অর্ণব আইচ: ট্যাংরায় তিন খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রসূন দে-কে অবশেষে হাতে পেল পুলিশ। সুস্থ হতেই অভিজাত দে পরিবারের ছোট ছেলেকে সোমবার বিকেলে এনআরএস হাসপাতাল থেকে ট্যাংরা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার রাতেই পুলিশ খুন ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে প্রসূনকে গ্রেপ্তার করেছে। সে-ই তার স্ত্রী রোমি ও বউদি সুদেষ্ণার হাতের শিরা ও গলা কেটে খুন করেছেন বলে প্রসূন ইতিমধ্যে স্বীকার করেছে। নিজের কিশোরী মেয়েকেও শ্বাসরোধ করে খুনের কথাও এদিন থানায় কবুল করে নিয়েছে সে। তবে দু’ভাইয়ের একাধিক বক্তব্যে অসঙ্গতি রয়েছে।
রহস্যের জট খুলতে প্রসূনকে দিয়ে পুরো ঘটনার পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরি বলে লালবাজারের দাবি। সেজন্যই প্রসূনকে ট্যাংরায় তাঁর বাড়ি, অর্থাৎ ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে পুরো ঘটনার পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, এনআরএসে চিকিৎসাধীন প্রণয় সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হবে। প্রণয়-প্রসূনকে একসঙ্গে ট্যাংরার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দুই স্ত্রী সুদেষ্ণা-রোমি ও কন্যাকে খুনের পুনর্গঠন করা হবে। দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরাও করবে পুলিশ। এরপর দু’জনকে আলাদাভাবে, প্রয়োজনে একসঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে সেইসব রাস্তায়, যেখানে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রণয়ের নাবালক ছেলে প্রতীপকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি করে ঘুরে আত্মহত্যার ছক কষছিল দুই ভাই। শেষমেশ ই এম বাইপাসের কোন জায়গা থেকে প্রসূন গাড়ির চালকের আসনে বসে গতি বাড়িয়ে দেয়, কোথায় গাড়ির সিটবেল্ট খুলে নেয়, কী ভাবে মেট্রোরেলের পিলারে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানো হয়, সেই তথ্যগুলিও অভিযুক্তদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় প্রণয় ও প্রসূন জানিয়েছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে যখন বাড়ির প্রত্যেককে জীবন্ত অবস্থায় তারা দেখেন, তখন প্রসূন তাঁর দাদা প্রণয়কে বলে তাদের কারখানা থেকে চামড়া কাটার ছুরি নিয়ে এসে বাড়ির সবার শিরা কাটতে। বড় ও ধারালো সেই ছুরি চামড়ার গ্লাভস তৈরিতে কাজে লাগে। কিন্তু প্রণয় তখন প্রসূনকে বাড়ি থেকে বার হতে বারণ করেন। কারণ তখন কারখানায় পাওনাদারদের আসার কথা। যেহেতু ওরা ভেবেছিলেন ওষুধ মেশানো পায়েস খেয়ে সকালে তাঁদের মৃত্যু হবে, তাই সে দিনই পাওনাদারদের আসতে বলা হয়েছিল। উপরন্তু প্রসূন ওই ভারী ও বড় মাপের ছুরি হাতে ধরতে অভ্যস্ত নয়। তাই প্রসূন দাদার নির্দেশে কাগজ কাটার ধারালো ছুরি খুঁজে বার করেন। জেরায় প্রসূনের দাবি, বাড়ির দুই বউ প্রথমে নিজেদের হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সফল না হওয়ায় প্রসূন দাদার কথামতো দু’জনের হাতের শিরা ও গলা কেটে তাঁদের ‘মুক্তি’ দিয়েছে।
যদিও এব্যাপারে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মোতাবেক, একমাত্র ঘুমন্ত অবস্থাতেই কারও শিরা এ রকম মসৃণভাবে কাটা সম্ভব। আবার রোমির দেহে কালশিটে ও এমন আঘাতের চিহ্ন মিলেছে, যা বাধা দেওয়ার কারণে হতে পরে। দুই স্ত্রী ও মেয়েটির দেহ যে যে ঘরে পড়েছিল, সেই ঘরগুলোয় প্রসূনকে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্গঠন করা হবে। প্রতীপকে কোন ঘরে, কীভাবে একাধিকবার খুনের চেষ্টা হয়, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদ্ন্তকারীরা।
গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রসূনের হাতের হাড় সরে যাওয়া ছাড়াও পাঁজরের হাড় ভেঙেছিল। তাই বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এনআরএসে এসে বারবার তিনি ‘বুকে ব্যথা ও কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে’ বলে দাবি করতে থাকেন। সোমবার ট্যাংরা থানা ও লালবাজারের পুলিশ আধিকারিকদের এনআরএসের চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, প্রসূন সুস্থ। তাঁকে থানা বা লালবাজারে নিয়ে গিয়ে জেরা করা যেতে পারে। তবে কয়েকটা ওষুধ খেতে হবে। অন্যদিকে দুর্ঘটনায় প্রণয়ের পা ভাঙে। ট্র্যাকশন দেওয়া হয়। তাই তার সুস্থ হতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.