দুলাল দে: আইএফএ (IFA) সচিব অনির্বাণ দত্তর ভাষায়, ‘এটাকে ঠিক নির্বাসন বলা যায় না। যতদিন না পুলিশের রিপোর্ট পাচ্ছি, ততদিন পর্যন্ত নির্বাসন বলা উচিত। পুলিশের রিপোর্টে নির্দোষ প্রমাণিত হলেই নির্বাসন উঠে কলকাতা লিগে খেলতে পারবে উয়াড়ি আর টালিগঞ্জ।’
ফেডারেশনের ইন্টিগ্রিটি অফিসার জাভেদ সিরাজের রিপোর্টের ভিত্তিতে পুরো ঘটনাটা তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে পাঠিয়েছে আইএফএ। ততদিন পর্যন্ত প্রিমিয়ারের দুই ক্লাব টালিগঞ্জ অগ্রগামী (Tollygunge Agragami) আর উয়াড়ি (Wari) আইএফএ লিগে খেলতে পারবে না। আইএফএ দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত পুলিশের তরফে এই প্রসঙ্গে সরকারি ভাবে কিছুই জানা যায়নি। কবে জানা যাবে, সেটাও নিশ্চিত নয়। কারণ, এই মুহূর্তে নির্বাচনের কাজ ছেড়ে পুলিশ উয়াড়ি আর টালিগঞ্জের ম্যাচের অপরাধী খুঁজতে বার হবে না, বলাই বাহুল্য। তাহলে এই মরশুমে দুই ক্লাবের ভবিষ্যৎ? আইএফএর কথামতো যদি জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে লিগ শুরু হয়, তাহলে খেলবে কী করে এই দুটি দল? নিজেদের ভবিষ্যৎ জানার জন্য আইএফএর গভর্নিং কাছে আবেদন করেছে টালিগঞ্জ আর উয়াড়ি। কিন্তু বাংলার মেয়েরা যদি সিনিয়র ন্যাশনালের ফাইনালে ওঠে, তাহলে ১৫ মের আগে কিছুতেই গভর্নিং বডি ডাকার জায়গায় নেই আইএফএ। কিন্তু আইএফএর গভর্নিং বডির দিকে না তাকিয়ে থেকে উয়াড়ি আর টালিগঞ্জ দুটি ক্লাবই বল নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে সামনের মরশুমের দিকে তাকিয়ে। গড়াপেটার জন্য আইএফএ নির্বাসিত করে রেখেছে, অথচ দুটো ক্লাবই পরের মরশুমের দল তৈরি করতে বল নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে।
কোচ সত্যব্রত ভৌমিকের কোচিংয়ে দুদিন আগেই প্র্যাকটিস শুরু করে দিয়েছে টালিগঞ্জ। আর ববিবার থেকে ট্রায়াল করে দল তৈরি করতে বাটা মাঠে নামল উয়াড়ি। কিন্তু দুটো দলই জানে না, এই মরশুমে আদৌ ফুটবল খেলা সম্ভব কী না। তবে উয়াড়ির কর্তা ইন্দ্রনাথ পাল এবং টালিগঞ্জ কর্তা শুভঙ্কর ঘোষ দস্তিদারের আশা, গভর্নিং বডি নিশ্চয়ই তাদের সমস্যাটা বুঝে নির্বাসন তুলে দেবে। আর যদি সেটা না হয়, আদালতে যাওয়ার জন্য দুটো দলই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিয়ারলেসের বিরুদ্ধে বিশ্রী ভাবে গোল খেয়েছিল টালিগঞ্জ। আর ইস্টবেঙ্গলের কাছে ৫ গোল খাওয়া ছাড়াও ভবানীপুরের কাছে ৩-২ ফলে হেরেছিল উয়াড়ি। এই ম্যাচগুলি নিয়েই এই টালিগঞ্জ আর উয়াড়ির বিরুদ্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন জাভেদ সিরাজ। তারই ভিত্তিতে আইএফএর শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি নির্বাসন দিয়েছে দুই ক্লাবকে। উয়াড়ির ইন্দ্রনাথ পাল বললেন, ‘শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু কেন শাস্তি, তার কোনও তথ্যই আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। আর ফেডারেশনের রিপোর্টের ভিত্তিতেই একেবারে নির্বাসন ! আমরা যে দোষী, তার প্রমাণটা হল কোথায়? তাছাড়া দোষী হলেও আইএফএর সংবিধানে আছে সেক্ষেত্রে শাস্তি পাবেন কোচ, ফুটবলার, সংশ্লিষ্ট কর্তা। ক্লাবকে শাস্তি দেওয়ার কথা লেখা নেই। তাহলে উয়াড়ি কেন নির্বাসনের আওতায়? গড়াপেটার অভিযোগে শাস্তি পেয়েছিলেন আজহার উদ্দিন। ভারতীয় দলকে তো নির্বাসিত করা হয়নি।’ এই প্রসঙ্গে আইএফএ সচিব বললেন, ‘আইনের ব্যাখ্যা, একেকজনের কাছে একেক রকম। ওদের দুই ক্লাবের বিষয়টা গভর্নিং বডি ঠিক করবে। সেই সিদ্ধান্তে খুশি না হলে, যে কোনও পদক্ষেপ নিতেই পারে ক্লাবগুলি।’
শোনা যাচ্ছে, বেশ কিছু ফুটবলার এবং কোচ যারা এই দুই ক্লাবেই ছিলেন, তারা বেটিং সিন্ডিকেটে জড়িত। এই প্রসঙ্গে টালিগঞ্জ কর্তা বললেন, ‘শোনার ভিত্তিতে কিছু হয় না। তাহলে সই করানোর আগে আইএফএ থেকে বেটিং সিন্ডিকেটের আওতায় থাকা ফুটবলার, কোচদের তালিকা আইএফএ থেকে প্রকাশ করা উচিত ছিল। নির্বাসনের তালিকায় থাকা কোনও ফুটবলার, কোচকে সই করানো হয়নি। আশা করছি, গভর্নিং বডিতে সুবিচার পাব। না হলে পরের পদক্ষেপ তৈরি আছে।’ আর সেই পদক্ষেপ যে আদালত, তা বোঝাই যাচ্ছে।
অনেকে বলছেন, নিশ্চয়ই আইএফএ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে। নাহলে নির্বাসনে থেকেও কেন প্র্যাকটিস শুরু করে দেবে দুই ক্লাব? আইএফএ সচিব বলছেন, ‘ওরা দল তৈরি করে রাখতেই পারে। এরমধ্যে অন্যায় নেই। পুলিশ যদি জানিয়ে দেয়, খেলতে পারবে। তার জন্য দল তৈরি করে রাখাই তো ভাল।’ কিন্তু কবে জানাবে পুলিশ? কেউ জানেন না। আদৌ কি এই মরশুমে ফুটবল খেলতে পারবে টালিগঞ্জ আর উয়াড়ি? সেটাও কেউ জানে না। তার আগে কিছুদিন প্র্যাকটিসই না হয় হোক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.