সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে নারকীয় সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুতে প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ভারত। মোদি সরকারের এই হুঁশিয়ারিতে ঘুম ছুটেছে পাকিস্তানের। আতঙ্কিত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শনিবার এই জঙ্গিহানায় পাক যোগের তত্ত্ব উড়িয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেছেন, ‘তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করবে ইসলামাবাদ।’ তবে প্রবাদ রয়েছে, ‘কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয় না।’ সেই প্রবাদ অনুযায়ী পাকিস্তানের ইতিহাস বলছে, প্রতিবেশী দেশের এই নাটক নতুন কিছু নয়।
অতীতের রিপোর্ট বলছে, এর আগে ভারতের মাটিতে চারটি জঙ্গি হামলায় সরাসরি পাকিস্তান যোগের প্রমাণ পেয়েছিল ভারত। অকাট্য সেই সব তথ্য প্রমাণ পাকিস্তান সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিল ভারত সরকার। সরাসরি প্রমাণ, ডিএনএ রিপোর্ট, সাক্ষীদের বয়ান সবকিছু তুলে দেওয়া হয় পাকিস্তানের হাতে। তবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রত্যেকবারই নানা টালবাহানার পর শেষ পর্যন্ত তদন্ত করতে অস্বীকার করেছে ভারতের ‘বিষাক্ত’ প্রতিবেশী। ফলে তদন্তে সহযোগিতার পাকিস্তানের এই বার্তা আসলে ‘কুমিরের ছানা’ দেখানোর মতো। দেখে নেওয়া যাক এর আগে কতবার এই নাটক চালিয়েছে পাকিস্তান।
মুম্বই হামলা (২০০৮)
লস্কর ই তইবার প্রধান হাফিজ সইদের ষড়যন্ত্রে ২০০৮ সালে ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে ভয়াবহ হামলা চালায় জঙ্গিরা যে হামলায় মৃত্যু হয় ১৬৪ জনের। আহত হন আরও ৩০৮ জন। তদন্তে জানা যায় এই সন্ত্রাসে আইএসআই-এর মদত ছিল। তদন্তের সমস্ত তথ্য প্রমাণ পাকিস্তানকে দিয়েছিল ভারত। তদন্তের খাতিরে পাকিস্তানের বিচার বিভাগীয় দল ভারত সফরও করেন। স্পষ্ট প্রমাণ সত্ত্বেও পাকিস্তান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এখনও পাকিস্তানে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাফিজ সইদের মতো জঙ্গিরা।
পাঠানকোট এয়ারবেসে হামলা (২০১৬)
২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি পাঞ্জাবের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা চালিয়েছিল পাক জঙ্গিরা। এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ৮ জন। ঘটনার পর নিরপেক্ষ তদন্তের বার্তা দেয় পাকিস্তান। সেইমতো পাকিস্তানের যৌথ তদন্তকারী দল বায়ুসেনা ঘাঁটিতে আসে ভারতের তদন্তকারীদের কাছ থেকে সমস্ত তথ্য প্রমাণ নিয়ে যায়। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এনআইএ পাকিস্তানে গিয়ে তদন্ত করবে। তবে সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ইসলামাবাদ। এর পর তদন্তে আর কোনও রকম সহযোগিতা করেনি তারা।
উরি হামলা (২০১৬)
ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের উরিতে হামলা চালিয়েছিল পাক জঙ্গিরা। যে হামলায় মৃত্যু হয় ১৯ জওয়ানের। সেই ঘটনার তদন্তের জন্য দেশের বিচার বিভাগের তরফে ‘এলআর’ পাঠানো হয় পাক সরকারকে। সঙ্গে ডিএনও স্যাম্পেল ও এই হামলায় যে পাক জঙ্গিরা যুক্ত সেই সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য প্রমাণ পাঠানো হয়। তবে পাকিস্তান এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
পুলওয়ামা হামলা (২০১৯)
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিআরপিএফের কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনার তদন্তে এনআইএ-এর তরফে চার পাকিস্তানি জঙ্গির যুক্ত থাকা ও তিন পাক জঙ্গি, যারা এই হামলা চালাতে ভারতে ঢুকেছিল সেই সংক্রান্ত বিশদ তথ্য পাকিস্তানকে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তান এই ঘটনার তদন্তে কোনও সহযোগিতা করেনি।
এভাবেই একের পর এক জঙ্গি হামলা ও তাতে পাক যোগের স্পষ্ট প্রমাণ মিললেও পাকিস্তান ‘জেগে ঘুমিয়ে’ দিন কাটিয়েছে। এবার সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি বাতিল ও পালটা হামলার ইঙ্গিত দিতেই ঘুম ছুটেছে পাকিস্তানের। চেনা ছকে ফের নিরপেক্ষ তদন্তের প্রস্তাব দিলেন শাহবাজ। যদিও অতীতে বহুবার পাকিস্তানের এই নাটক প্রত্যক্ষ করেছে ভারত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.