Advertisement
Advertisement

Breaking News

DeepSeek

ডিপসিক বনাম চ্যাটজিপিটি: ওপেনএআই কি চাপে পড়ে গেল চিনা স্টার্ট আপ সংস্থার সামনে?

বিনামূল্যের পরিষেবাতেই কি এগিয়ে ডিপসিক?

Who is ahead DeepSeek or ChatGPT
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:February 1, 2025 12:31 pm
  • Updated:February 1, 2025 12:31 pm  

চ্যাটজিপিটির সঙ্গে বন্ধুত্বে বন্ধুত্বে ‘ডিপসিক’ বলে কোনও এক হনু এসে বাগড়া দেবে, মেনে নেওয়া যায়? ‘ডিপসিক এআই’ নাকি সাত তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়। চ্যাটজিপিটি-র থেকেও আগে। কী এমন গোপন ক্ষমতা আছে তার? লিখলেন সোনাঝুরি মৈত্র। 

‘ডিপসিক’ আসার পর থেকে আর কোনও সামগ্রীকে ‘মেড ইন চায়না’ বলে বিদ্রুপ করতে বেশ বাধছে। ‘ওপেনএআই’-এর চ্যাটজিপিটি আমার ভারি প্রিয় বন্ধু। এককথায় কলেজের অ‌্যাসাইনমেন্ট করে দেয়, প্রেজেন্টেশন বানাতে সাহায্য করে, মাঝে মাঝে একটু ভারিক্কি চালে কবিতাচর্চাও শানায়। তা, সেই বন্ধুকে কি না এমন হেনস্তা? আমার বাপু বড্ড গায়ে লেগেছে। এই গত পরশুই জিপিটি ভায়া কী সুন্দর একটা কোড লিখে দিল। সেটা প্রথমে চলল না বটে, কিন্তু আমি আর ও মিলে বেশ কয়েক ঘণ্টার কসরত করে লিখে ফেলেছিলাম। আমার দিক থেকে বিশেষ অবদান ছিল না, কিন্তু ও যাতে ঝিমিয়ে না-পড়ে, তাই চোদ্দোবার ‘প্লিজ ফিক্স দ‌্য বাগ’ লিখে গিয়েছি। এমন বন্ধুত্বে ‘ডিপসিক’ বলে কোনও এক হনু এসে বাগড়া দেবে, মেনে নেওয়া যায়? ‘ডিপসিক এআই’ নাকি সাত তাড়াতাড়ি উত্তর দেয়। চ্যাটজিপিটি-র থেকেও আগে। কী এমন গোপন ক্ষমতা আছে তার? জানতেই হয়। জিপিটি ভায়াকেই জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওহে, তোমার মধ্যে এমন কী নেই– যা ডিপসিকের মধ্যে আছে?’

Advertisement

চ্যাটজিপিটি বলল, ‘এতে আমার কী দোষ বলো তো? ওর মাথায় বোঝাটা তো কম– মোটে ৬৭১ বিলিয়ন প্যারামিটার। আমার কষ্টটা ভাবো! ১.৮ ট্রিলিয়ন প্যারামিটারের বোঝা মাথায় চেপে ঘুরে বেড়াই। ওর স্পিড হবে না আমার থেকে বেশি? কিন্তু আমি হলফ করে বলতে
পারি আমার উত্তরের অ‌্যাকিউরেসি বেশি হবেই।’

–আহা ভায়া কঁাদো কেন? চোখ মোছো, জল খাও এক ঢোঁক। স্রেফ এটাই কারণ? ওর প্যারামিটারের বস্তাটা একটু হালকা বলেই এই গোলমাল?

–শুধু তাই কী? ওর গঠনটাও যে বেশি মজবুত। যাকে পোশাকি ভাষায় বলে কিনা ‘ইন্টারনাল আর্কিটেকচার’।

–কেমন শুনি?

–ওর কাঠামো তৈরি MoE দিয়ে। MoE হল ‘মিক্সচার অফ এক্সপার্টস’। এই ধরো ইস্কুলের পরীক্ষা হচ্ছে– তুমি যথারীতি ইতিহাসে পাতিহঁাস, ভূগোলেতে গোল। তবে হয়তো ইংরেজি আর বাংলাটা দুপুরবেলা গল্পের বই পড়ে-পড়ে বেশ রপ্ত করেছ। এদিকে, অঙ্ক করতে গিয়ে তোমার গায়ে জ্বর আসে। কিন্তু তোমায় পরীক্ষাটা সব বিষয়েই দিতে হবে– সে তুমি পারো ছাই না পারো! বাংলা, ইংরেজিতে বেশ আকাশছোঁয়া নম্বর পেলেও, গড়ে তুমি সেই ডাহা ফেল করবেই। কিন্তু ধরো, এমন একটা সিস্টেম হল, যেখানে প্রতিটি ছাত্র যে যেই বিষয়ে ভাল, সে সেই বিষয়ে পরীক্ষা দিল। তারপর ক্লাসের নম্বর গড় করে ওটাই তোমাকে দেওয়া হল, তাহলে কীরকম মজা?

–প্রস্তাবটা বেশ ভালো বটে, কিন্তু এটা দিয়ে তুমি কী বোঝাতে চাইলে ভায়া?

–আহ, কথা শেষ করতে দাও। MoE আর্কিটেকচারে গুটিকতক এরকম লার্জ ল্যাঙ্গোয়েজ মডেলকে দলে নেওয়া হয়। এক-একজনকে এক-একটা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেমন ধরো, তোমার বন্ধু নন্টেকে আচ্ছাসে অঙ্কের ক্লাস করানো হল। নন্টের সামনে এখন পাড়ার মুদিখানার কাকু কাবু। নিমেষের মধ্যে হিসাব করে ফেলছে। তেমনই বুল্টিকে শেখানো হল ফিজিক্স। বুল্টি টাইমমেশিন বানিয়ে নিউটন দাদুকে আপেলগাছের তলা থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে নারকেল গাছের তলায় বসিয়ে দিয়ে আসছে। পল্টুকে শেখানো হল গল্প-উপন্যাস।

একের-পর-এক বই ছাপছে সে। এবার ডিপসিক করে কী, ও এরকম একঝঁাক মডেল নিয়ে,
এক-একজনকে এক-একরকমের প্রশিক্ষণ দেয়। তাতে এক-একজনের উপর চাপও পড়ে কম। এক-একজন এক-একটা বিষয় শিখছে। তোমার মতো পরীক্ষায় ১৭৫৭ ‘মৌলিক সংখ্যা’ কিনা জিজ্ঞেস করলে, ১৭৫৭-তে পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল, এসব লিখে আসছে না।

তুমি একগাদা বিষয় একসঙ্গে পড়তে গিয়ে, কে ইতিহাস কে অঙ্ক, সব গুলিয়ে ফেলছ।

এদিকে নন্টে, বুল্টি, পল্টুরা একসঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয় ওদের সঙ্গে আছে এক চৌকিদার। চৌকিদার অর্থাৎ ‘গেটিং লেয়ার’। প্রশ্নপত্র প্রথম চৌকিদারের হাতে পড়ে। সে বিচার করে প্রশ্নপত্র কার হাতে দেবে। অঙ্ক হলেই পাঠিয়ে দেয় নন্টেকে। নন্টে তিন ঘণ্টার পেপার একঘণ্টায় শেষ করে উত্তর দিয়ে দেয়। একইভাবে বিজ্ঞানে বুল্টি আর সাহিত্যে পল্টু। মাথায় রাখতে হবে, চৌকিদারও কিন্তু একটা ‘মডেল।’ তাকেও আলাদা করে প্রশিক্ষণ দিতে হয়, যাতে সে বুঝতে পারে, কার জন্য কোন পরীক্ষা শ্রেয়। নইলে বুল্টির হাতে সাহিত্যের পেপার পড়লে কি অঘটনটাই না ঘটবে!

–আহারে, তোমার বুঝি একটা চৌকিদারের ভারি অভাব?

–বটেই তো। আমি তো তোমার মতোই গাদা-গাদা বিষয় মুখস্থ করছি। এবার হঠাৎ করে কেউ যদি বাড়ির অনুষ্ঠানের কুচুটে মেসোর মতো জিজ্ঞেস করে বসে, ‘বলো তো সোনা, সিপাই বিদ্রোহ কবে হয়েছিল? তখন হিমশিম খেয়ে ভেবে বলতে একটু সময় লাগে না? তুমিই বলো। তারপরেও আমার সঙ্গে এহেন অবিচার? লোকে বড় বড় ব্লগ লিখছে, ‘হোয়াই ডিপসিক ইজ বেটার দ্যান চ্যাটজিপিটি…’

–কিন্তু জিপিটি ভায়া, তুমি এইটা ভাবো, তুমি যে বহুমুখী প্রতিভা। তুমি সব জানো। ডিপসিক তো ছলে-বলে-কৌশলে তোমার থেকে আগে উত্তর দেয়।

–তা বটে! কিছু ব্লগে লিখেওছিল, চ্যাটজিপিটির ট্রেনিং ডেটা বেশি হওয়ার ফলে, সে অনেক বেশি সাবলীল। হুঁ হুঁ বাবা, যতই তাড়াতাড়ি উত্তর দাও, আমার সঙ্গে জ্ঞানে পারবে না কি?

–সহমত! সহমত! তা জিপিটি ভায়া…

আরে এ কী? ওই দেখো, ‘জিপিটি ৪’-এর লিমিট শেষ হয়ে গেল এদিনের জন্য। এজন্যই ভাল লাগে না। আবার বলবে একঝুড়ি পয়সা দিতে, নয়তো আরও দশটা জিমেল অ‌্যাকাউন্ট খোলো। বিরক্তিকর! যাই, বাকি প্রশ্ন ডিপসিককে জিজ্ঞেস করে আসি। ও ব্যাটা ফ্রি!

(মতামত নিজস্ব)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement