Advertisement
Advertisement
Arthritis pain

সাবধান! বাত শুধু গাঁটে গাঁটে নয়, শরীরের নানা অঙ্গে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

Arthritis pain can harm this ways too, expert gave important Health Tips

ছবি: সংগৃহীত

Published by: Suparna Majumder
  • Posted:August 31, 2024 3:33 pm
  • Updated:August 31, 2024 3:33 pm  

বাত মানেই শুধু ব্যথা নয়, হতে পারে চোখ লাল, ত্বকে র‌্যাশ, কিডনির সমস্যা ও আরও অনেক কিছু। আসলে অটোইমিউন ডিজিজ এইভাবেই দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই ছোটখাটো লক্ষণেও সাবধান হতে হবে, এ নিয়েই কথা বললেন এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইমিউনোলজি অ্যান্ড রিউমাটোলজির চিকিৎসক অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়। লিখলেন জিনিয়া সরকার

চেম্বারের বাইরে বসে এক ৩৩ বছরের দেবলীনা বিশ্বাস ও ৪০ বছরের দাসবাবু একে অপরের সঙ্গে কথা বলছেন,
দেবলীনা: বিগত তিন-চার বছর ধরে চোখের অস্বস্তি মারাত্মক হোতো, মাঝে মাঝেই চোখ করকর করতে থাকে, চোখে বালি পড়লে যেমন হয় তেমনটাই। সঙ্গে ড্রাই আই। চোখের ডাক্তারবাবু নানা টেস্ট করেও যখন সমস্যা ধরতে পারলেন না তখনই রিউমাটোলজিস্টের কাছে আসতে বললেন। ডাক্তারবাবু জানান এটি অটোইমিউন ডিজিজ থেকে হচ্ছে। রোগের নাম সজোগ্রেন সিন্ড্রোম।
দাসবাবু: আরে আমারও বাতের ব্যথা। কোমরে, ঘাড়ে ব্যথা দীর্ঘদিন, তার সঙ্গে হঠাৎ করেই একদিন সকালে উঠে দেখি চোখ খুব লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। একাধিকবার এমন হয়েছে, প্রথমে কনজাংটিভাইটিস হচ্ছে কি না ভেবে চোখের ডাক্তারের কাছে আমিও যাই। তবে ইউভাইটিস ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অন্যান্য ব্যথার উপসর্গ দেখে চিকিৎসক জানান, কারণ নাকি বাত। অটোইমিউন ডিজিজ নাকি এটিও।

Advertisement

এই ধরনের রোগীরাই কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের কাছে চিকিৎসা করতে আসেন। খুব চেনা অসুখ বাতের ব্যথা। কম-বেশি অনেকেরই হয়। কিন্তু শুনতে যতটা সহজ রোগটা কিন্তু ততটাও সোজাসাপটা নয়। এর বিস্তার কিন্তু জয়েন্টে বা হাড়ের গাঁটে গাঁটে হতে শুরু করলেও তা চোখ থেকে কিডনি কিংবা ত্বক ও শরীরে নানা অংশে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণটা লুকিয়ে রয়েছে ইমিউন শক্তির আড়ালেই। যার বিরূপ প্রতিক্রিয়াতেই বাতের ব্যথা, কিংবা দেবলীনা দেবীর মতো সজোগ্রেন সিন্ড্রোম অথবা শরীরের নানা ধরনের অসুখ প্রকাশ পেতে পারে।

Pain in hand
ছবি: সংগৃহীত

আসলে দায়ী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
একজনের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বা ইমিউনিটি সাধারণত জন্মের আগে থেকেই অর্থাৎ মাতৃজঠরে থাকার সময় থেকেই তৈরি হতে থাকে। এই ইমিউনিটি শরীরের রক্ষাকবচ। বাইরে থেকে কোনও খারাপ কিছু শরীরে প্রবেশ করলে তা যাতে ক্ষতি না করতে পারে সেই কাজটাই করে আমাদের ইমিউনিটি। ইমিউনিটি শক্তি যখন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না বা প্রয়োজন অতিরিক্ত অ্যাকটিভ হয়ে যায় তখন কিন্তু নিজেই নিজেকে চিনতে পারে না। শরীরের মধ্যে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা দেখলে এই শক্তি তখন সুরক্ষা দেওয়ার বদলে আক্রমণ ডেকে আনে। এই আক্রমণ শরীরের যে কোনও অঙ্গে হতে পারে। গাঁটে গাঁটে, হাত-পা, মুখ, চোখ, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, শরীরের বিভিন্ন পেশি, যে কোনও স্থানে এই অটোইমিউন ডিজিজের প্রভাব পড়তে পারে।

কখন বাত?
ইমিউনিটির অতিসক্রিয়তা যখন গাঁটে গাঁটে প্রভাব ফেলে, তখনই তা বাত রূপে প্রকাশ পায়। সমস্যা হয়, এই গাঁটে ব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা অনেকেই মনে করেন হয়তো বয়সজনিত কারণে হাড়ের ক্ষয় থেকে হচ্ছে, তা কিন্তু সবসময় নাও হতে পারে। আসলে যখন ইমিউনিটি জয়েন্টে প্রভাব ফেলে তখন জয়েন্টে প্রদাহ তৈরি হয়, তা থেকে ব্যথা শুরু হয়। যাকে বাতের ব্যথা বলা হয়।

skin
ছবি: সংগৃহীত

[আরও পড়ুন: কলকাতার ‘দহন’ চিনিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ, প্রতিবাদের সেই ভাষ্য ভোলেনি শহর, জন্মদিনে ফিরে দেখা]

ব্যথা ছাড়াও নানা অঙ্গে কুপ্রভাব
চোখের অসুখ, লিভারে প্রভাব ফেলতে পারে (অটোইমিউন হেপাটাইটিস), ফুসফুসের সমস্যা (ILD বা Interstitial lung disease), বিকল করে কিডনি (কিডনির ছাঁকনি নষ্ট হয়, প্রোটিন লিক হতে থাকে), হার্টে কুপ্রভাব (কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক,
অল্প বয়সে হার্টের ধমনি ব্লক হয়ে যাওয়া বা ভাসক্যুলাইটিস), অনেকের আবার ভাসক্যুলাইটিস থেকে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়, ত্বকে ‌র‌্যাশ কিংবা পেশি ক্ষতি (মায়োসাইটিস, যা থেকে পেশিতে ব্যথা শুরু হয়, পেশি দুর্বল হয়ে যায়, যা থেকে চলতে বসতে সমস্যা হয়) ইত্যাদি হতে পারে অটোইমিউন ডিজিজের কবলে পড়লে। যে অঙ্গে প্রভাব ফেলবে সেই অনুযায়ী লক্ষণ প্রকাশ পাবে।
তাই ব্যথা ছাড়াও বারবার র‌্যাশ বেরনো, চোখ হঠাৎ হঠাৎ লাল হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, কোমরে ব্যথা, জ্বরের সঙ্গে মুখে ঘা, কিডনির সমস্যা বা প্রস্রাবের সময় ফেনা হওয়া ইত্যাদি বারবার হতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।

Eye
ছবি: সংগৃহীত

কেন হয়? কাদের হয়?
অটোইমিউন ডিজিজের পিছনে জিনের প্রভাব অবশ্যই রয়েছে।
এছাড়া ধূমপান অটোইমিউন ডিজিজের একটি অন্যতম কারণ।
যেসব খাবারে অক্সিডেন্ট বেশি রয়েছে, বিশেষ ভাজা বা তৈলাক্ত খাবার যারা বেশি খায় তাদের অটোইমিউন ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
সাধারণত ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সিদের অটোইমিউন ডিজিজে আক্রান্তের প্রবণতা সব থেকে বেশি। তবে শিশু থেকে বয়স্ক যে কারওরই এই অসুখ হতে পারে। আবার পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই অসুখের ঝুঁকি বেশি।

প্রতিহত করতে
সর্বপ্রথম হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলা দরকার।
ধূমপান করবেন না। এটা মারাত্মক প্রভাব ফেলে ইমিউনিটির উপরে।
নিয়মিত এক্সারসাইজ এই অসুখের ঝুঁকি কমায়।
অসুখ হয়ে গিয়ে থাকলে ওষুধ খেতেই হবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো। না হলে হাত-পা
বেঁকে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গহানিও হতে পারে।

pain
ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসা
বর্তমানে ডিজিজ মডিফাইং অ্যান্টি রিউম্যাটিক ড্রাগ (ডিমার্ড মেডিসিন) এই ধরনের অসুখকে প্রতিহত করতে সব চেয়ে ভালো কাজ করছে। যদিও আগে স্টেরয়েড, ব্যথার ওষুধ দ্বারাই বাতের চিকিৎসা করা হত। এখন যেহেতু চিকিৎসার প্রভূত উন্নতি হয়েছে, তাই যদি অসুখ দ্রুত ধরা যায় তবে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই বাত হয়েছে শুনে অবজ্ঞা না করে চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শমতো চললে সুস্থ জীবনযাপন করা যায়, না হলে অনেক ক্ষেত্রে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
ফোন – ৭৪৩৯১ ৯৫৬০০

[আরও পড়ুন: কান্দাহার হাইজ্যাকের স্মৃতি ফেরাল ‘IC 814’, ছয় এপিসোডের এই সিরিজ কেমন হল? ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement