রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: একের পর এক নির্বাচনে ব্যর্থতা, দলে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দেওয়া থেকে শুরু করে গোষ্ঠীকোন্দলে বিদ্ধ বঙ্গ বিজেপি। এ রাজ্যে উনিশের লোকসভা ভোটের থেকে ৬টি আসন কমে এবার ১২টি আসন দখলে রাখতে পেরেছে গেরুয়া শিবির। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)বারবার বলেছেন, দলে পুরনো নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব দিতে হবে। সোশাল মিডিয়ায় ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’ পোস্ট করেছেন দিলীপ। ভোটে বিপর্যয়ের পর পুরনোদের ফিরিয়ে আনার দাবিও উঠেছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। এবার ঘরের ছেলে দিলীপ ঘোষের ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’ এর তত্ত্বেই সিলমোহর দিল আরএসএস।
লোকসভা ভোটে (2024 Lok Sabha Election)বিজেপির আশানুরূপ ফল না হওয়ার জন্য আরএসএসের মুখপত্র ‘স্বস্তিকা’র শেষ সংখ্যায় নয় দফা কারণ তুলে ধরা হয়েছে। বঙ্গ বিজেপির (BJP) ক্ষমতাসীন শিবিরের নেতাদের নিশানায় রেখেই সংঘের মুখপত্রে বলা হয়েছে, পুরনো ও দক্ষ পার্টিকর্মীদের সম্পূর্ণ অবহেলা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গেই উল্লেখ করা হয়েছে, যাঁরা নির্বাচন পরিচালনা করেছেন, তাঁরা এদিকে নজর দেননি। বঙ্গ বিজেপির মধ্যে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব সমানে চলছে। গেরুয়া শিবিরের একাংশের অভিযোগ, পুরনো নেতা, কর্মীদের বড় অংশকেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। নব্য ও তৎকাল বিজেপির লোকজন পার্টি চালাচ্ছে। বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের নেতাদের বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ ছিল আদি ও বিক্ষুব্ধ শিবিরের। সেটাই আরএসএসের (RSS) মুখপত্রে বলা হয়েছে।
এর ফলে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে। কারণ, প্রার্থী করার ক্ষেত্রেও পুরনো মুখকে কার্যত জায়গা দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে দলের অন্দরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari)। আরএসএসের মুখপত্রে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শুভেন্দু জনসভা ও আদালতের লড়াইয়ে তাঁর যোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও অন্য অনেক দিকে নজর দেননি। এছাড়াও বলা হয়েছে, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ এর কী প্রভাব পড়তে পারে, তার পালটা প্রচারের কোনও কৌশলই ছিল না বিজেপির কাছে। আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বুথের কর্মীদের নির্বাচনী ক্লাস নেওয়া, ছোট ছোট সভা করা উচিত ছিল। বড় জনসভাকে রাজ্য নেতারা অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু অঞ্চলভিত্তিক নির্বাচনী কর্মিসভার প্রয়োজন ছিল।
ওড়িশায় এবার সরকার গঠন করেছে বিজেপি। সেই কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, ওড়িশা (Orissa) থেকে বঙ্গ বিজেপির কিছু শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন। বাংলার ভোটযুদ্ধে বিজেপির অনেক নেতা ছিলেন, কিন্তু সংগঠনের যোদ্ধা, কর্মী ছিলেন কম। শুধু হাওয়ায় নৌকা এগোয় না। পাল তোলার মাঝি চাই। সংঘের মুখপত্রে আরও লেখা হয়েছে, আগে রাজ্য বিজেপির পয়সা ছিল না, লোকবল ছিল না। কিন্তু সিপিএম তখন দুর্ভেদ্য থাকা সত্ত্বেও অনেক জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেশ কিছু আসনে বিজেপি জয়ী হতো কেবলমাত্র সাংগঠনিক দক্ষতায়। এবং সেই দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত পার্টি ক্লাস হতো।
বঙ্গ বিজেপির বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্য সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। নাম উঠে এসেছে বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন এবং সফল সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও। আর এই চর্চার মধ্যে জেলায় জেলায় ঘুরে কর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে জনসংযোগ সারছেন দিলীপ। শনিবার ভাটপাড়ায় কর্মীদের সঙ্গে ক্যারাম খেলেছেন, বৈঠক ও আড্ডাও চলেছে। সোমবার গিয়েছিলেন মালদহে এক কৃতী ছাত্রের বাড়িতে। ছাত্রটিকে কথা দিয়েছেন, খড়গপুর আইআইটি-তে পড়ার সুযোগ হলে তিনি সহযোগিতা করবেন। মেদিনীপুর, বারাকপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ঘুরে সুকান্ত মজুমদারের কেন্দ্র বালুরঘাটে এদিন পৌঁছেছেন দিলীপ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.