ত কী বলে মনে করেন?
উ. এক কথায় বলতে গেলে কর্পোরেট প্রফিটেবিলিটি মূল প্রসঙ্গটি আমাদের দেশে ব্যবসাবাণিজ্যের আর্নিংস এবং প্রফিট কেমন হতে পারে আগামিদিনে- এর উপর নির্ভর করবে বহু কিছু। বিনিয়োগকারীরাও এই বিষয়টি তলিয়ে ভাবতে চাইছেন, তাই প্রধান সহায়ক অথবা শর্ত এইটিই।
ভবিষ্যতে কি কর্পোরেট দুনিয়া থেকে বিনিয়োগ পেতে থাকব আমরা? শিল্পে তথা পরিষেবায় কী রকম বিনিয়োগ আসতে পারে? এই জাতীয় ইস্যু খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের অর্থনীতি যদি সত্যিই ৮-৮.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়, তা হবে কর্পোরেট লগ্নির হাত ধরেই। হ্যাঁ, সরকারী নীতির প্রভাব তো অবশ্যই থাকবে। মনে রাখুন আরও একটি বড় প্রসঙ্গ। কর্পোরেট লগ্নির পথ যদি সুগম হয়, তাহলে তার অভিমুখ কোনদিকে? “ক্যাপিটাল ইনটেনসিভ” ব্যবসায় বিনিয়োগ এলে, তার অভিঘাত একরকম হবে। অন্যদিকে, যদি “পিপল ইনটেনসিভ” ব্যবসায় বড়-মাপের বিনিয়োগ আসে, তার অন্য অভিঘাত। প্রথমটির জন্য প্রফিটেবিলিটি বাড়বে, এটা বলতে পারি। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে কনসাম্পশন বৃদ্ধি পাবে, এমনও বলা চলে।
প্র. কনসাম্পশনের কথা তুললেন, দেখলাম। আধুনিক ভারতে এই ইস্যুটি নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক। আপনার বক্তব্য কী?
উ. দেখুন, কনসাম্পশনের ধারা যে অন্যরকম হয়েছে ইদানিং, তা তো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। পিরামিডের নিচের দিকে যেভাবে কনসাম্পশন হলে ভালো হত, তা ঠিক হচ্ছে না। এর জন্য ক্যাপিটাল মার্কেটেও প্রতিক্রিয়া বোঝা যাচ্ছে। মনে রাখুন, গত বাজেটে কনজাম্পশন বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট। পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। মধ্যবিত্তের হাতে যাতে খরচ করার জন্য বেশি উদ্বৃত্ত থাকে, তারও চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগামিদিনে কেমনভাবে কনসাম্পশন বৃদ্ধিপায়, তার উপর অনেকের নজর থাকবে। ইনভেস্টমেন্টের ফ্লো বাড়লে তা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হত।
প্র. সাধারণ কনজিউমাররা তো মুদ্রাস্ফীতির প্রবল শিকার, তাই না?
উ. হ্যাঁ, ঠিক তাই-ই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এবং সম্প্রতি যুদ্ধবিগ্রহ এবং ট্যারিফ, এই দুইয়ের কারণে মুদ্রাস্ফীতি হয়তো বেড়েও যেতে পারে। আশার কথা, আমাদের দেশের ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রক হালে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি কমানোর বিষয়ে। রেপো রেটে ইতিমধ্যেই পরিবর্তন এনেছেন তাঁরা, তাতে সামগ্রিকভাবে উপকৃত হয়েছে অর্থনীতি। মিডিয়াম টার্ম ডেট, এর ফলে একটু বেশি আকর্ষণীয় হবে, এমন বলা যায়। ইসু্যুইটির জনাও তা সহায়ক হবে। তবে আপনি যা বলছেন, সাধারণ কনজুমাররা অবশ্যই দাম বাড়ার শিকার, এবং আমাদের নীতি নির্ধারকরা যেন এই ব্যাপারটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখেন এমনই আমি আশা করবো। লাগামছাড়া দাম বাড়লে গ্রাহকরা অসুবিধায় পড়েন, এবং এর ফল আমরা লগ্নির দুনিয়ায়ও দেখতে পাই।
প্র. দাম বাড়ার প্রভাব প্রতিহত করার জন্য সোনায় লগ্নি করতে চাইছেন অনেকে। আপনি কী বলেন?
উ. সোনা সাবেক আমল থেকেই “হেজ হেজ এগেইনস্ট ইনফ্লেশন” (hedge against inflation) হিসাবে গণ্য। ইদানিং সোনায় লগ্নি করা একটি বিশেষ অভ্যাসে পরিণত করেছেন এক শ্রেণীর লগ্নিকারী, তা বুঝতে পারছি। হয়তো আগামিদিনে গোল্ডে তাঁদের আগ্রহ অটুট থাকবে তবে নতুন লগ্নির অনেকটাই যদি সোনা টেনে নেয়, তাহলে অন্য অ্যাসেট ক্লাসে তাঁদের নজর কমে আসবে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাসে লগ্নি করার উপদেশ দিয়ে থাকেন পেশাদাররা। আমার মতে ডাইভারসিফিকেশনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া উচিত হবে। এই সদ্য চালু হওয়া অর্থবর্ষে এমনই পরামর্শ দিতে চাই আমি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.