অভিষেক চৌধুরী, কালনা: ঠিক যেন ‘মণিহারা’ সিনেমার প্রেক্ষাপট! গা ছমছমে পরিবেশ, রাত গভীর হতেই দরজা-জানলায় ঠকঠক শব্দ! রাতের অন্ধকারে কেউ যেন লাফালাফি করছে। শুধু তাই নয়, জলে ঝাঁপ মারার পাশাপাশি রাস্তাতেও নাকি অশরীরীরা ঘোরাফেরা করছে! কিন্তু কাউকে দেখা যায় না। তবু মনে হয়, কেউ যেন পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক মহিলা নাকি আত্মীয়দের জানান, তাঁর গলা নাকি কেউ টিপে ধরে। সারা শরীরে নাকি তাঁর আগুন জ্বলে উঠেছে।
এমনই সব ভূতুড়ে কাণ্ডে গা ছমছমে আতঙ্কে ভুগছেন কালনার বৈদ্যপুর রথতলা এলাকার মানুষজন। গত মাসে পরপর চারজনের মৃত্যুর পর সন্ধ্যা নামতেই ‘ভূতের আতঙ্ক’ গ্রাস করছে সকলকে। আঁধার ঘনাতেই দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরবন্দি হয়ে পড়ছেন তারা। মাসখানেক ধরে এমনই এক ঘটনার জেরে গ্রাম থেকে ভূত তাড়াতে অনেকে আবার ওঝা আনারও দাবি তুলেছেন। যদিও এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রবিবার বিজ্ঞান মঞ্চ ও মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতার প্রচার চালানো হয়। অন্ধকার এলাকায় পুলিশি নজরদারি-সহ আলো লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা ২ ব্লকের বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের বৈদ্যপুর রথতলা এলাকায় গত ডিসেম্বর মাসে বার্ধক্য, দুর্ঘটনা ও রোগে ভুগে কয়েকদিনের মধ্যে পরপর চারজনের মৃত্যু হয়। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয়দের অনেকের মনেই প্রশ্ন তৈরি হয়। প্রথমে বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব না পেলেও পরে মানুষের মুখে-মুখে বিভিন্ন ধরনের ভৌতিক কাণ্ডের গল্প উঠে আসতে থাকে। কেউ বলে, রাতের অন্ধকারে দরজা-জানালায় আওয়াজ হচ্ছে। কেউ বলছেন, রাত বাড়তেই বাচ্চারা কাউকে রাস্তায় চলাফেরা করতে দেখে আঁতকে উঠছে। ভূতের ভয়ে শুনশান হয়ে পড়ছে এলাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বাসিন্দা এক কলেজ পড়ুয়া বলেন, “গত মাসে বার্ধক্যজনিত ও বিভিন্ন কারণে চারজনের মৃত্যুর পর গ্রামে ভূতের আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। আমি নিজেও ভয়ে বের হইনি। ভগবান যখন আছেন, তাহলে ভূতও থাকবে বলেই মনে হয়।” শৌভিক ক্ষেত্রপালের বক্তব্য, “অধিকাংশ মানুষের মনেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই জানাচ্ছেন, গভীর রাতে কাউকে না কাউকে দেখা যাচ্ছে। কারও বাড়ির দরজা-জানালায় নাকি ধাক্কা দিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই সকলে বাড়িতে ঢুকে যাচ্ছে। তবে ভূত না মানুষে ভয় দেখাচ্ছে বুঝতে পারা যাচ্ছে না। আমরাও বের হচ্ছি না।” অন্যদিকে চম্পা ক্ষেত্রপাল নামের এক মহিলা গ্রামে ওঝা এনে ভূত খোঁজার দাবি তোলেন।
এমন আতঙ্কের পরিবেশে ভয় কাটাতে আসরে নেমেছে বিজ্ঞান মঞ্চ। রবিবার পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচার করে বলা হচ্ছে, ‘ভূত’ বলে কিছু নেই। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট কৃষ্ণচন্দ্র মুণ্ডা বলেন, “বৈদ্যপুর রথতলায় ভূতের আতঙ্ক দেখা দেওয়ায় সরেজমিনে তদন্ত করে স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলা হয়। বিজ্ঞান মঞ্চ, পুলিশ-প্রশাসন এই বিষয়ে তাদের সচেতন করে। এলাকায় পর্যাপ্ত আলো না থাকায় অন্ধকার কাটাতে আলো লাগানো হবে। পুলিশি নজরদারি চলবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.