Advertisement
Advertisement

Breaking News

Reels

‘নারীবিদ্বেষী’ রিলে ভরছে নেটদুনিয়া, অংশ নিচ্ছে মেয়েরাও!

এরকম কনটেন্ট তৈরির ফলে সমানাধিকার ও সাম্যর ভাবনা কি প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজে?

Misogyny reels flooding the internet

প্রতীকী ছবি

Published by: Biswadip Dey
  • Posted:March 20, 2025 4:25 pm
  • Updated:March 20, 2025 4:25 pm  

অসংখ্য রিলে নেটদুনিয়া ছেয়ে আছে, যার ‘কনটেন্ট’ নারীবিদ্বেষের বার্তা দেয়। প্রতি পদে মেয়েদের হীন প্রতিপন্ন করার চেষ্টা তাতে বিধৃত। সবচেয়ে যেটা অবাক করে– এই ধরনের কনটেন্ট তৈরিতে বহু ক্ষেত্রে মেয়েরাও সরাসরি অংশগ্রহণ করে।

ডাব খেতে বেরিয়েছে দুই বন্ধু। জলে টইটম্বুর দু’টি ডাব খেয়ে দু’জনেই তৃপ্ত। এবার টাকা দেওয়ার পালা। এক বন্ধু বলল অন্যজনকে– দে একশোটা টাকা। অন্য বন্ধু শুনেই চোখ কপালে তুলল। আমার খুব হাতে টান রে! পকেটে কিছু নেই। তুই ম্যানেজ কর না! অগত্যা কী আর করার। অন্য বন্ধুটি ডাবের দাম দিয়ে দিল। কিন্তু কথা শোনাতেও ছাড়ল না। তোর তো বেতন হয়েছে সাত দিনও হয়নি। এর মধ্যে নাকে কঁাদছিস? ভর্ৎসনা শুনে অন্য বন্ধুটি মুখে কিছু বলল না– শুধু সামনের দিকে আঙুল দেখাল। পরক্ষণেই আমরা দেখতে পেলাম, একটি অত্যন্ত সুবেশা তরুণী আবেগবিহ্বল হয়ে ছুটে আসছে– ‘ডার্লিং’ বলতে বলতে। দেখে প্রথম বন্ধুটি মাথা হেলাল। সান্ত্বনার সুরে অন্যজনকে বলল– বুঝতে পেরেছি কেন তোর হাতে টাকা নেই! তোর সব টাকা তো এখানেই বেরিয়ে যায়!

Advertisement

এই রিলে লাইকের সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি। ‘কমেন্ট বক্স’ উপচে উঠেছে প্রশংসাসূচক বাক্যে। অথচ ‘কনটেন্ট’ কী? না, একটি মেয়ের পরনির্ভরতা। সেই মেয়েটি চাকরি করে না, স্বামী বা বয়ফ্রেন্ডের পয়সায় ফুটানি করে। এজন্যই বেচারা ছেলেটির হাতে টাকাপয়সা থাকে না। আগাগোড়া ‘রিগ্রেসিভ’ কনটেন্ট। রীতিমতো নারীবিদ্বেষী। কিন্তু মানুষ যেভাবে এটিকে পছন্দ করেছে– কে বলবে– নতুন যুগের হাওয়া নাকি মেয়েদের পক্ষে!

একটি ছেলে রোজ ওষুধের দোকানে যায় বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে। আর, কাউন্টারে থাকা মেয়েটিকে বলে– কন্ডোমস প্লিজ। দঁাত কিড়মিড়িয়ে মেয়েটি কন্ডোমের প্যাকেট তুলে দেয়। পরের দৃশ্যে, তার পরের দৃশ্যে, তারও পরের দৃশ্যে একই জিনিস পুনরাভিনীত হতে থাকে। ছেলেটি কন্ডোম কিনছে। আর, মেয়েটি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ অভিব্যক্তি-সহ কন্ডোম তুলে দিচ্ছে। দর্শকের পক্ষে বোঝা শক্ত– কেন মেয়েটি রেগে যাচ্ছে! এমন তো নয়, ছেলেটি ধার্য টাকা দিচ্ছে না, বা কন্ডোম কেনার সময় কোনও অশালীন ইঙ্গিত করছে মেয়েটির প্রতি! তাহলে? একদিন সঙ্গের বন্ধুটি জানতে চাইল– তুই তো একা। প্রেমটেমের বালাই নেই। এত কন্ডোম, কেন? ছেলেটি উত্তর দেয়– আসলে ওষুধের দোকানের কাউন্টারের মেয়েটি আমার প্রাক্তন বান্ধবী। শুনে বন্ধুটি চমৎকৃত হয়। ‘সাবাশ’ হেঁকে চাপড়ে দেয় পিঠ! এখানে অর্থটি স্পষ্ট: প্রাক্তন বান্ধবীকে উচিত শিক্ষা দিতেই কন্ডোম কিনে চলার নাটকটি সাজানো হয়েছে। বেশ বোকা-বোকা এই রিলেও ‘লাইক’ সংখ্যা ঈর্ষণীয়।

মাত্র দুটো দৃষ্টান্ত আমরা তুলে ধরলাম। কিন্তু আখেরে এরকম অসংখ্য রিলে নেট-দুনিয়া ছেয়ে আছে– যার ‘কনটেন্ট’ নারীবিদ্বেষের বার্তা দেয়। প্রতি পদে মেয়েদের হীন প্রতিপন্ন করার চেষ্টা তাতে বিধৃত। মেয়েরা অল্পবুদ্ধি, মেয়েরা ধনদৌলতের কাঙাল, মেয়েরা পরশ্রীকাতর বা মেয়েরা ছিটগ্রস্ত– এমনই যেন প্রমাণ করতে চাওয়া হয়। এবং সবচেয়ে যেটা অবাক করে– এই ধরনের কনটেন্ট তৈরিতে বহু ক্ষেত্রে মেয়েরাও সরাসরি অংশগ্রহণ করে। এরকম কনটেন্ট তৈরির ফলে সমানাধিকার ও সাম্যর ভাবনা কি প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement