Advertisement
Advertisement
Bonedi Barir Durga Puja

দেশপ্রেম থেকে রামকৃষ্ণ, কলকাতার দুই বনেদি বাড়ির পুজোয় ছত্রে ছত্রে ইতিহাস

রইল উত্তর কলকাতার হাটখোলা দত্তবাড়ির ও লোকমাতা রানি রাসমণির বাড়ির পুজোর কাহিনী।

Bonedi Barir Durga Puja: Pujo history of two Bonedi Bari in North kolkata
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:October 6, 2024 2:23 pm
  • Updated:October 6, 2024 2:30 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বনেদি বাড়ির পুজো মানেই ইতিহাসের ছড়াছড়ি। বাড়িগুলির প্রতিটি কোনার ইটগুলি ফিসফিসিয়ে যেন সেই কথাই বলে। বড় বড় ইমারত, ঠাকুরদালানের পিলারগুলি ঐতিহ্যের সাক্ষী। আজ রইল উত্তর কলকাতার হাটখোলা দত্তবাড়ির ও লোকমাতা রানি রাসমণি বাড়ির পুজো কাহিনী।

নিমতলা স্ট্রিটে হাটখোলা দত্তবাড়ি বনেদি বাড়ি পুজো: সালটা ১৭৯৪। এই বাড়িতে পুজো শুরু করেন জগৎরাম দত্ত। তিনি ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পাটনা শাখার দেওয়ান। কিন্তু সাহেবিয়ানার প্রভাবে বাঙালিয়ানাকে ভোলেননি পরিবারের সদস্যরা। স্বদেশি যুগে তাঁরা দেবী দুর্গার সঙ্গে দেশমাতার তুলনা করতেন। পরিবারের এক পূর্বপুরুষ প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ গানটি গাওয়ার প্রচলন করেন। আজও বিসর্জন শেষে বাড়ির ছেলেরা সমবেতভাবে এই গানটি গাইতে গাইতে বাড়ি ফেরেন।

Advertisement

গোবিন্দশরণ দত্তর বংশধর জগৎরাম। গোবিন্দপুর গ্রামের স্থপতি গোবিন্দশরণ। সুতানুটি এবং কলকাতার সঙ্গে উচ্চারিত হয় এই নামটি। ১৭৮০ সালে গোবিন্দপুর ছেড়ে এসে হাটখোলায় বাড়ি করেন গোবিন্দশরণ। সেই থেকে এটি হাটখোলার দত্তবাড়ি নামে পরিচিত। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে আন্দুলের দত্তচৌধুরী পরিবারের রামচন্দ্র দত্ত হাটখোলা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে শুরু করেন দুর্গোৎসব। পরবর্তীকালে রামচন্দ্রের পৌত্র জগৎরাম দত্ত ৭৮ নিমতলা ঘাট স্ট্রিটে প্রাসাদোপম এক ভদ্রাসন নির্মাণ করে সেখানেও শুরু করেন দুর্গোৎসব।

এই বাড়ির ঠাকুরদালান দুদালান বিশিষ্ট পাঁচ খিলানের। সেটি সম্পূর্ণ মাটির তৈরি। কাশী, দ্বারকা-সহ ভারতের নানা পুণ্যধামের মাটি এনে সেই সময় তৈরি এই ঠাকুরদালান।এ বাড়ির প্রতিমায় আছে কিছু বৈচিত্র। সাবেক বাংলা রীতির প্রতিমাকে পরানো হয় ডাকের সাজ। সিংহ ঘোটক আকৃতির। মঠচৌরি শৈলীর চালিতে থাকে মাটির অলঙ্করণ। তাতে আঁকা থাকে কৃষ্ণলীলা ও চণ্ডীর কাহিনি। আচার-অনুষ্ঠানেও রয়েছে ব্যতিক্রম। পুজোয় নৈবেদ্য সাজানো থেকে পুজোর সব কাজ করেন ব্রাহ্মণরা। পুজোয় অন্নভোগ না হলেও থাকে নানা ধরনের মিঠাই ও ভাজা ভোগ। পুজোর ভোগে আলু ব্যবহার করা হয় না। সাবেক প্রথা অনুসারে পুজোটি উৎসর্গ হত পরিবারের কুলগুরুর নামে। নবমীতে ক্ষীরের পুতুল বলি দেওয়া হত। তবে বাড়ির কোনও সদস্যেরই বলি দেখার অনুমতি নেই। কালের নিয়মে অতীতের চাকচিক্য কিংবা জৌলুস আজ নেই। তবু এতটুকু ম্লান হয়নি এ পুজোর আভিজাত্য আর ঐতিহ্যের রেশ।

রানি রাসমণির বাড়ির পুজো: ১৭৯৪ সালে এই পুজো শুরু হয়। রানিমার শ্বশুর জমিদার এবং ব্যবসায়ী কৈবর্ত সম্প্রদায়ভুক্ত প্রীতিরাম মাড় (দাস) এই পুজো শুরু করেন। জানবাজারের এই বাড়িটি ছাড়াও কলকাতার বেলেঘাটা, ভবানীপুর, ট্যাংরা অঞ্চলেও তাঁর অনেক বাড়ি ছিল। পরে পুজোটি আরও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়। প্রীতিরামের মৃত্যুর পর জমিদারি ও পুজোর সব দায়িত্ব নেন তাঁর পুত্র রাজচন্দ্র দাস। স্বামীর মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সাল থেকে এই পুজো করেন রানি রাসমণি। সেই থেকে এই পুজো রানি রাসমণির বাড়ির পুজো নামেই প্রতিষ্ঠা পায়। রানির কোনও পুত্রসন্তান না থাকায় জামাইরাই এই বাড়িতে ছেলের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

Bonedi Barir Durga Puja: Pujo history of two Bonedi Bari in North kolkata
রানি রাসমণি বাড়ির পুজো।

এই বাড়িতে দেবীর মুখের রং তপ্ত কাঞ্চনবর্ণ। শোলার সাজে সজ্জিত প্রতিমা। দেবীর চালচিত্রেও থাকে বৈচিত্র। আঁকা হয় চণ্ডী ও পুরাণের নানা কাহিনি। এ ছাড়াও থাকে শুম্ভ-নিশুম্ভ বধ, শ্রীকৃষ্ণের গোপিনীদের বস্ত্রহরণ, গোপিনীদের সঙ্গে জলকেলির মতো নানান পৌরাণিক কাহিনি। এ বাড়িতে মা দুর্গার পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, তিনদিনই কুমারীপুজো হয়। মাকে এখানে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। লুচি, মিষ্টি, বোঁদে ভোগ হয়। আজও পুরনো রীতি মেনে এ বাড়ির ঠাকুরদালানে বাড়ির মহিলারা প্রতিমার বাঁদিকে এবং পুরুষরা ডানদিকে দাঁড়ান। আগে পুজোয় সাতটি পাঁঠাবলি হলেও ১৯৯২ সাল থেকে পশুবলি বন্ধ হয়। চালকুমড়ো, আখবলি হয়। আজও সেই রীতিমেনেই পুজো হয়ে আসছে এই বাড়িতে।

Bonedi Barir Durga Puja: Pujo history of two Bonedi Bari in North kolkata

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement