সোমনাথ রায়, শ্রীনগর: বৈসারন নাশকতা নিয়ে যেন কিছুতেই কিছু করতে পারছে না কেন্দ্র সরকার। যা করতে চাইছে, সেখানেই পুড়ছে মুখ। কিছুটা দেরিতে হলেও গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতা মানতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র। এবার বৈসরনের ঘটনার দায় এড়াতে ‘মিথ্যাচার’ করতেও ছাড়ল না কেন্দ্র! বলা হল, ২০ এপ্রিল থেকেই খুলে দেওয়া হবে উপত্যকা, এমন তথ্য না থাকায় ওখানে দেওয়া হয়নি নিরাপত্তারক্ষী। অথচ স্থানীয়, পর্যটক এমনকী, জম্মু-কাশ্মীর টুরিজমের ওয়েবসাইট কোথাও এমন উল্লেখ নেই বছরের কোনও সময় বন্ধ থাকে উপত্যকা। এর থেকেও বড় কথা হল, এত পর্যটক পহেলগাঁও এলেন, বৈসারন পৌঁছে গেলেন, তবু এই তথ্য কীভাবে পৌঁছল না
‘শাহী’ পুলিশ ও গোয়েন্দাবিভাগের কাছে!
গত বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সভাপতিত্বে হওয়া সর্বদল বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছিলেন, পুলিশের অনুমতি ছাড়াই ২০ এপ্রিল খুলে দেওয়া হয়েছিল বৈসারন উপত্যকা। অথচ তা খোলার কথা জুন মাসে। প্রথম দু’দিনেই এক হাজারের বেশি পর্যটক সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলেন বলেও জানানো হয়। যেহেতু কোনও তথ্য ছাড়াই খুলে দেওয়া হয়েছিল উপত্যকা, তাই সেখানে সেনা, আধাসেনা বা পুলিশ কোনও রক্ষীই মোতায়েন করা যায়নি। এই তথ্য সামনে আসতেই ফের প্রশ্নের মুখে গোয়েন্দা বিভাগ। শ্রীনগর থেকে পহেলগাঁও আসার পথে সেনা, পুলিশ আউটপোস্ট পার করে এত সংখ্যক পর্যটক এলেন। তাঁরা বৈসারন চলে গেলেন। তবু কেন এজেন্সির কাছে থাকবে না এই খবর। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে গিজগিজ করছে সদ্য বৈসারন ঘুরে যাওয়া পর্যটকদের ছবি। তাঁদের মন্তব্য। দুনিয়া যা দেখতে পেল, শুধু খবর পেল না কেন্দ্র ও তার বিভিন্ন এজেন্সি।
প্রাথমিক ব্যর্থতা প্রমাণ হয়ে যাওয়ার পর নড়ে বসেছে কেন্দ্র। জম্মু-কাশ্মীরের নানা প্রান্তে চলছে লাগাতার অপারেশন। তেমনই কিছু অপারেশনে শনিবার কুলগাঁও, সোপিয়ান ও পুলওয়ামায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় চার সন্ত্রাসবাদীর বাড়ি। এই তিনজনও বৈসারন নাশকতায় পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসবাদীদের মদত করেছিল বলে খবর পায় সেনা। নামধাম-সহ আরও ১৪ সন্ত্রাসবাদীর তালিকা ঘোষণা করেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। দিনভর ৬৩টি জায়গায় সার্চ অপারেশন চালিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। যারা বারবার কাশ্মীরকে উত্তপ্ত করেছে। হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করেছে ভূস্বর্গকে। এবার আর রেয়াত নয়, এই জেহাদিদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুলগাম থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্যকারী দুই সন্দেহভাজন। উদ্ধার হয়েছে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র।
উপরাজ্যপালের কাছে বৈসারন কাণ্ডের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। যেখানে বলা হয়েছে অকাশ্মীরি বাছাই করে নেওয়ার পর হত্যার আগে বাকি পুরুষদের বিভিন্ন আইডেন্টিটি কার্ড খতিয়ে দেখার পর পোশাক খুলে খতনা পরীক্ষাও করা হয়েছিল। নতুন করে যাতে আর কোনও দুর্ঘটনা না হয়, তাই আপাতত জম্মু-কাশ্মীরে যে কোনও ট্রেকিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উপত্যকায় আরও বড় সন্ত্রাস চালাতে পারে আইএসআই, গোয়েন্দাবিভাগে জারি করেছে এই সতর্কবার্তা। এত কিছুর পরও, রাত তখন সাড়ে দশটা, ফের বিস্ফোরণের শব্দ। কিছু মূহূর্ত পরই চরমে গোলাগুলির শব্দ। জানান দিল শান্ত নয় ভূস্বর্গ…।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.