সোমনাথ রায়: ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক গত আড়াই দশকে খুব খারাপ। পহেলাগাঁও কাণ্ডে নতুন করে তা তলানিতে পৌঁছেছে। নিরীহ পর্যটকদের উপর হামলার পরে অটারী সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। পালটা এ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। এর পরও বিকল্প উপায়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য পৌঁছাচ্ছে পাকিস্তানে। কীভাবে?
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে প্রতি বছর অন্য দেশের বন্দর হয়ে পাকিস্তানে বিপুল পরিমাণ পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে। বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও দুবাই, সিঙ্গাপুর, কলম্বোর বন্দর মারফত পাকিস্তানে পণ্য রপ্তানি করে কিছু ভারতীয় সংস্থা। প্রতি বছর প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার (১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ভারতীয় পণ্য অন্য দেশের বন্দর ঘুরে পাকিস্তানে রপ্তানি হয়ে থাকে।
জিটিআরআই জানাচ্ছে, দুবাই, সিঙ্গাপুর, কলম্বোর মতো বন্দরে ভারতীয় পণ্য পৌঁছানোর পর সঙ্গে সঙ্গে বন্দর থেকে খালাস করা হয় না। বরং বন্দর এলাকারই গুদামে তোলা হয়। সেখানে হয় ধূসর কর্মকাণ্ড–গুদামে পণ্যের লেবেল বদলে ফেলা হয়। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ মুছে ‘মেড ইন আরব আমিরশাহি’ লেবেল সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই সেগুলিকে পাকিস্তানি পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। এভাবে তৃতীয় দেশ হয়ে রপ্তানির কারণে পণ্যের দাম অনেকটা বেড়ে যায়। ৮৫ লক্ষ টাকার পণ্য ‘মেড ইন আরব আমিরশাহি’ হয়ে পাকিস্তানি পৌঁছালে তার দাম হয় ১ কোটি টাকা। যেহেতু শুধু লেভেল লাগানো নয়, নতুন করে পণ্যের কাগজপত্রও তৈরি করতে হয়।
ভারত-পাকিস্তানের খারাপ সম্পর্কের পরেও বাণিজ্য যে একেবারে বন্ধ হয়নি, সেই তথ্য মিলেছে কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত পাকিস্তানে রপ্তানি করেছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার পণ্য। আমদানি করেছে তিন কোটি টাকার পণ্য। ভারত থেকে পাকিস্তানে সব থেকে বেশি যায় ওষুধ এবং রাসায়নিক দ্রব্য। মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশ। এছাড়াও চা, কফি, চিনি, সব্জি, মশলা, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য, সার, দানাশস্য, প্লাস্টিক, রবার, গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানি করেছে ভারত। অন্যদিকে আমদানি করেছে ফল, বাদাম, তৈলবীজ, ওষধি গাছ, জৈব রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর হামলার পরেই বুধবার বৈঠকে বসেছিল ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে এই বৈঠক চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে। তারপরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিদেশসচিব বিক্রম মিসরি জানান, সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করছে ভারত। অবিলম্বে বন্ধ করা হচ্ছে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত। পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে এবং বর্তমানে যেসব পাকিস্তানিরা ভারতে রয়েছেন তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হচ্ছে। এছাড়াও ভারত এবং পাকিস্তান- দুই দেশের হাই কমিশন থেকেই সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে সামরিক পরামর্শদাতাদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.