Advertisement
Advertisement

Breaking News

WB Assembly

বিরল সৌজন্য বিধানসভায়, বঙ্গভঙ্গ ইস্যুতে মমতার পাশেই শুভেন্দু

বাদল অধিবেশনের শেষদিনে বঙ্গভঙ্গ ইস্যুর বিরোধিতায় শাসক-বিরোধী বিরল ঐক্যের সাক্ষী বিধানসভা। অবিভক্ত বাংলার পক্ষে সওয়াল শুভেন্দু অধিকারীর। শাসকদলের প্রস্তাবে বিরোধী দলনেতার প্রস্তাবও যোগ হল।

Opposition agreed to govt in WB assembly on WB partition issue
Published by: Sayani Sen
  • Posted:August 5, 2024 2:09 pm
  • Updated:August 5, 2024 8:01 pm  

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বাদল অধিবেশনের শেষদিনে বঙ্গভঙ্গ ইস্যুর বিরোধিতায় শাসক-বিরোধী বিরল ঐক্যের সাক্ষী বিধানসভা। অবিভক্ত বাংলার পক্ষে সওয়াল শুভেন্দু অধিকারীর। শাসকদলের প্রস্তাবে বিরোধী দলনেতার প্রস্তাবও যোগ হল। অধ্যক্ষ আপত্তি জানালেও শুভেন্দুর প্রস্তাব যোগ করতে বলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, মতানৈক্যের ঊর্ধ্বে পদক্ষেপ নিয়েছে বিধানসভা। 

এদিন বিধানসভায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব পেশ করেন রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারকে আক্রমণ করেন। পরে বিধানসভায় এই প্রসঙ্গে বলেন শুভেন্দু অধিকারী। প্রথমেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, “আজকের প্রস্তাবের বয়ান রাজনৈতিক। ‘ফর দি পিপল, বাই দি পিপল’- এর নীতি এখানে মানা হয়নি। এটি একটি রাজনৈতিক দলের লিফলেট হয়ে গিয়েছে। এতে গণতন্ত্রের দাবি মানা হয়নি। লোকসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল হয়নি। উত্তরবঙ্গের জন্য তাই প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ রাখেনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কখনই রাজ্য ভাগের কথা বলেননি। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলছিলেন, ৭১ সালে যা ব্যবস্থা আছে তাতে নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিলের সঙ্গে উত্তর রিজিয়ন ভাগ করা যায় না। এটা সবাই জানে। আবার এটাও ঠিক যে, আইন সংশোধন করা যেতে পারে। সুকান্তবাবু এই মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি কেন্দ্রের টাকা পাচ্ছে। আমাদের রাজ্যে নর্থ রিজিয়নে যাতে এই টাকা আসে মানুষের জন্য সেই কথা বলতে চেয়েছেন। এই টাকা রাজ্য সরকার সরাসরি পায়। সংবিধান সংশোধন করে যদি বাড়তি টাকা আসে তাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর খরচ করবে। এটা নিয়ে সারা বছর ঝগড়া কেন?”

Advertisement

অনন্ত মহারাজের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন এর পর শুভেন্দু আরও বলেন, “শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্য এই বাংলা এদেশের সঙ্গে আছে। তিনিই এই মোশনের মুভার ছিলেন। ৫৮-২১ ভোটে জেতেন। বলা হয় আমরা পাকিস্তানে যাব না। অনেকে গোর্খাল্যান্ডের কথা বলেছেন। কিন্তু গ্রেটার কোচবিহার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করলেন। ছত্রধর মাহাতো আপনাদের দলের সম্পাদক। গোর্খা নেতাদের সঙ্গে আপনাদের বৈঠক হয়েছে। আপনারা সুন্দরবন আর উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন নিয়ে বলুন।” অবিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে প্রস্তাব পেশ করেন শুভেন্দু অধিকারী।

[আরও পড়ুন: Bangladesh Live Updates: বাংলাদেশে লাশের পাহাড়! দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা দেবেন সেনাপ্রধান]

এর পর বক্তব্য রাখতে শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এটা স্পর্শকাতর বিষয়। আমাদের সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে একত্রিত করার কথা। বিরোধী দলনেতা যা বললেন সেই প্রস্তাব গ্রহণ করতে বলব। ছোট ছোট অনেক বিষয়ে ঝগড়া থাকবে। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বলব, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অনুমতি দিলে বিরোধী দলের নেতার কথা লিখুন। আর লিখুন পশ্চিমবঙ্গ এক থাকবে। বাংলাকে ভাঙতে দেব না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।” এদিন আরও একবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে নীতি আয়োগের বৈঠকে তাঁর কণ্ঠরোধের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এগুলো ফেডারেল স্ট্রাকচার? নীতি আয়োগের বৈঠকে আমাকে ২ মিনিট বলতে দিলেই হয়ে যেত। বিরোধী দল থাকবে। তারাও বলবে। আমায় বলতে দিলেই হত। আমার নীতি আয়োগার প্রতি বিরোধিতা নেই। আমি গঠনমূলক কাজের পক্ষে। যে কেউ সেটা বললে সেটা হোক। আমি চাই বাংলার যে টাকাগুলো বাকি আছে, সেগুলো পাক। ১০০ দিনের টাকা বাংলা পাক, রাস্তার আবাসের টাকা পাক।”

মমতা বলেন, “জেলা ভাগের কথা বলছেন। অনেক ক্ষেত্রেই হয়েছে পুলিশ জেলা ভাগ করে। এক একটা জেলা এত বড় তাতে পুলিশ ছুটে যেতে পারে না। এরকম সুযোগ এলে আমি আবারও করব। বাংলায় রাখিবন্ধন হয়েছিল। নেতাজী দেশকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। একটা ছোট ছেলে ক্ষুদিরাম কী করে গিয়েছেন। বাংলার অবদান রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজির আন্দোলন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন আমরা পালন করি না? আমরা বিভেদ নয়, বিচ্ছেদ নয়, ঐক্য চাই। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের পর আমাদের সিট বেশি সংসদে। তাহলে অযথা আমরা নর্থ ইস্ট কাউন্সিলে যাব কেন? এইট সিস্টার স্টেট এগুলো। পাহাড়ি দেশ বলে এগুলো পাচ্ছে। শুধু দার্জিলিং কেন? বাংলায় থেকেও তবে পেতে পারে। বাংলা তো গেটওয়ে অফ নর্থ ইস্ট রিজিয়ন, সাউথ ইস্টেরও। দেশের স্বাধীনতার জন্য যদি কেউ সব থেকে বেশি লড়াই করে থেকে সেটা বাংলা। বৃহত্তর স্বার্থে আসুন। উত্তরবঙ্গের দপ্তর আয়তনে ছোট। এটা টাকা দিয়ে হিসাব কষবেন না। অন্য দপ্তর থেকেও সাহায্য করা হয়। ১ লক্ষ ৬৭ হাজার কোটি খরচ করা হয়েছে। দার্জিলিংয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”

অনন্ত মহারাজের সঙ্গে মমতার বৈঠক প্রসঙ্গে শুভেন্দুর খোঁচার জবাব দিয়ে মমতা আরও বলেন, “আমি অনন্ত মহারাজের কাছে গিয়েছি তাতে কী? চা খেতে ডেকেছেন গিয়েছি। আপনি ডাকুন না, আপনার বাড়িও যাব। আমরা সৌজন্য করব। আপনাদের প্রস্তাব থাকলে দেবেন। আমরাও দেব। আমরা রাজ্যটাকে ভালোবাসি, দেশকেও ভালোবাসি। আমরা অখণ্ড পশ্চিমবঙ্গকে যেকোনও মূল্যে রক্ষা করব। আমরা বিভাজন চাই না। শুভেন্দু যেটা বলল সেটাও নিয়ে নিন।” সবশেষে বিকল্প প্রস্তাব পাঠ করেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, “আমরা অখণ্ড পশ্চিমবাংলাকে যেকোনও মূল্যে রক্ষা করব। আমরা বিভাজন চাই না। এই মহতি সদন অবিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।” সর্বসম্মতিক্রমে ওই প্রস্তাব গৃহীত হয় বিধানসভায়। এই প্রথমবার বিধানসভায় রাজ্য সঙ্গীত গান বিজেপি বিধায়করাও। 

[আরও পড়ুন: ‘কাজে অনুতপ্ত নই’, মন্ত্রিত্ব ছেড়েও নিজের অবস্থানে অনড় অখিল গিরি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement