শকট সংকট

ট‌্যাক্সি নিয়ে অভিযোগ ছিল অজস্র। অ‌্যাপ ক‌্যাব এসে কি পরিস্থিতি আদৌ বদলাল? যাত্রীদের নির্ভরশীলতার পরিসর কি তৈরি হল?

হলুদ ট‌্যাক্সি (Yellow Taxi) নিয়ে শহরবাসীর একরাশ নস্টালজিয়া থাকতে পারে, কিন্তু কালো-হলুদ থেকে হলুদ– যখন মহানগরের একমাত্র সম্বল কেবল ট‌্যাক্সিই ছিল, তখন অভিযোগেরও কিছু কমতি ছিল না। তাই ট‌্যাক্সির হরিদ্রাভ শরীরে নীল রিবন পড়ল, ‘নো রিফিউজাল’ লেখা। যদিও, তাতেও প্রত‌্যাখ‌্যান থামল আর কই? তখন সারথি কৃষ্ণর মতো আবির্ভাব ঘটেছিল অ‌্যাপ ক‌্যাবের।

সতি‌্যই কি অ‌্যাপ ক‌্যাব এত দিনে বিকল্প সারথি হয়ে উঠতে পেরেছে? তৈরি করতে পেরেছে এমন কোনও ভরসাস্থল, যা সহজেই ট‌্যাক্সি ধরার, ট‌্যাক্সিচালককে কোথাও যেতে রাজি করানো, এবং মিটার চালু না-রেখে অতিরিক্ত ভাড়া হঁাকানোর যাতনা থেকে নাগরিকদের মুক্তি দেবে? এই ধরনের পরিষেবায় কত ভাড়া, তা আগে থেকেই দেখা যায়, এবং তা কখনওই খুব মধ‌্যবিত্ত বা নিম্ন মধ‌্যবিত্তর আয়ত্তাধীন নয়। তবে, তাতেও সন্তুষ্ট না হয়ে যাত্রীদের অসহায়তার কিঞ্চিৎ সুযোগই নিয়ে কি অ‌্যাপ ক‌্যাবের চালকরা অবিশ্বাস‌্য কোনও ভাড়া চেয়ে বসেন না? এমনকী, ট‌্যাক্সি পাওয়ার যে প্রতিকূলতা, অ‌্যাপ ক‌্যাবে তা আরও জটিল চেহারা ধরে আসে না কি? অ‌্যাপে গন্তব‌্য বলে দেওয়ার পর বেশ কিছু ক্ষেত্রেই অনন্ত অপেক্ষা কি করতে হয় না যাত্রীদের? যদিও বা অ‌্যাপ থেকে কোনও চালককে পাওয়া সম্ভব হয়, গন্তব‌্য নিয়ে আপত্তি-ওজর, ভাড়া নিয়ে অসন্তোষের দরুন সহজেই ‘ক‌্যান্সেল’ হয়ে যায় না কি রাইড? এমনকী, ঝড়বৃষ্টির সময় ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া, এবং অবশেষে একেবারেই গাড়ি না পাওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। এবংবিধ অভিজ্ঞতা কমবেশি প্রায় সমস্ত ক‌্যাব যাত্রীরই রয়েছে।

অ‌্যাপ বাইকও কোনও অংশে কম যায় না। বাইকের ভাড়া সচরাচর অ‌্যাপ ক‌্যাবের তুলনায় সুলভ হয় কিছুটা, কিন্তু শর্ত আরোপ করা, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে না দেওয়া, জিপিএস-এর দোহাই দিয়ে যানজটে ভরা রুট ধরেই এগনো, এসব সমস‌্যা তো থেকেই যায়। সম্প্রতি অ‌্যাপ ক‌্যাবে (App Cab) যাত্রী হেনস্তার ঘটনাও বেশ কিছুবার শোনা গিয়েছে।

যাত্রীদের অসুবিধা তো আছেই, কিন্তু অ‌্যাপ ক‌্যাব চালকদের অবস্থাও কি তথৈবচ? বহু ক্ষেত্রেই অনেকে নিজের গাড়ি চালান না। কিন্তু যার গাড়িই হোক, অ‌্যাপের ‘কমিশন’ বা নির্দিষ্ট বখেরা বুঝে নেওয়ার দরুন, চালকরাও দিন গুজরানের জন‌্য প্রয়োজনীয় উপার্জন করে উঠতে পারেন না বলে তঁাদের অভিযোগ। তঁাদের কখনও চব্বিশ ঘণ্টাও গাড়ি চালানোয় নিযুক্ত থাকতে হয়।

মোদ্দায়, এতরকমের অসুবিধার দায় এই অ‌্যাপগুলিকেই নিতে হবে। পরিষেবা ভাল রাখার জন‌্য, আরও সুগম করার জন‌্য তারা নানাবিধ ব‌্যবস্থা নিতেই পারে, কিন্তু তাতে দিনের শেষে খুব সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কি আদৌ? ট‌‌্যাক্সির পরিস্থিতি অ‌্যাপ ক‌্যাবে বদলাল কোথায়? শহরে, বিপদে-আপদে মানুষের নির্ভরশীলতা তৈরি করতে কি আদৌ পারল এই একডাকেই বাহন মেলার পরিষেবা?

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন