দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: তিল তিল করে টাকা সঞ্চয় করেছিলেন কাকা। ক্যানিং বাজারে সেলুনের দোকান চালিয়ে আয়ের টাকা বাড়িতেই রাখতেন তিনি। স্বামীর ঘর ছেড়ে কাকার বাড়িতে থাকা ভাইঝি তা দেখেছিলেন। বছর তিনেক ধরে সেই বাড়িতে থাকার সুবাদে কাকা কোথায়, কত টাকা রাখতেন সবটাই ছিল তাঁর নখদর্পণে। ঘরে কেউ না থাকার সুযোগে মায়ের ‘বয়ফ্রেন্ড’কে নিয়ে এসে চুরি করেন লক্ষাধিক টাকা। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মিথ্যা ডাকাতির গল্প সাজান। তবে তাঁকে আটক করে ‘ডাকাতি’র পর্দা ফাঁস করে পুলিশ।
ক্যানিং বাজারে সেলুন রয়েছে বিমল প্রামাণিকের। তিনি ক্যানিং থানার এক নম্বর দিঘীরপাড় এলাকার বাসিন্দা। সোমবার সন্ধ্যায় দোকানে থাকাকালীন তাঁর কাছে খবর আসে ভাইজি রেখা প্রামাণিককে বেঁধে আলমারি ভেঙে ১০ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছে ‘ডাকাত’। ঘটনার পর ক্যানিং থানার অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিমলবাবু বাড়িতে না থাকলেও তাঁর মা এবং ভাইজি রেখা বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু ডাকাতির সময় বিমলবাবুর মা পাশের মন্দিরে গিয়েছিলেন। বাড়িতে একাই ছিলেন অভিযুক্ত রেখা। তাঁর মুখে ঘটনার বিবরণ শুনে একাধিক অসঙ্গতি পায় পুলিশ। রেখাকে থানায় নিয়ে এসে জেরা শুরু করেন তদন্তকারীরা। প্রথমে তদন্তকারীদের বিপথে চালনা করছিলেন তিনি। তবে লাগাতার পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ে ডাকাতির কথা স্বীকার করে নেন তিনি।
পুলিশকে রেখা জানান, বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে তাঁর মা এবং মায়ের ‘বয়ফ্রেন্ড’কে ডেকে চুরি করিয়েছেন তিনি। তা ধামাচাপা দিতে ডাকাতির মিথ্যা ঘটনা সাজান তাঁরা। জমি কেনার জন্য তাঁরা এই টাকা চুরি করেছেন বলে জানিয়েছেন। এর পরই রেখার কথা মতো ক্যানিং থানার আইসি সৌগত ঘোষের নেতৃত্বে ভাঙরে ঘটকপুকুর এলাকায় একটি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
সেখানেই স্বামীকে ছেড়ে ‘বয়ফ্রেন্ডে’ সঙ্গে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন রেখার মা সারথি প্রামাণিক। রেখার মায়ের ‘বয়ফ্রেন্ড’ নাম বাপি মোল্লা। তিনি আলমারির তালা ভেঙে টাকা চুরি করেন বলে অনুমান পুলিশের। বাপির বিরুদ্ধে আগেও পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ ছিল। ঘটকপুকুরে বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে বাড়ি থেকে খোয়া যাওয়া ১০ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা। এবং ড্রিল মেশিন-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মা সারথি প্রামাণিক, মেয়ে রেখা প্রামানিক ও মায়ের ‘বয়ফ্রেন্ড’ বাপি মোল্লাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.