Advertisement
Advertisement
The Shameless

পতিতার লজ্জাহীন লড়াই দেখায় ‘দ্য শেমলেস’, অনবদ্য অনসূয়া সেনগুপ্ত

কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো কানজয়ী সিনেমা কেন মাস্ট ওয়াচ? পড়ুন রিভিউ।

KIFF 2024: The Shameless film review
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:December 11, 2024 9:50 pm
  • Updated:December 11, 2024 10:01 pm  

ইন্দ্রনীল শুক্লা: লজ্জা, ঘেন্না, ভয়ের মতো অনুভূতিগুলোকে বিদায় দিতে পারলে এক বিরল সাহসের জন্ম হয়। এমন সাহস মাথা তুলে অনায়াসে কথা বলতে পারে সামাজিক বাধার বিরুদ্ধে। এমন লজ্জাহীনতা সাবলীলভাবে দাঁড়িয়ে পড়তে পারে চিরকালীন প্রথার পথ আটকে।আর অতীত জীবনে অপমানিত হয়ে হঠাৎ খুন করে পালাতে থাকা এক দেহপসারিণীর মধ্যে যদি এই সাহস এবং লজ্জাহীনতার জন্ম হয়, তাহলে কেমন হতে পারে তার জার্নি? সেই অন্ধকার, পিচ্ছিল, গা শিরশির করা স্যাঁতস্যাঁতে গলিটাতেই হেঁটেছে বুলগেরিয়ান পরিচালক কনস্ট্যান্টিন বোজানোভের ‘দ্য শেমলেস’ ছবিটা। আর চলতি বছর ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আন সার্টেন রিগার্ড’ বিভাগে এই ছবির জন্য কলকাতার মেয়ে অনসূয়া সেনগুপ্ত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়ার কারণেও আলাদাই উন্মাদনা জন্ম নিয়েছে। আর হবে নাই বা কেন? এই প্রথম কান-এ কোনও ভারতীয় অভিনেত্রী এই বিভাগে পুরস্কৃত হলেন।

‘দ্য শেমলেস’ ছবিটা আবর্তিত হয়েছে পলায়তরত এক যৌনকর্মীর জীবন ঘিরে। দিল্লির একটি পতিতাপল্লীতে এক জন পুলিশকে হত্যা করে পালায় সে। তার নাম রেণুকা। সে খরচ চালানোর জন্য অন্য জায়গায় একটি ছোট যৌনপল্লীতেই আশ্রয় নেয়। সেখানে সে ১৭ বছর বয়সী এক ‘ইনোসেন্ট’ পতিতা-কন্যা দেবিকার সঙ্গে সমকামের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আর তাই নিয়েই বিস্তর গোলযোগও বাধে। এই যৌনপল্লীতে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ‘রাম সেনা’ দলের এক রাজনৈতিক নেতার। সংঘাত বাধে তার সঙ্গেও। রেণুকা কিন্তু টাকা জমাতে থাকে দেবিকাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে বলে। এই নিয়েই এগোয় গল্প। পারল কি তারা এই নরক থেকে পালিয়ে যেতে? সে উত্তর ছবি দেখে জানাই ভাল। এভাবে রেড লাইট এরিয়ায় যন্ত্রণায় থাকা, অত্যাচারিত হওয়া, পালানোর চেষ্টা করা পতিতার কাহিনি আমরা অতীতে দেখিনি এমন নয়। মীরা নায়ারের ‘সালাম বম্বে’ থেকে শুরু করে সুধীর মিশ্র-র ‘চামেলী’ কিংবা রীমা কাগতির ‘তলাশ’ আমাদের এমন জার্নিতে নিয়ে ফেলে। ‘সালাম বম্বে’ তো যে সময়ে তৈরি হয়েছিল তখন এমন ছবি বিরল বলা চলে। আর শেষের দুটি ছবিতে করিনা কাপুরের অনবদ্য অভিনয়ও মনে রাখার মতো।কিন্তু ‘দ্য শেমলেস’ যেন আরও অন্ধকারে ঢুকতে চেয়েছে। যৌনপল্লীর দেওয়াল দর্শকের পিঠে ঠেকেছে। পতিতার মুখ থেকে হতাশা মিশ্রিত (সিগারেটের) ধোঁয়ার গন্ধ পেয়েছেন দর্শক। রেণুকার ভূমিকায় অনসূয়া সেনগুপ্ত চলনে, বলনে, রুক্ষতায়, লজ্জাহীন আচরণে জাস্ট চোখের পাতা ফেলতে দেননি। দেবিকার ভূমিকায় ওমারা-ও তাঁকে অতি যোগ্য সঙ্গত করেছেন।ছবিতে ক্যামেরা লো লাইটে বেশির ভাগ সময়ে ঘোরাফেরা করেছে। এতেই ডার্ক ছবির মুডটা আরও বেশি করে ধরা পড়েছে।

Advertisement

যৌনপল্লীর ‘র’ ভাষার বহুল প্রয়োগ এখানে হয়েছে। একটি উদাহরণ নেওয়া যেতেই পারে। পালানোর জন্য রেণুকা নিজের জমানো টাকা প্রসঙ্গে দেবিকাকে যা বলে তা তথাকথিত সভ্য ভাষায় দাঁড়ায় এমনটা- ‘কত লিঙ্গ লেহন করে যে এই টাকা জড়ো করছি তা যদি জানতে!’ বিশ্বাস করুন ছবিটা যখন চলছে তখন এই ভাষা কোনও অবস্থাতেই আলাদা করে অশ্লীলতার জন্ম দিচ্ছে না, বরং যৌনপল্লী অঞ্চলটির স্বাভাবিক ভাষা হিসেবেই কানে আসছে। কিন্তু এমন ভাষা অটুট রেখে প্রেক্ষাগৃহে রিলিজ হওয়ার সময়ে সেন্সরের ছাড়পত্র মিলবে তো! কিংবা ‘রাম সেনা’-র গেরুয়া পতাকাধারী নেতার পতিতাপল্লী গমন দেখানোটা কতটা বাধা পাবে! প্রশ্নগুলো থেকেই যাচ্ছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement