ছবি: প্রতীকী
অর্ক দে, বর্ধমান: ভিনরাজ্যে বাংলার তরুণীর নলি কাটা দেহ উদ্ধার। রক্তাক্ত অবস্থায় আবাসনের সিঁড়িতে পড়েছিলেন তিনি। স্বামীর অভিযোগ, তরুণীর প্রাক্তন সহকর্মী তাঁকে লাগাতার উত্যক্ত করত। বুধবার অর্থাৎ ঘটনার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত যুবককে আবাসনেও ঢুকতে দেখা গিয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, অভিযুক্ত যুবকই বঙ্গতনয়াকে খুন করেছে। ওই রাতেই আবার আবাসন থেকে কিছুটা দূরে অভিযুক্ত যুবকেরও ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। যা রহস্য আরও বাড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ‘ব্যর্থ’ প্রেমিকের প্রতিহিংসার বলি হলেন তিনি?
মৃতার নাম মহুয়া মণ্ডল। বয়স ২৬ বছর। বাড়ি বর্ধমানের বড়শুল গ্রামের কুমিরখোলায়। বেঙ্গালুরু শহরের আইটিপিএল পার্ক এলাকার আবাসন থেকে তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। জানা গিয়েছে, বছর সাতেক আগে বড়শুলের গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা হরিপদ মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে হয় মহুয়ার। তাঁদের একটি সাত বছরের ছেলে রয়েছে। বিয়ের পরই কাজের সূত্রে হরিপদবাবু বেঙ্গালুরু চলে গিয়েছিলেন। সেখানকার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। তিন বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছিলেন মহুয়াও। একটি নার্সিং কলেজে কাজে ঢোকেন। সেখানে তিনি দুবছরের বেশি সময় কাজ করেছেন।
অভিযোগ, ওই কলেজের মিঠুন মণ্ডল নামে এক কর্মী মহুয়াকে কুপ্রস্তাব দেয়। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েওছিলেন তিনি। সেইসময় মহুয়াকেই কাজ থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। তারপর তিনি একটি স্কুলে অশিক্ষক পদে চাকরিতে ঢোকেন। সেখানেই আট মাস ধরে চাকরি করছিলেন। মহুয়ার স্বামী হরিপদবাবু জানান,”কলেজের ওই কর্মীর বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছিল। মিঠুন নামে ওই ব্যক্তি মহুয়াকে ফোন করে প্রায়ই বিরক্ত করত। ঘটনার পর মহুয়ার ফোন নম্বর বদলে ফেলে।”
মহুয়ার আবাসনের কিছুটা দূরে ইয়াসমিন বিনি এক বাঙালি মহিলা থাকেন। তাঁর বাড়ি পান্ডুয়ায়। বুধবার পরিচিত ওই মহিলার সঙ্গে বাড়ি ফিরেছিলেন মহুয়া। সন্ধেয় আবাসনের ভিতরের সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় মহুয়ার দেহ উদ্ধার হয়। সেই সময় মহুয়ার স্বামী হরিপদ ও তাঁদের ছেলে দুজনেই বাড়ির বাইরে ছিলেন। হরিপদবাবু জানান,”কাজের কারণে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়। ছেলে একই আবাসনের অন্য একটি ঘরে টিউশনি পড়তে গিয়েছিল। বাড়ি ফেরার সময় ছেলেই প্রথম দেহটি দেখতে পায়। আবাসনের সিঁড়িতে গলার নলি কাটা অবস্থায় দেহটি পড়েছিল। তার পেটে একাধিকবার ছুরির আঘাত রয়েছে। মুখ কাপড় দিয়ে বন্ধ অবস্থায় ছিল।” এই ঘটনার তদন্তে নেমে আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে স্থানীয় পুলিশ। সেখানে এই দিন সন্ধেয় দুজন ব্যক্তিকে আবাসনে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এরপর মহুয়ার স্বামীকে সেই ফুটেজ দেখানো হলে এক ব্যক্তিকে মিঠুন বলে শনাক্ত করেন। তার বাড়ি এ রাজ্যে বলে জানা গিয়েছে। সেদিন রাতেই মহুয়ার আবাসন থেকে কিছুটা দূরে ঝুলন্ত অবস্থায় মিঠুনের দেহ উদ্ধার হয় বলে জানা গিয়েছে। যা রহস্য আরও বাড়িয়েছে। অপর ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
মহুয়ার মা পার্বতী গোলদার জানান,”কাজের তাগিদে ভিন্ন রাজ্যে কাজে গিয়েছিল মেয়ে জামাই। সেখানে গিয়ে এই পরিণতি হবে ভাবা যায়নি। নাতিকে মানুষ করার জন্যে বেঙ্গালুরুর একটি নামী স্কুলে ভর্তি করেছিল তারা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.