সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১০ বছরের লড়াইয়ে ক্লান্ত। আর শক্তি নেই। মেয়ের জন্য সুবিচার প্রার্থী এক বাবার হতাশ স্বীকারোক্তি। বলছেন, “দোষীকে সাজা দিলেও তো আমার মেয়ে আর ফিরবে না। কীই বা হবে এসব করে!”
উক্ত ভদ্রলোকের নাম এস জনাথান প্রসাদ। ১১ বছর আগে তাঁর মেয়ে এস্থের আনুহিয়াকে মুম্বইয়ে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। তারপর বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন লড়াই করে গিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুবিচার জুটল কই! মঙ্গলবারই মূল অভিযুক্ত চন্দ্রভান সনপকে মুক্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
কী হয়েছিল ১০ বছর আগে? ২০১৪ সালে বড়দিনের ছুটি কাটিয়ে খুব ভোরে বাড়ি থেকে মুম্বইয়ের কুরলায় ফিরেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ার মেয়ে এস্থের। অভিযোগ, নিজেকে ট্যাক্সিচালক পরিচয় দিয়ে এস্থেরকে বাইরে নিয়ে যায় চন্দ্রভান। সেখান থেকে একটি বাইকে চাপিয়ে ইস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়ের কাছে কানজুরমার্গে বাইক থামিয়ে এস্থেরকে টানতে টানতে একটি ঝোঁপের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে সনপ। এস্থের বাধা দিতে গেলে, ভারী পাথর দিয়ে তাঁর মাথার উপর্যুপরি আঘাত করে তাঁকে খুন করা হয়। এস্থেরের দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে সনপ।
২০১৫ সালে বম্বে হাই কোর্ট তথ্য-প্রযুক্তি কর্মীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে চন্দ্রভান সনপকে দোষী সাব্যস্ত করে বম্বে হাই কোর্ট। কিন্তু সেই রায়ে অসন্তুষ্ট সনপ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। তার দাবি ছিল, সে নির্দোষ। অহেতুক ফাঁসানো হচ্ছে। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার পর শীর্ষ আদালত সনপকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, যে ঘটনাক্রম সাজিয়ে সনপকে ফাঁসিতে ঝোলানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেই ঘটনাক্রমে বহু ফাঁকফোঁকর রয়েছে। ফাঁসি দেওয়ার মতো উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ নেই। যার অর্থ এস্থেরের ধর্ষণ ও খুন কাণ্ডে কেউই সাজা পেলেন না। স্বভাবতই হতাশ নির্যাতিতার বাবা।
তিনি বলছেন, “আমরা আর কীই বা করতে পারি। আমরা তো জানতামই না কী ঘটছে। এটাও জানতাম না যে ও সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। আমরা কী করব বলুন। ঈশ্বরই বিচার করুন। তাছাড়া যা-ই হোক মেয়েকে তো আর ফেরত পাব না।” বম্বে হাই কোর্ট যখন ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল, তখনও কিছুটা শান্তি পেয়েছিলেন জনাথান প্রসাদ। ভেবেছিলেন কিছুটা তো সুবিচার হল। তিনি বলছেন, “আমার বয়স ৭০ পেরিয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত। আমার স্ত্রী ডায়াবেটিক, আর লড়াই করতে পারছি না আমরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.