সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাত্রাছাড়া গরমে দিশাহারা গোটা দেশ। ইতিমধ্যে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ঘোরাফেরা করছে তাপমাত্রা। তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। তার মধ্যেই হতে চলেছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ‘উৎসব’ লোকসভা নির্বাচন। আগুনে পরিস্থিতি আঁচ করে স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)। তথাপি প্রশ্ন ওঠে, এই অসহ্য গরমেই কেন ভোট হয়?
সেই উত্তর দেওয়ার আগে জানিয়ে দেওয়া যাক যে কাঠফাটা গরমে কষ্ট পান সকলেই। গরমে কাহিল হয়ে, ঘামে ভিজে নেতা-কর্মীদের ভোটের প্রচারে বেরোতে হয়। গ্রীষ্মের দহন সহ্য করে ভোটকর্মীদের নির্বাচনের আয়োজন করতে হয়। চরমপন্থী আবহাওয়ায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়াও কম কষ্টকর নয়। তাছাড়া গনগনে রোদে পুড়েই সাংবাদিকদের ভোটের খবর করতে পথে নামতে হয়। অর্থাৎ কারও জন্যই বিষয়টা স্বস্তিদায়ক নয়। তারপরেও কেন এপ্রিল-মে-জুনে নির্বাচন?
প্রথম কারণ, সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে সরকারের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগে হয় লোকসভা নির্বাচন। দ্বিতীয় কারণ, ভোটগ্রহণের জন্য এই সময় বেশি মেলে। যেহেতু গ্রীষ্মকালে দিন বড় এবং রাত ছোট হয়। তৃতীয়ত, ভারতের মতো দেশের অধিকাংশ এলাকায় শীতকালে নির্বাচন স্বস্তিদায়ক হলেও জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলের মতো রাজ্যে কনকনে ঠান্ডার কারণে তা কার্যত অসম্ভব। তবে কিনা আগের সরকার যদি ৫ বছরের মেয়াদ পূরণ করার আগেই ভেঙে যায়, তবে নির্বাচন এগিয়ে আসতে পারে।
১৯৫২ সালে দেশে প্রথম লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল জানুয়ারি মাসে চরম ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে। এখনকার মতো ৫ বা ৭ দফায় নয়, ৬৮ দফায় হয়েছিল ভোটগ্রহণ। ১৯৫১-৫২ থেকে শুরু করে ১৯৮৯ পর্যন্ত দেশের প্রথম ন’টি সংসদীয় নির্বাচনই সম্পন্ন হয়েছে অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মার্চের মাঝামাঝি– এই সময়কালের মধ্যে, অর্থাৎ শীতকালে বা তার আশেপাশে। প্রথমবার এর অন্যথা হয় ১৯৯১ সালে। যেহুতু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর আচমকা পদত্যাগ করেন। নবম লোকসভা ভেঙে দিতে হয়। সেই প্রথমবার ভারতে সাধারণ নির্বাচন হয় মে-জুন মাসের ভয়ঙ্কর গরমে। পরের নির্বাচন ৫ বছরের ব্যবধান রেখে ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে হয়। ১৯৯৯ সালে ভোট হয়েছিল সেপ্টেম্বর মাসে।
এর পর ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, অটল বিহারী বাজপেয়ীর বিজেপি সরকার আগেই সংসদ ভেঙে দেয় এবং ওই বছর এপ্রিল মাসে নির্বাচন হয়েছিল। নেপথ্যে বিজেপির তৎকালীন শরিক চন্দ্রবাবুর নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি। মনে করা হয়, চন্দ্রবাবুর আবদারেই সেবার আগেই সংসদ ভেঙে দেন বাজপেয়ী। আসলে চন্দ্রবাবু চেয়েছিলেন তাঁর রাজ্যের বিধানসভা ভোট এবং লোকসভা ভোট একসঙ্গে হোক। বিজেপির ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ ক্যাম্পেনে ভর করে বাজপেয়ীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী তরী পার করতে চেয়েছিলেন চন্দ্রবাবু। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। সেবার বাজপেয়ী ও চন্দ্রবাবু দুজনেই হেরে যান। অন্যদিকে সেই থেকে ভরা গরমে নির্বাচন অব্যাহত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.