Advertisement
Advertisement

Breaking News

Art of Durbar

খাস কলকাতায় হাতে-কলমে মুঘল শিল্পকলার সূক্ষ্মতা ও সৌন্দর্যের উদযাপন

কর্মশালার ভিড় বলছে, আগ্রহ যথেষ্টই।

A workshop has been organized for Art of Durbar in Kolkata

আর্ট অফ দরবার। নিজস্ব ছবি

Published by: Sulaya Singha
  • Posted:August 13, 2024 4:21 pm
  • Updated:August 14, 2024 2:06 pm  

সরোজ দরবার: শিল্প বদ্ধ জলাশয় নয়। প্রবহমান। শিল্প কোনও বন্ধনীভুক্ত নয়। সর্বজনীন। তবে সময়ের আবিলতা সরিয়ে শিল্পকে পুনরাবিষ্কার করতে হয়। বর্তমান সময় ও যাপনের সঙ্গে মিশলেই শিল্প খুঁজে পায় আধুনিকতার সূত্র, নতুন ব্যঞ্জনা। আধুনিক দিনকালে মুঘল শিল্পকলাকে ঠিক সেভাবেই আবিষ্কারের লক্ষ্যে কর্মশালা ‘আর্ট অফ দরবার’-এর আয়োজন কলকাতায়। রঙের বৈচিত্র, উদ্ভাবন, সূক্ষ্মতা শেখার এই পাঠশালা বসল জে অ্যান্ড এস ইন্টিরিয়রস স্টুডিও-তে। এই উদ্যোগের ডিজিটাল পার্টনার সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন।

ভারতবর্ষ চিরকাল যে বৈচিত্রকে সম্মান জানিয়েছে, তার ছাপ দেশের শিল্পচর্চাতেও। মুঘল শিল্পকলার ভিতর যে আভিজাত্য ও সূক্ষ্মতা, তা বরাবরই কুর্নিশ আদায় করেছে শিল্পরসিকদের। মিনিয়েচারে যে নিখুঁত শিল্পকর্ম এই ঘরানার শিল্পীদের, তা রীতিমতো সমীহ করার মতো এবং শিক্ষণীয়। তবে এ-কথাও ঠিক যে, কোনও কোনও বিশেষ পরিস্থিতিতে এক-একটি শিল্পকর্মের প্রতি দৃষ্টি কম পড়ে। হয়তো বর্তমান সময়েও মুঘল চিত্রকলার এই বিপুল উদ্ভাস সম্পর্কে বিদ্যায়তনিক স্থান ছাড়া চর্চা কম। সেই গণ্ডি ভেঙে সাধারণের মধ্যে শিল্পবোধ ও চর্চা সঞ্চারিত করার জন্যই কর্মশালার আয়োজন, ১২ থেকে ১৪ আগস্ট।

Advertisement

Art

[আরও পড়ুন: ছোট টিপ, লিপস্টিকে সুন্দরী শ্রাবন্তী, ছবি দেখে মদন মিত্র লিখলেন…]

উদ্যোগ সম্পর্কে সঞ্জীব সাহা জানালেন, ‘শিল্পকে পুনরুদ্ধার করাই আমাদের ঐতিহ্য। দুই শিল্পগুরু- অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নন্দলাল বসুর কাজ যদি মন দিয়ে খেয়াল করি, তাহলে এই সূত্র পাব। দেখব কীভাবে তাঁরা প্রাচীন রীতিকে আধুনিকতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। শিল্প তো থেমে থাকে না। সময়ের সঙ্গে তার সংশ্লেষ ঘটে। তখনই তা আরও আধুনিক হয়ে আগামীর দিকে এগিয়ে যায়। এই কর্মশালা মুঘল চিত্রকলাকে হাতে-কলমে শেখা, ভালোবাসার আয়োজন। পাশাপাশি সেইসব শিল্পীদের কুর্নিশ জানানো, যাঁরা নিজেদের চোখের আলো, এমনকী গোটা জীবন উৎসর্গ করে এই অভিজাত সূক্ষ্ম শিল্প আমাদের উপহার দিয়ে গিয়েছেন।’

Art3

কর্মশালার ভিড় বলছে, আগ্রহ যথেষ্টই। বয়সে নবীন উৎসাহীরা যোগ তো দিয়েইছেন, চিত্রকলার সঙ্গে পেশাগত যুক্ত মানুষরাও আছেন রং-তুলি হাতে। উল্লেখ করার মতো, বেশ আগ্রহী প্রবীণরাও। নবীনদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁরাও তৈরি শিল্পের পাঠ নিতে। মুঘল চিত্রকলার যে দুই অংশ- কারখানা আর সুরতখানা- কর্মশালায় তাই-ই চিনিয়ে দেওয়া হচ্ছে হাতেকলমে। বিভিন্ন পাথর থেকে যেভাবে অতীতে রং সংগ্রহ করেছেন শিল্পীরা, তা চিনছেন শিক্ষার্থীরা। প্রকৃতিই যেন এখানে সৃষ্টির উৎস। খড়ি ও অক্সাইড গোত্রের রং-এর সঙ্গে তার মিশেলে যে রঙের বৈচিত্র ধরা দিচ্ছে, তা মুঘল চিত্রকলাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। এর সঙ্গে আছে ব্রাশের ব্যবহারে সূক্ষ্মতার মাত্রাগুলি স্পর্শ করা। যা প্রায় চোখেও দেখা যায় না, সেখানেও নিখুঁত তুলির টানে অপূর্ব কারুকাজ ফুটিয়ে তুলেছেন এই ঘরানার শিল্পীরা। ফলত যে আভিজাত্যে গোটা পেন্টিং জুড়ে, তা আসলে এই ছোট ছোট বৈচিত্রের আত্তীকরণেই ফুটে উঠেছে। ঠিক যেভাবে বৈচিত্রের ভিতর দিয়ে ফুটে ওঠে গোটা ভারতবর্ষ। মুঘল চিত্রকলার ফর্মের মধ্যেই যেন তাই ভারতীয় সভ্যতার আত্মা।

কর্মশালার পাশাপাশি মুঘল শিল্পের ইতিহাস, প্রাসঙ্গিকতা, বহমানতা ব্যাখ্যা করে দিচ্ছেন শিল্প-ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়। ১৫ আগস্ট এই কর্মসূচির শেষ দিনে এ বিষয়ে বলবেন মুঘল শিল্পকলায় বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অশোক কুমার দাস।

Art2

[আরও পড়ুন: মরশুমি জ্বরে ভরসা ভেষজ দাওয়াই, শিশু-বয়স্কদের খেয়াল কীভাবে রাখবেন?]

শিল্প তার ইতিহাস নিয়ে এগোয় ভবিষ্যতে। যাঁরা আগ্রহী হয়ে মুঘল চিত্রকলার খুঁটিনাটি এই কর্মশালায় শিখছেন, তাঁরা আগামী দিনে নিশ্চিতই তার প্রযোগ ঘটাবেন নিজেদের কাজে। তা হয়তো পুরনো চিত্রকলার অনুকরণ বা প্রতিলিপি নয়। তবে আধুনিক যে কোনও কাজের ভিতর যদি মুঘল শিল্পকলার ঘরানা থেকে যায়, তাই-ই আসলে শিল্পের পুনরুজ্জীবনের শর্ত। তাই-ই শিল্পকে বৃহত্তর অর্থে সমসাময়িক এবং আধুনিক করে তোলে। সামগ্রিক রুচি নির্মাণেও থেকে যায় তার ভূমিকা। মুঘল শিল্পকলা নিয়ে এই হাতে-কলমে চর্চা তাই নানা ভাবেই প্রাসঙ্গিক। শিল্পচর্চা, রুচি নির্মাণের ক্ষেত্রে তো বটেই, প্রাসঙ্গিক সময়ের নিরিখেও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement