Advertisement
Advertisement

Breaking News

Killbill Society Review

এই অসময়ে চিরন্তন প্রেমের খোঁজ করে সৃজিতের ‘কিলবিল সোসাইটি’

কেমন হল প্রতীক্ষিত 'কিলবিল সোসাইটি'? পড়ুন রিভিউ।

Koushani, Parambrata starrer Srijit Helmed ‘Killbill Society’ review
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:April 11, 2025 5:26 pm
  • Updated:April 11, 2025 5:26 pm  

বিদিশা চট্টোপাধ্যাায়: বাইবেল থেকে ধার করে নায়ক বলে “এমন অ্যাশেস টু অ্যাশেস, ডাস্ট টু ডাস্ট প্রেম যদি নাই করতে পারলাম তাহলে আর কী করলাম”- সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘কিলবিল সোসাইটি’র নায়ক মৃত্যুঞ্জয় কর ওরফে আনন্দ কর (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) বেঁচে থাকার সায়াহ্নে এসে এ কথা বলে তার প্রেমিকা পূর্ণাকে (কৌশানি মুখোপাধ্যায়)। সিরিয়াল কিলিং , মার্ডার, মেইহেম নয়, বরং চিরন্তন প্রেমের কথা বলে ‘কিলবিল সোসাইটি’। যে প্রেম প্রত্যাহিকতায় মরে যায় না, যে পতঙ্গ আবেগ নেভে না আমৃত্যু। এই বৈশাখে তাই প্রেমের ঝোড়ো হওয়ার জন্য তৈরি হন।

‘কিলবিল সোসাইটি’ বোধহয় পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যক্তিগত ছবি। ইনফ্যাক্ট এই ছবি দেখার পর মনে হয়েছে সৃজিত কেবল নিজের জন্যই ছবি করেন। এই প্রশ্ন রাখব আমি পরিচালকের কাছে! তাই নয় কি? সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সব ছবিতে একটাই নায়ক- তাঁর প্রিয় পুরুষের আর্কিটাইপ। এমন এক ইন্টেলেকচুয়াল বাঙালি পুরুষ যে গীতাও জানে, বাইবেলও জানে, সুমনও জানে, বৈষ্ণব পদাবলিও জানে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ও জানে, জানে ডিলান থমাসও। যে একই সঙ্গে ভীষণ ‘সেলফ রাইটিয়াস’ এবং কখনও কখনও ভীষণ ভালনারেবল। এই পৃথিবীর সব কবিতা-গান-ফিলোজফি থেকে ফিজিক্স এবং ফিজিক্যালিটি তার সিদ্ধহস্ত। সে জানে সারকাজম, সে জানে জীবনের সারসত্য। সে জানে আপারহ্যান্ড নিতে, সে জানে নতজানু হতেও। ছবিতে কন্ট্র্যাক্ট কিলার মৃত্যুঞ্জয় কর, পূর্ণাকে কবিতা শোনায় ‘ডু নট জেন্টল ইনটু দ্যাট গুড নাইট’, নিজের প্রেমের স্বীকারোক্তিও করে আবার নায়িককে এও বলে, ‘আপনি অনেকটা আমার মতো, আমার মতোই প্রায় মারকাটারি সেন্স অফ হিউমার, প্রত্যেক কথায় মু-তোড় জবাব..।’ এই নায়ক নিজেই নিজের গুণগান করে এবং নায়িকা তার মনের মতো হলে তবেই প্রেমের খেলায় স্কোর হয়! এই ছবিতে পরিচালক তাই নায়িকার চরিত্র এমনভাবে তৈরি করেছেন যাতে সে যেন তার প্রিয় পুরুষের সমান সমান হয়ে ওঠে। হয়েছেও তাই। নায়ক, ‘ইনস্টাগ্রামের মেয়ে আর গ্রামের ছেলে’র ‘পান’ করলে, নায়িকা পালটা উত্তর দেয় ‘ছুটির মেজাজে ইটির মতো’ দেখতে। আবার নায়িকা যখন নিজেকে ‘পিওর, হ্যাপি, ইনোসেন্ট রিলেশনসিপ’-এ ব্যর্থ মনে করে, নায়ক তখন প্রশ্ন করে সে কেন ‘এই প্যাট্রিয়ারকাল মেল গেজ’ থেকে কথা বলছে! কারণ তার কিছু আগেই নায়িকা মেল গেজ-এর প্রসঙ্গ তুলেছে এবং নায়ক তাঁকে মজা করে ‘ফেমিনাৎজি’ আখ্যা দিয়েছে। গোটা ছবি জুড়ে ফ্ল্যাশব্যাকের মধ্যে চলে আনন্দ এবং পূর্ণার তু তু ম্যায় ম্যায়।

Parambrata, Koushani starrer Srijit's Killbill Society Trailer out

দেখতে দেখতে মনে হয় ‘কিলবিল সোসাইটি’তে যে নানান ইস্যু উঠেছে, যেসব শব্দের কয়েনেজ হয়েছে যেমন ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সর, ভিডিও টেপ ভাইরাল, টক্সিক বয়ফ্রেন্ড, স্লাটশেমিং, মেল গেজ, ফেমিনাৎজি, ভার্চুয়াল আদালত– এই সব কিছুই আসলে এই অসময়ের পৃথিবীতে সৃজিত সৃষ্ট কাঙ্খিত পুরুষ এবং নারীর দেখা হবে, কথা হবে, তর্ক হবে এবং প্রেম হবে বলে। আমি, আপনি, দর্শক সব অজুহাত আসলে। আর যদি খুব মন দিয়ে দেখা যায় তাহলে মনে হয় পরিচালক নিজের ভিতরেই দুজনকে নিয়ে চলেছেন। তাদের দুজনের কথোপকথন আসলে তার নিজের সঙ্গেই নিজের সংলাপ। কারণ পরিচালক নিজের কাজের কিংবা নিজের তৈরি করা চরিত্রদের ক্রিটিক করছেন এই চরিত্রদের মাধ্যমে। যেমন তার নায়ক পরিচালকের হয়ে বলে দিচ্ছে ‘আমাদের ছবিটা কিন্তু রম-স্যাট অর্থাৎ রোমান্টিক স্যাটায়ার’। পেট কাটা ডনও (বিশ্বনাথ বসু ) সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের থ্রিলারের নিন্দে করছে। নায়িকা রেগে গিয়ে বলছে ‘সাত দিন ধরে মাথা খেয়েছেন, ওভার অ্যাকটিং করেছেন, দু দুটো গান গেয়েছেন’ কিংবা ‘আপনাকে দশে মাইনাস টু দিলাম’। যদি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে প্রেম নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তা হলে উত্তর কি হবে? ‘কিলবিল সোসাইটি’র নায়িকা পূর্ণাই বলে দিচ্ছে প্রেম নিয়ে ‘অত্যন্ত মিসপ্লেসড, ন্যাকা, ভুলভাল ধারণা আপনার’। নায়ক তার উত্তরে মেনে নেয়, না কি পরিচালক মেনে নিয়ে বলেন, ‘আপনি শুধু কথা বলবেন আর আমি শুনব..’।

আজীবন কারও কথা শোনা যায় এমন নারীর খোঁজে থাকে এই ছবির অন্তরাত্বা। আর সেই নারীর অন্বেষণে তার সমস্ত নায়করা ‘লাইটহাউস’-এর মতো একাকী, অপেক্ষারত। সৃজিতের সব নায়ক হতে চায় শার্লক হোমসের মতো আর সে পথ চেয়ে থাকে আইরিন অ্যাডলারের মতো ডমিনেট্রিক্স এর সঙ্গে দ্বৈরথের। অর্থাৎ সেখানে সংঘাত। আর যেখানে সংঘাত, সেখানে হার-জিত, সেখানে প্রেমে হঠাৎ বিচ্ছেদ। এমন প্রেমের আকর্ষণ দুর্বার হলেও অভিজ্ঞতা বলে এ হল আমাদের টক্সিসিটির প্রতি টান, এই প্রেম পরস্পরকে যথেষ্ট সম্মান করতে পারে না, শান্ত করতে পারে না। আর তাই সিনেমা, প্রেম দৈনন্দিন জীবনের মধ্যে পড়ে সাংসারিক হয়ে ওঠার আগেই সেটাকে অমর করে দেওয়ার চেষ্টা করে চলে আজীবন। তেমন এক অমরত্বের বাঁধনের বাধা পড়তে চায় সৃজিতের নায়ক। তাই এই ছবি আসলে পরিচালকের প্রিয় চরিত্র, প্রিয় কবিতা, প্রিয় গায়ক, প্রিয় সিনেমা, প্রিয় দ্বন্দ, প্রিয় পাজ্‌ল ও তার উত্তর পাওয়া, না-পাওয়ার উইশ ফুলফিলমেন্ট। এখানে আমার আপনার জীবনের বাস্তব নেই। আমাদের পৃথিবীতে মানুষ মারতে আর কনট্র্যাক্ট কিলার লাগে না, আমরা এমনিতেই আধমরা। আমাদের প্রেম, আমাদের ভালোবাসার দৈনন্দিন ওঠা-নামার ক্রাইসিস অনেক সাংসারিক। এবং সাংসারিক বলেই কিন্তু সেটাকে হীন মনে করার কোনও কারণ নেই। এসব ভাবনা ছিল কলেজে পড়ার সময়, যখন প্রেমের সংজ্ঞা ছিল ‘ব্রাইট স্টার’-এর মতো ইটারনাল, তা সে বলিউডের ছবি দেখে হোক বা জন ডান বা কিটস পড়ে। ফলে আমাদের বাস্তবের সঙ্গে ‘কিলবিল সোসাইটি’র যেটুকু যোগ, তা অলঙ্কার মাত্র। তাই এই ছবি দেখে কেউ যদি পূর্ণার মতো ‘মাইনাস টু’ দেন দিতেই পারেন, আবার কেউ হয়তো দশে দশও দেবেন। তবে ছবি দেখতে দেখতে যে কটা গান শুনলাম, হাঁটার মাঝখানে একটু জিরিয়ে নেওয়ার মতো আরাম পেলাম। ‘তুমি নেই আগের মতো’ (কণ্ঠ: সোমলতা আচার্য চৌধুরি, সুর অনুপম রায়), ‘ভালোবেসে বাসো না’ (কণ্ঠ ও সুর: অনুপম রায়) এবং ‘কাঁধে মাথা রেখে তোমার’ (কণ্ঠ: দুর্ণিবার সাহা, সুর : রণজয় ভট্টাচার্য)_ এই তিনটে গান কানে লেগে থাকে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে গান সবসময় স্ট্যান্ড আউট করে, এ আর নতুন কথা কি! বাকিটা দেখতে হলে সিনেমা হলের টিকিট কাটুন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
News Hub