সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ফলাফল মনমতো হয়নি। উনিশের তুলনায় আসন সংখ্যা কমেছে এবার। পাশাপাশি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গঠনে ব্যর্থ বিজেপি। শরিকদের হাজারও দাবিদাওয়া মেনে তৈরি করতে হবে মোদি ৩.০-র মন্ত্রিসভা। একাধিক মন্ত্রকের দাবি তুলে বিজেপিকে চাপে রাখছে NDA-র অন্যান্য শরিকরা। তাঁদের শর্ত মেনে বিলিবণ্টনে কি এবার বাংলার ভাগ্যে ছিঁড়বে পূর্ণ মন্ত্রিত্বের শিকে? এই প্রশ্নেই এখন সরগরম বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহল। দিল্লিতেও এনিয়ে জোর আলোচনা। তবে এখনই খোলসা করে কেউ কিছু বলছেন না।
চব্বিশের লোকসভা ভোটে (2024 Lok Sabha Election)বিজেপি বাংলায় জিতেছে ১২টি আসন। উনিশে যা ছিল ১৮। সেসময় দু-চারজন সাংসদ ঘুরেফিরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। আসানসোল থেকে জয়ী বাবুল সুপ্রিয়, আলিপুরদুয়ারের জন বার্লা, বাঁকুড়ার সুভাষ সরকারের পর কোচবিহারের নিশীথ প্রামাণিক ও বনগাঁর শান্তনু ঠাকুর বিভিন্ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে পূর্ণমন্ত্রিত্ব জোটেনি কারও কপালে। এবার তো জয়ের হার আরও কম। তবে কি মোদির তৃতীয় মন্ত্রিসভায় (Modi Cabinet) আদৌ কারও জায়গা হবে? জয়ী বিজেপি প্রার্থীরাও এ বিষয়ে ঘোর সংশয়ে। দিল্লির রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, পূর্ণমন্ত্রী নয়, বাংলার (West Bengal) ভাবী সাংসদদের দু, একজন পেতে পারেন। সর্বোচ্চ তিনজনের ঠাঁই হতে পারে মোদির ক্যাবিনেটে। সেই তালিকায় থাকছে তমলুকের জয়ী প্রার্থী, প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, আলিপুরদুয়ারের মনোজ টিগ্গা, রানাঘাটের জগন্নাথ সরকার, বনগাঁর শান্তনু ঠাকুর। রয়েছে ‘বিক্ষুব্ধ’ সৌমিত্র খাঁ-র নামও। এঁদের মধ্যে শান্তনু ঠাকুর আগেরবার জাহাজ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
ভুল প্রার্থী বাছাই, ভোটের সাম্প্রদায়িকীকরণ, আতঙ্ক এবং নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভে সব স্তরের কর্মীদের না নামা, বিদায়ী সাংসদদের নিজেদের এলাকায় পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া। সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে রাজ্যে ভরাডুবির পিছনে প্রাথমিক ময়নাতদন্তে এই ধরনের নানা কারণ উঠে আসছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের কাছে। শুক্রবার ছিল এনডিএ-র নেতা বাছাইয়ের বৈঠক। তাই দলের নির্দেশে প্রত্যেক সাংসদকে উপস্থিত হয়েছিল দিল্লিতে (Delhi)। সেখানেই বঙ্গ বিজেপির এক সাংসদ ও রাজ্যস্তরের অন্যতম শীর্ষনেতার প্রাথমিক বিশ্লেষণে উঠে এল এই ধরনের নানা তত্ত্ব। তাঁর মতে, যদিও প্রার্থী নির্বাচন করেছিল সর্বভারতীয় নেতৃত্ব, তবু প্রার্থী বাছাইয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আরও ভেবেচিন্তে নেওয়া যেত। একইসঙ্গে দাবি করা হচ্ছে, অযোধ্যা, রাজস্থানের মতো হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতেও যে হিন্দুরা সর্বতোভাবে সমর্থন করেনি, সেই একই ছবি দেখা গিয়েছে রাজ্যেও।
উলটোদিকে, সংখ্যালঘুরা দুহাত ভরে আশীর্বাদ করেছেন তৃণমূলকে। এছাড়াও রাজ্য বিজেপির দাবি, নিচু তলার কর্মীদের একটা বড় অংশ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নীরব ছিলেন। কারও ক্ষেত্রে কাজ করেছে তৃণমূলের আতঙ্ক, কেউ বা আবার আদি-নব্য ও তৎকাল নেতৃত্বের ক্ষোভে কাজ করেননি। আবার বেশ কয়েকজন সাংসদ নিজেদের এলাকায় পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার ফলেই শূন্যস্থান পূরণ করে নিয়েছে তৃণমূল। এই বক্তব্যও উঠে আসছে। পাশাপাশি নিচুতলা থেকে আসা সাংগঠনিক রিপোর্টে বাস্তব পরিস্থিতির মিল না থাকার বিষয়টিও। নিজেদের ব্যর্থতার পাশাপাশি আরও একটি যে কারণকে পরাজয়ের কারণ হিসাবে তুলে ধরেছে বিজেপি, তা হল ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’। যদিও এখনও এই প্রকল্পকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বঙ্গ বিজেপি। তাদের বক্তব্য, রাজ্যের অর্থনীতির যা হাল, তাতে এই হাজার টাকাই অনেক সংসার চালানোর জন্য বিশাল ব্যাপার। তার উপর আবার একসঙ্গে তিন মাসের টাকা পেয়ে যাওয়ায় এবং তৃণমূল ক্ষমতায় না এলে এই রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে, সেই আশঙ্কাতেই তৃণমূলের পালে হাওয়া লেগেছে বলে মনে করছে বঙ্গ নেতৃত্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.