আটদিনের জন্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়ে দু’-মাসেরও বেশি সময় আটকে দুই মহাকাশচারী। শরীর, মন ভাঙছে তাঁদের। উপায়?
পৃথিবীতে জন্ম, পৃথিবীর সন্তান, পৃথিবীতেই হবে তার অবসান, এমনই তো স্বাভাবিক। এমনই হয়ে আসছে যুগযুগান্তর ধরে। এর ব্যতিক্রম কি তেমন চোখে পড়ে? এমনকী, যুধিষ্ঠিরের সশরীরের স্বর্গযাত্রা এবং তাঁর নরকদর্শন– যেন এই পৃথিবীতে ঘটছে বলে মনে হয়, পৃথিবী থেকে বহু দূরে মহাশূন্যে বা অন্য কোনও গ্রহে নয়।
এ-কথা ঠিক, স্বর্গে প্রবেশের আগে যুধিষ্ঠির আকাশগঙ্গায় স্নান করে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে দিব্যদেহ ধারণ করলেন বটে– কিন্তু, কখনই মনে হয় না, তিনি পৃথিবীতে থেকে আলোকবর্ষ দূরে চলে গিয়েছেন, যেখানে পৃথিবীতে প্রাপণীয়কোনও কিছুই নেই। বরং সেখানে, সেই স্বর্গে তিনি তঁার স্ত্রী, পরিবার, আত্মীয়স্বজন প্রত্যেকের সঙ্গে মিলিত হলেন। এবং পৃথিবীর সঙ্গে তাঁর সংযোগ চিরকালের জন্য ছিন্ন হল, এই কথাটা একবারের জন্যও মনে হয় না। পৃথিবীর প্রাণ পৃথিবী থেকে বাইরে গিয়ে আর ফিরতে পারল না, এমন কি হয়েছে কখনও?
মহাশূন্যের দিকে যাত্রা করে দুর্ঘটনায় প্রাণ নষ্ট হয়নি, এমন নয়। কিন্তু তা হয়েছে পৃথিবীর পরিসরের মধ্যেই, মহাশূন্যে পৌঁছনোর আগেই। এই মুহূর্তে পৃথিবীর দু’টি প্রাণ, নর-নারী, পৃথিবী থেকে বহু দূরে, মহাশূন্যে, অসহায় সংকটে, ঘোর অনিশ্চয়তায়। পৃথিবী জুড়ে চলছে প্রার্থনা, সুনীতা আর ব্যারি, তাড়াতাড়ি নিরাপদে ফিরে আসুন পৃথিবীতে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং তঁার সহযাত্রী ব্যারি বুচ আট দিনের জন্য গিয়েছিলেন মহাকাশ সফরে। কিন্তু, সেই আট দিন বর্তমানে দু’-মাসেরও অধিক ঠেকেছে। তঁারা আটকে আছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। ফিরতে পারছেন না পৃথিবীতে। পৃথিবীতে তঁাদের ফিরতে না-পারার কারণ, যে মহাকাশযানে তাঁরা ৬ জুন রওনা হয়েছিলেন, তার পাঁচটি থ্রাস্টার খারাপ হয়ে গিয়েছিল। নাসার ইঞ্জিনিয়াররা অবশ্য অনলাইনে চারটি মেরামত করে দিয়েছেন।
এছাড়া মহাকাশযানে হিলিয়াম লিকেজও ধরা পড়েছে। সুতরাং এসব সমস্যা-আহত মহাকাশযানে সুনীতারা পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরে আসতে পারবেন কি না, সেই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ, পৃথিবীতে প্রবেশ করার সময় বায়ুমণ্ডলের যে প্রচণ্ড ধাক্কাটা লাগবে, তা সামলাতে পারার ক্ষমতা মহাকাশযানটির আছে কি না। না পারলে, মহাকাশযানটি জ্বলতে-জ্বলতে মহাশূন্যে ফিরে যাবে এবং আরোহীরা নাকি বাষ্পীভূত হয়ে উবে যাবেন! কিন্তু মহাকাশযানটি সফলভাবে ফিরতে গেলে সুনীতাদের ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মহাশূন্যে থাকতে হবে। কিন্তু সুনীতা এবং বুচের শরীর এই ধকল আর সহ্য করতে পারছে না। যদিও দু’জনেই এমন অপরিসীম অনিশ্চয়তার মধ্যেও ভাঙা শরীর নিয়ে বিশ্রামহীন কাজ করে চলেছেন এবং পাঠিয়ে চলেছেন মহাশূন্যে তাঁদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা-প্রসূত তথ্যাবলি। আমাদের এখন একটিই প্রার্থনা, পৃথিবীর সন্তান পৃথিবীতে ফিরে আসুক সত্বর। পৃথিবী ব্যাকুল অপেক্ষায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.