আইপিএল ট্রফি হাতে কেকেআরের থিঙ্কট্যাঙ্ক। ছবি: সোশাল মিডিয়া।
রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়, চেন্নাই: ভেঙ্কটেশ আইয়ার মানুষটা বরাবরই বেশ ‘স্টাইলিশ’। কী ব্যাটিংয়ে, কী চরিত্রে। আইপিএল (IPL 2024) ফাইনালের মতো মেগামঞ্চে জয়ের রান নিলে যে কেউ সম্পূর্ণ প্রচার নিজে নিতে চাইবে। অবিরাম লম্ফঝম্ফে মিডিয়ার সার্চলাইট নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতে চাইবে! ভেঙ্কটেশকে দেখা গেল, জয়ের রানটা নেওয়া মাত্র পুরো টিমকে হাত দিয়ে ডেকে মাঠ ছেড়ে দিতে! যেন বলতে চাইছেন, এসো, তোমরা এবার সবাই চলে এসো। এ মাঠ, এ ইতিহাসের পিচ, এখন সব তোমাদের!
রীতিমতো ওঁত পেতে আন্দ্রে রাসেলরা যে আহ্বানের অপেক্ষা করছিলেন দীর্ঘক্ষণ। খেলা যখন প্রায় শেষের দিকে, গোটা কয়েক মাত্র রান বাকি, রাসেল হাঁকডাক জুড়ে দেন মাঠের দুই আইয়ারের উদ্দেশ্যে। ভেঙ্কটেশ ও শ্রেয়সের উদ্দেশ্যে। কী বলতে চাইছিলেন রাসেল, সহজেই অনুমেয়। দ্রুত খেলা শেষ করতে বলছিলেন আর কী। যাক গে, যা লিখছিলাম। পরে রাতের দিকে কথা বলতে এসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের গুণমুগ্ধ ভেঙ্কটেশ বলে গেলেন, ‘‘পুরো কৃতিত্ব আমি দেব অভিষেক নায়ারকে (Abhishek Nayar)। আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন উনি। আমাদের টিমে ভারতীয় ক্রিকেটারদের যে ‘কোর’ গ্রুপ তৈরি হয়েছে, তা অভিষেক নিজের হাতে করেছেন। আমরা দশ-দশটা বছর এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।’’ একা ভেঙ্কটেশ নন। চলতি আইপিএল মরশুম দুর্ধর্ষ গিয়েছে যাঁর, সেই বরুণ চক্রবর্তীও টুপি খুলে সেলাম করে গেলেন অভিষেক নায়ারকে। প্রায় একই কথা বললেন। সব শুনেটুনে অভিষেক নায়ারকে দেখা গেল, প্রবল আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে। বলছিলেন, ‘‘আজ মনে হচ্ছে, সব পেয়ে গিয়েছি। ষোলো বছর ধরে আইপিএলের সঙ্গে ওতঃপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছি আমি। এত দিন লেগে গেল চ্যাম্পিয়ন হতে।’’
কেউ অভিষেক নায়ারের কথা বলছেন। কেউ কেউ আবার গৌতম গম্ভীরের (Gautam Gambhir) কথা । যেমন কেকেআর সহ অধিনায়ক নীতীশ রানা। আবেগঘন গলায় বলছিলেন, ‘‘গৌতি ভাই মেন্টর হওয়ার পর ওঁকে মেসেজ করেছিলাম আমি। লিখেছিলাম, উনি কেকেআরে আসছেন বলে আমি অত্যন্ত খুশি। উত্তরে গৌতি ভাই আমাকে বলেন, উনি খুশি তখনই হবেন যখন আমরা পোডিয়ামে উঠব। আমি গোটা জীবনে ওই মেসেজটা ভুলতে পারব না।’’ রিঙ্কু সিংকেও বলতে শোনা গেল, ‘‘অসামান্য অনুভূতি হচ্ছে। স্বপ্ন সত্যি হল শেষ পর্যন্ত। সাত বছর ধরে কেকেআর খেলছি আমি। কিন্তু ট্রফি পেলাম এই প্রথম। জিজি (গৌতম গম্ভীর) স্যরকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।’’ সমগ্র টুর্নামেন্ট জুড়ে দাপিয়ে খেলা সুনীল নারিনকে বলতে শোনা গেল, ‘‘মাঠে আসতে আসতে আজ ২০১২-র কথা মনে পড়ছিল। আমার কাজ ছিল ম্যাচের পর ম্যাচে দুর্ধর্ষ একটা শুরুর মঞ্চ গড়ে দেওয়া। গম্ভীর আমাকে তাই বলেছিল। বলেছিল, তুমি মাঠে গিয়ে টিমকে জেতানোর চেষ্টা করো। আমার মতে, যা দারুণ পরামর্শ।’’
বাকি নাইটরাও আনন্দের আতিশয্যে ভেসে যাচ্ছেন যে যাঁর মতো। হর্ষিত রানা যেমন কথাই বলতে পারছেন না। স্বরের বদলে তাঁর গলা দিয়ে বিহ্বলতা ছিটকে বেরোচ্ছে। বলছিলেন, ‘‘জানি না কী বলব? এত আনন্দ হচ্ছে যে কিছু বলার ভাষা আমার নেই।’’ কেকেআর অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারও বলে গেলেন, ‘‘বুঝতে পারছি না কী বলব। কত স্মৃতি যে থাকবে আজকের পর থেকে!’’ রহমনুল্লাহ গুরবাজ আবার শোনালেন অসুস্থ মায়ের সঙ্গে তাঁর এদিনকার কথাবার্তা। আফগান কিপার-ব্যাটারের মা এখনও হাসপাতালে রয়েছেন। ‘‘মাঠে আসার আগে এ দিন মায়ের কাছে জানতে চাই, তুমি আমার থেকে কী চাও? মা বললেন, ট্রফিটা জিতে ফিরো,’’ বলছিলেন গুরবাজ। শুনলে মনে হবে, কে বলে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট মাত্র দু’মাসের বন্ধন গ্রন্থি? একান্নবর্তী পরিবারে যে একমাত্র এ জিনিস সম্ভব! এবং মাঠের উৎসবের শেষটাও অবিকল সে ভাবেই হল। একান্নবর্তী পরিবারে যেমন বয়োজ্যেষ্ঠের হাতে প্রথম মাসের মাইনে তুলে দেয় বাড়ির বড় ছেলে, এ দিন সে কাজটাই করলেন শ্রেয়স। শাহরুখ খানের হাতে আইপিএল ট্রফি তুলে দিয়ে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.