দুলাল দে: গত মরশুমে ১৩ গোল করে আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তিনি ইমামি ইস্টবেঙ্গলের দিমিত্রি দিয়ামান্তাকোস। এখনও পর্যন্ত আইএসএলে গোল সংখ্যা মাত্র ২টি। অস্কারের হাতে পড়ে সেই দিয়ামান্তাকসকেই এখন অন্যরকম লাগছে। এদিনও যখন কথা বলছিলেন, আত্মবিশ্বাস যেন চুঁইয়ে পড়ছে।
প্রশ্ন: দারুণ কিছু করলে মানুষ প্রমোশন পেয়ে আরও উঁচুতে যায়। কিন্তু আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পর আপনি এলেন আপাতত আইএসএলে ব্যর্থতার তালিকায় থাকা দলে?
দিমি: আমার মনে হয় ইস্টবেঙ্গলে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে আমার কোনও ভুল ছিল না।
প্রশ্ন: কী করকম?
দিমি: ইস্টবেঙ্গল এএফসি খেলার সুযোগ পেয়েছে। সেটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। তাছাড়া সেই সময় কোচ এবং টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে জানিয়েছিল, এবার সত্যিই ভাল দল গড়ে ভাল কিছু করতে চাইছে। একজন ফুটবলার তো এটুকুই চায়। তাছাড়া ভারতীয় ফুটবলে ইস্টবেঙ্গলের ঐতিহ্য, নাম, ট্রফির সংখ্যা ভাবুন। আমার জন্য একদম সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।
প্রশ্ন: সত্যি করে বলুন তো, এবারের দলটা কেমন হয়েছে?
দিমি: ম্যানেজমেন্ট যা দল তৈরি করেছে, সত্যিই দারুণ।
প্রশ্ন: তাহলে কুয়াদ্রাতের সময় এরকম ব্যর্থতার মুখে পড়ত হল কেন?
দিমি: খেলা তো পেপারে হয় না। পেপারে প্রচুর নাম। কিন্তু খেলাটা হয় মাঠে।সেটা ঠিক করে না হলে সাফল্য আসবে কি করে?
প্রশ্ন: একটু বুঝিয়ে বলুন..।
দিমি: অস্কারের কোচিংয়ে আমরা একটা দল হিসেবে এখন খেলছি। ড্রেসিংরুমের পরিবেশটাই অস্কার বদলে দিয়েছেন। বদল যে হয়েছে, সেটা ম্যাচে দেখেও সবাই বুঝতে পারছেন। অস্কার সত্যিই দারুণ ট্যাকটিসিয়ান।
প্রশ্ন: আপনি গতবারের সর্বোচ্চ গোলদাতা। কিন্তু যখন দেখেন, মোহনবাগানের ম্যাকলারেন, দিমিত্রি, কামিংসরা গোল করে চলেছেন। দেখে খারাপ লাগে না?
দিমি: অস্বীকার করে তো উপায় নেই, মোহনবাগান দলটা বেশ ভাল দল। আমি আমার পারফরম্যন্স নিয়েই মনোযোগ করি। আইএসএলে ২ টো গোল হলেও মরশুমে কিন্তু ৭টা গোল হয়ে গিয়েছে। হয়তো আমরা একটু দেরিতে শুরু করেছি। কিন্তু হাতে যা ম্যাচ আছে, পর পর ক’টা হোম ম্যাচ জিতলে পরিস্থিতি কিন্তু বদলে যেতে পারে।
প্রশ্ন: একটা প্রবাদ আছে, একজন ভাল স্ট্রাইকার সবচেয়ে স্বার্থপর হয়। বিশ্বাস করেন?
দিমি: একদম। যে স্ট্রাইকার বক্সের মধ্যে বল পেয়ে গোল না করে অন্যকে ঠেলে দেয়, সে স্ট্রাইকার নয়। তবে অস্কারের কোচিংয়ে আমাদের দর্শন একটু অন্যরকম। অবশ্যই আমি গোলের জন্য ঝাঁপাই। কিন্তু যদি দেখি, গোলের অ্যাঙ্গেল আমার জন্য ছোট। তখন কোনও সতীর্থ যদি গোল করার জন্য ভাল পজিশনে থাকে, তাহলে তাকেই পাসটা বাড়িয়ে গোলটা করাই। কারণ, আমার গোলটা কিন্তু তখনই গুরুত্ব পাবে, যদি ম্যাচটা জিততে পারি।
প্রশ্ন: অস্কারের কোচিংয়ে কোন ম্যাচটাকে ঘুরে দাঁড়ানোর টার্নিং পয়েন্ট বলবেন?
দিমি: একটা ম্যাচ নয়। এএফসি টুর্নামেন্টটা বলব। আমরা যে ম্যাচ জিততে পারি, একটা সময় ভুলতে বসেছিলাম। অস্কারের কোচিংয়ে ভুটানের প্রতিযোগিতায় জিতে সবাই মিলে বিশ্বাস করতে শুরু করলাম, হ্যাঁ, আমরাও জিততে পারি। ড্রেসিরুমে এই বিশ্বাসটা ছড়িয়ে যাওয়ার খুব দরকার ছিল। দেখলেন না, মহামেডানের বিরুদ্ধে ৯ জনে মিলে আমাদের লড়াইটা?
প্রশ্ন: কিন্তু লাল কার্ড দেখে ৯ জনে হয়ে যেতেও তো কেউ বলেনি?
দিমি: এই জায়গায় আমিও আপনার সঙ্গে একমত। ম্যাচের পর কোচ, ম্যানেজমেন্ট ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলেছে। ফুটবলারদের আবেগ আরও নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত ছিল। মহামেডানের প্ররোচনায় আমাদের পা দেওয়াটা ঠিক হয়নি। কিন্তু তবুও বলছি, ৯ জনে যে লড়াইটা আমরা লড়েছি, টিমের মধ্যে মারাত্মক ইউনিটি না থাকলে সম্ভব হয় না। এখনও তো হাতে অনেকগুলি ম্যাচ আছে। দেখা যাক না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.