নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: ছাব্বিশের আগে তসলিমা প্রীতি বিজেপির! দেশের সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র কলকাতা থেকে একদা ‘বিতাড়িত’ সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনকে এ শহরে ফেরাতে চায় গেরুয়া শিবির। আর তার জন্য রাজ্যসভায় তসলিমার হয়ে সুর চড়ালেন বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। সোমবার এই সংক্রান্ত বক্তব্যে বাংলা ভাষায় তসলিমার অবদানের কথা মনে করিয়ে শমীকের দাবি,”তসলিমা নাসরিনের কাছে কলকাতা প্রাণের শহর। তিনি কলকাতায় ফিরে আসতে চান, বাংলায় কথা বলতে চান, বাংলায় সাহিত্য সৃষ্টি করতে চান। পশ্চিমবঙ্গ মানে কাজী নজরুলের শ্যামা-মায়ের বর্ণনা, নারী আন্দোলনের পটভূমি। আমি বলতে চাই, ছদ্ম প্রগতিশীলতার আড়ালে মুসলিম মৌলবাদের কাছে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের দিন শেষ হোক। তসলিমার প্রত্যাবর্তন হোক। বাংলার নারী আন্দোলনের নতুন সূর্যোদয় হোক।”
নয়ের দশকে ইসলামিক মৌলবাদীদের নিশানা করে ‘দ্বিখণ্ডিত’ উপন্যাস লেখার জন্য ইসলামের ফতোয়া জারি হয় বাংলাদেশের সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে। স্বদেশ থেকে তাঁকে বিতাড়িত হতে হয়। সেসময়ে সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম পীঠস্থান কলকাতায় তিনি এসেছিলেন আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু তৎকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার তাঁকে সেই আশ্রয় দেয়নি। এখান থেকেও বিতাড়িত হতে হয় তসলিমাকে। সেই বিষয়টি তুলে ধরে সোমবার বামপন্থী-প্রগতিশীলদের আক্রমণ করে রাজ্যসভায় শমীক ভট্টাচার্য স্পষ্ট বললেন, ”প্রগতিশীলতার ছদ্মবেশে ইসলাম মৌলবাদের কাছে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ করেছিল তৎকালীন বাম সরকার। আজ তো আমার বামপন্থী বন্ধুদের কাউকে দেখছি না।” রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ দাবি তোলেন, ”তসলিমা নাসরিনকে উপযুক্ত নিরাপত্তা দিয়ে কলকাতায় ফেরানো হোক।”
আপাতত তসলিমা দিল্লির আশ্রয়ে রয়েছেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তাঁর রেসিডেন্স পারমিট শেষ হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে তা বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক। আবেদন মঞ্জুর করে অমিত শাহর মন্ত্রক। তবে কলকাতায় আর আসেননি তসলিমা। এখন তাঁকেই উপযুক্ত নিরাপত্তা সহকারে কলকাতায় ফেরানোর দাবিতে বিজেপিকে যেভাবে সরব হতে শোনা গেল, তাতে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের প্রশ্ন, এ কি নতুন কোনও রাজনৈতিক চাল? এরাজ্যে মমতা-বিরোধী লড়াইয়ে মুসলিম মৌলবাদের কড়া সমালোচক তসলিমা নাসরিনকে হাতিয়ার করতে চলেছে গেরুয়া শিবির?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.