মা-বাব ও পরিবারের সদস্যদের মাঝে রাজু।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের মাটিতে মধ্যযুগীয় ক্রীতদাস প্রথা! শুনতে আশ্চর্য লাগলেও বাস্তবে এমনই ঘটনার ছবি ধরা পড়ল রাজস্থানে। ৩১ বছর ধরে ‘শিকলবন্দী’ জীবন কাটিয়ে অবশেষে পরিবারের কাছে ফিরলেন উত্তরপ্রদেশের এক যুবক। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ৩১ বছর আগে অপহৃত হওয়া ওই যুবকের নাম ভীম সিং ওরফে রাজু। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তাঁর যখন ৯ বছর বয়স ছিল, সেই সময় স্কুল থেকে ফেরার পথে তাঁকে অপহরণ করা হয়। আসলে দিদির সঙ্গে ঝগড়া করে একা একা বাড়ি ফিরছিলেন রাজু। পথে রাস্তায় এক পাথরের উপর বসে ছিলেন। সেই সময় তাঁর সামনে দাঁড়ায় একটি ট্রাক। সেখান থেকে অপহরণ করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজস্থানের জয়সলমেঢ়ে। এত বছর ধরে সেখানেই বিনা পয়সার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। বিনিময়ে তাঁকে দুবেলা খেতে দেওয়া হত ডাল-রুটি। রাখা হত লোকচক্ষুর আড়ালে পশুর মতো।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল পরিবারের তরফে। তবে পুলিশ ওই বালকের কোনও খোঁজ পায়নি। এদিকে জয়সলমেঢ়ে এত বছর ধরে ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করার সময় সম্প্রতি এক ভেড়া ব্যবসায়ীর দৌলতে পালানোর সুযোগ পেয়ে যান ওই যুবক। পুলিশকে রাজু জানিয়েছেন, ওই ব্যবসায়ী তাঁর মালিকের একটি ভেড়া কিনতে এসেছিলেন। তাঁকেই সবটা জানান রাজু। সহৃদয় ওই ব্যবসায়ী এর পর তাঁকে ভেড়ার সঙ্গে ট্রাকে লোকাতে সাহায্য করেন এবং দিল্লি নিয়ে আসেন। পরে সেখান থেকে তাঁকে গাজিয়াবাদের ট্রেনে তুলে দেন। কারণ, এত কিছুর মাঝে রাজুর শুধু মনে ছিল তাঁর বাড়ি গাজিয়াবাদে। পরিবারের সদস্যদের নামও ভুলে গিয়েছিলেন। এদিকে ৩১ বছরে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু।
এই পরিস্থিতিতে নিজের পরিবার খুঁজে যথেষ্ট কঠিন ছিল তাঁর কাছে। গাজিয়াবাদে এসে স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিয়ে খোদা থানায় পৌঁছন রাজু। সেখানে গোটা ঘটনার কথা জানান তিনি। রাজুর বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের পুরনো ফাইল বের করেন পুলিশকর্মীরা। সেখানেই পাওয়া যায় পরিবারের তরফে করা নিখোঁজ ডায়েরি। সেই সূত্র ধরেই তিন দশক পর গাজিয়াবাদে নিজের পরিবারের কাছে পৌঁছন রাজু। এত বছর পর বাড়ির ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশি রাজুর বাবা-মা। যদিও এক বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ক্রীতদাস প্রথার মতো এমন ভয়াবহ ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় বিস্মিত খোদ পুলিশকর্তারাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.