Advertisement
Advertisement
Buddhadeb Bhattacharjee Death

প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বাম রাজনীতির অন্তিম নক্ষত্র পতন

নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলার বামফ্রন্ট সরকারের শেষ মুখ্যমন্ত্রী। শারীরিক সমস্যার জন্য ১১ বছর ধরে ঘরবন্দি ছিলেন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সিওপিডি-তে ভুগছিলেন। একাধিকবার হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন।

Buddhadeb Bhattacharjee Death: Former West Bengal Chief Minister passes away
Published by: Paramita Paul
  • Posted:August 8, 2024 10:27 am
  • Updated:August 8, 2024 11:53 am  

ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ৮০ বছর বয়সে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের নিজের ফ্ল্যাটেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত কয়েকদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এদিন সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট বেড়েছিল। অক্সিজেন দেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। 

শারীরিক সমস্যার জন্য ১১ বছর ধরে ঘরবন্দি ছিলেন বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সিওপিডি-তে ভুগছিলেন। একাধিকবার হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। মরশুম বদলের সময়ই বুদ্ধবাবুর শ্বাসকষ্ট বাড়ত। এবার তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু এবার কেন তাঁকে হাসপাতাসে ভর্তি করা হল না, তা নিয়ে দল বা পরিবারের তরফে কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি। 

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘বিতর্কিত’ বুদ্ধ থেকে ‘ভদ্রলোক’ মুখ্যমন্ত্রী, অমলিনই রয়ে গেল সেই সাদা ধুতি]

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পরিবারে ১৯৪৪-এ উত্তর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১৯৬১-তে কলকাতার শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। ১৯৬৪-তে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বাংলা ভাষায় স্নাতক হন। স্কুলজীবনেই এনসিসি-তে যোগদান করেন। কলেজ জীবনেও এনসিসি-র ক্যাডেট (নৌ শাখা) ছিলেন। কলেজ জীবনে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন। এরপর সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি ও সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরোর সদস্য হন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত প্রথম বাম সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৯-তে উপমুখ্যমন্ত্রীর হন। ২০০০-তে শারীরিক অসুস্থতার কারণে জ্যোতি বসু সরে দাঁড়ালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং ২০০৬ থেকে ২০১১, পর পর দুবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে ২০১১-তে প্রবল তৃণমূল হাওয়ায় নিজের দীর্ঘদিনের গড় যাদবপুরেই পরাজিত হন তিনি।

তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার চড়াই উৎরাই এসেছে। ছয়ের দশকে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন বামফ্রন্টের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্তের চোখে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। ছয়ের দশকে পার্টির সদস্যপদ পান। পরে রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলী, কেন্দ্রীয় কমিটি ক্রমে পলিটব্যুরোর সদস্য হন। সাতের দশকে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ। 

১৯৭৭ সালে কাশীপুর বিধানসভা থেকে নির্বাচনে লড়াই করেন। জিতে বিধায়ক হন। ১৯৮৭ সালে প্রথমবার যাদবপুর বিধানসভার প্রার্থী হন তিনি। টানা ২৪ বছর ওই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee)। পরিবর্তনের হাওয়ায় ২০১১ সালে তাঁর মন্ত্রিসভার আমলা-রাজনীতিবিদ মণীশ গুপ্তর কাছে পরাজিত হতে হয় বর্ষীয়ান রাজনীতিককে। এর আগে বাংলার রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজের কেন্দ্রে ভোটে লড়ে হেরে যাওয়ার রেকর্ড ছিল একমাত্র প্রফুল্লচন্দ্র সেনের। ২০১১ সালে সেই তালিকায় চলে আসেন বুদ্ধবাবুও। 

[আরও পড়ুন: শেষ আইকনকে হারিয়ে ‘অভিভাবক’হীন বামপন্থীরা]

২০১২ সাল থেকে রাজনীতির সঙ্গে  দূরত্ব বাড়াতে থাকেন বুদ্ধবাবু। ওই বছরই শারীরিক অসুস্থতার দরুন পার্টি কংগ্রেসে যেতে পারেননি তিনি। এরপর একে একে পলিটব্যুরো, কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য কমিটির সদস্যপদ ছেড়ে দেন। নিজেকে কার্যত ঘরবন্দি করে ফেলেছিলেন। তবে ২০১৬ সালে তাঁকে ফের সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা গিয়েছিল। কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। সেইসময় দলের অনুমতি ছাড়াই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একই মঞ্চে হাজির হন তিনি। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “বাম-কংগ্রেসের জোটের বিষয় বাংলার মানুষকে প্রত্যয়ী করে তোলা দরকার ছিল।”

তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিতর্কও কম ছিল না। নন্দীগ্রামে আন্দোলনকারী কৃষকদের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু ক্লিনচিট দেয় সিবিআই। বুদ্ধদেবের প্রয়াণে কার্যতই বাংলার রাজনীতির এক যুগাবসান হল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement