Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2024

দেবী নয়, দুর্গা যেন ঘরের উমা! বাংলার লোকগানে ধরা আছে হৃদয়ের সুর

লৌকিকতার সুর যেন পৌরাণিকতাকে অতিক্রম করে যায়।

Durga Puja 2024: Folk songs of Bengal demonstrate Durga as daughter of family
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:September 18, 2024 7:05 pm
  • Updated:September 18, 2024 7:27 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি অসুরদলনী। দশপ্রহরণধারিণী। স্বর্গ দখল করা মহিষাসুরকে বধ করতে যাঁকে সৃষ্টি করেছিলেন দেবতারা। শরৎকালে রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের আগে সেই দেবী দুর্গারই অকালবোধন করেন রামচন্দ্র। সেই থেকে মর্তলোকে দুর্গাপুজোর প্রচলন। কিন্তু সত্যিই কি বাঙালি হিন্দুর কাছে পুরাণে বর্ণিত সেই দেবী? নাকি তার চেয়েও অনেক বেশি করে ‘ঘরের মেয়ে’? গৌরী, উমা, সতীর মতো নানা নামে যাঁকে ডাকি আমরা।

রামপ্রসাদ সেনের গানে আছে, ‘গিরি, এবার আমার উমা এলে, আর উমা পাঠাব না।/ বলে বলবে লোকে মন্দ, কারও কথা শুনব না।/ যদি এসে মৃত্যুঞ্জয়, উমা নেবার কথা কয়-/ এবার মায়ে-ঝিয়ে করব ঝগড়া, জামাই বলে মানব না।’ কেননা জামাই নিয়ে উমার মায়ের ক্ষোভ, ‘শিব শ্মশানে মশানে ফিরে, ঘরের ভাবনা ভাবে না।’ এ যেন বাংলার চিরচেনা পারিবারিক এক ছবি। দরিদ্র স্বামীর ঘরে মেয়ের বড়ই কষ্ট। তাই মেনকার হিমালয়ের কাছে আর্তি, এবার আর মেয়েকে তিনি স্বামীর কাছে ফেরত পাঠাবেন না। তা অবশ্য হয় না। তিনদিন শেষে পার্বতী শিবের কাছে ফিরে যাওয়ার সময় বিষণ্ণতা ঘিরে ধরে। বিজয়া পর্যায়ের গানে তার অপূর্ব প্রকাশ। ‘নবমী নিশি’ তো এক অনন্ত দুঃখ ঝরানো রাতের প্রতীক। মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছিলেন, ‘যেও না নবমী নিশি লয়ে তারা দলে / তুমি গেলে দয়াময়ী এ পরাণ যাবে।’

Advertisement

এই বঙ্গের লোকায়ত সমাজের ছবি কী আশ্চর্য ভাবে ফুটে রয়েছে দুর্গার ‘বাপের বাড়ি’ আসার এই দৃশ্যকল্পে! আদিম সমাজের শস্য, উর্বরতা ও শিকারের লৌকিক দেবীই পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণ্য প্রভাবে দেবী দুর্গা হয়েছেন কিনা তা গবেষকদের গবেষণার বিষয়। কিন্তু পুরাণের সেই দেবী কেমন করে লৌকিক এক আবরণে নিজেকে উমা হিসেবে গড়ে তোলেন তাও কম গবেষণার বিষয় নয়। একসময় বাংলার ছোট মেয়েরা পুণ্যিপুকুর ব্রত রাখত। সেই ছড়ায় রয়েছে, ‘গিরিরাজের মতো বাপ পাব/ মেনকার মতো মা পাব/ দুর্গার মতো সোহাগী পাব/ কার্তিক গণেশ ভাই পাব।’ এই ‘সোহাগী দুর্গা’ আসলে চিরন্তন বঙ্গতনয়ার এক অনন্য প্রতিভূ। তার ঘরে আসা মানে তাই পাশের বাড়ির মেয়েটার কিংবা নিজের মেয়েরই বাপের বাড়ি বেড়াতে আসার মতো। লৌকিকতার সুর এখানে পৌরাণিকতাকে অতিক্রম করে যায় বুঝি।

শিবের বিয়ে নিয়েও কত গান! নীলের গানে রয়েছে ‘বুড়ার কপালেতে আগুন জ্বলে হাড়ের গলে দোলে/ বস্ত্রাভাবে ব্যাঘ্রচর্ম পরে।/’ এহেন পাত্র নিয়ে বিব্রত মেনকা। হিমালয়কে তাঁর প্রশ্ন, ‘আমার প্রাণের উমাধনী নারদমুনির কথা শুনি/ দিবে কি বুড়ার সঙ্গে বিয়ে।’ আর বিয়ের সময় জামাইয়ের ‘ভীষণ মূর্তি’ মেনকাকে হতভম্ব করে তুলেছিল। যদিও শেষপর্যন্ত নারদের অনুরোধে শিব তাঁর আসল রূপে প্রতিভাত হলেন। আর মুগ্ধ হলেন মেনকা। সহস্র সূর্যের মতো শিবের ঔজ্জ্বল্য, মাথার মুকুটের জৌলুস, কণ্ঠের অলঙ্কারের সৌন্দর্য দেখে তিনি নিজের ভুল বুঝলেন। কিন্তু বিয়ের পরও এহেন জামাইকে নিয়ে তাঁর নানা অনুযোগ। তাই উমাকে না ফেরানোর সিদ্ধান্ত। বছর বছর তিনি আসেন মা-বাবার কাছে। আবার ফিরে যান। আর জামাইকে ঘিরে হাজারো অনুযোগের পরও মেনকা অপেক্ষায় থাকেন পরের বছরের। তিনি জানেন, মেয়ে আবারও আসবে তাঁর কাছে। বাংলার চিরন্তন এই ছবিকে তুলে ধরেই দুর্গা হয়েছেন ঘরের মেয়ে। লোকগান ও ছড়ায় ধরা রয়েছে সবটাই। আজ সময় বদলেছে। থিমের পুজোয় (Durga Puja 2024) কোথাও যেন এই আকুতি কম ঠেকে। এমন মত অনেকের। কিন্তু আজও শরতের অমল বাতাসে, নীল আকাশে মেঘের আনাগোনায় ফিরে ফিরে আসে শাশ্বত বাংলার মেয়ে উমার আগমনী। পুজো আসছে বললেই এই ছবিটাও মনে আসে। হয়তো ইউটিউবে কেউ চালিয়ে দিয়েছে ‘গৌরী এল, দেখে যা লো’। আর তখনই সময়ের বেড়াজাল ভেঙে চিরকালের উমা ফিরে আসে এই বঙ্গদেশে। বদলানো সময়ের সাধ্য কি, একে স্পর্শ করে!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement