সুব্রত বিশ্বাস: কাটিহার এক্সপ্রেসে তবলা বাদক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে খুন করে হাওড়া এসেছিল খুনি রাহুল জাঠ! তাকে জেরা করে এমনটাই জানতে পেরেছে ভালসাদ পুলিশ। হাওড়া থেকে ভালসাদে তদন্তে গিয়েছে রেল পুলিশের একটি দল। তাদেরকে এমনটাই জানানো হয়েছে। সেই খবরের সূত্রে ধরে শুক্রবার হাওড়া স্টেশনের সব সিসিটিভি ফুটেজ সারাদিন খতিয়ে দেখেছে রেল পুলিশ।
জানা গিয়েছে, কাটিহার এক্সপ্রেসে খুনের পর হাওড়ার আগের এক স্টেশনে নেমে যায় খুনি। এর পর মালদহ ফিরে যায় অন্য ট্রেন ধরে। ফের সেখানে থেকে অন্য ট্রেনে হাওড়া আসে বলে রেল পুলিশ জানতে পেরেছে। ধৃতকে জেরার পর পুলিশ জানিয়েছে, গত ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ নভেম্বরের মধ্যেই ৫টা খুন করে অভিযুক্ত রাহুল। প্রথম ২০ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশের গোটাতে এক মহিলাকে খুন করে। তার পর ধর্ষণ করে। গুজরাট পুলিশের থেকে এই তথ্য পাওয়ার পর গতকালই ওই মহিলার দেহ উদ্ধার করে অন্ধ্রপ্রদেশ রেল পুলিশ। ধৃত থেকে নিহত মহিলার মোবাইলও মিলেছে।
এর পর দ্বিতীয় খুন করে কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে ট্রেনে এক মহিলাকে, তৃতীয় খুন করে গুজরাটের ১৯ বছরের তরুণীকে, কাটিহার এক্সপ্রেসে খুনটি ছিল চতুর্থ। এবং ২৪ নভেম্বর যেদিন গুজরাটের পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই সেকেন্দ্রবাদে পঞ্চম খুন করে সে। এবারও তার শিকার এক মহিলাকে। এক মাসে তিন মহিলা ও দুই পুরুষকে খুন করে। ধর্ষণ নিশ্চিত করতে বুধবার অভিযুক্তের বীর্ষ পরীক্ষা করায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার খুনিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে ঘটনার পুর্ণনির্মান করানো হয়।
খুন ও ধর্ষণ করাই যে খুনির নেশা তা জানিয়েছে, স্থানীয় স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ। সূত্রের খবর, পাঁচ বছর বয়সে স্কুলছুট। দশ বছর থেকে সাইকেল চুরির মতো ছোটোখাটো চুরি। এর পর বাড়ি থেকে রাহুলকে বের করে দেয় পরিবারের লোকজন। ময়লা সাফাই ও মাঝে মধ্যে গাড়ি চালালেও অপরাধ তার পিছু ছাড়েনি। খুন ও ধর্ষণের নেশা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। পরে পায়ের বড়সড় ক্ষতি হওয়ায় দিব্যাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত কামরাতে সহজেই ভ্রমণের সুযোগ পেত খুনি। এভাবেই সারাদেশ ঘুরে বেরিয়ে ট্রেনেই অপরাধ চালাচ্ছিল সে। এই ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত জিআরপি তাকে হেফাজতে নিয়ে ভালসাদে পৌঁছেছে। তবলা বাদক খুনে হাওড়া জিআরপি সেখানে গেলেও হেফাজতে পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জিআরপি সূত্রে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার কাটিহার এক্সপ্রেসের আপার বার্থ থেকে বালির তবলা শিক্ষক সৌমিত্রবাবুর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। হাওড়া কারশেডে ট্রেন সাফাইয়ের সময় চাদর মোড়া দেহ দেখতে পান সাফাইকর্মীরা। সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের বিভিন্ন ট্রেনে এমন ধরনের অপরাধে নানা রাজ্যের রেল পুলিশ তটস্থ ছিল। পর পর খুনে গুজরাটের ভালসাদ পুলিশ ও রেল পুলিশ বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তদন্ত শুরু করে। পাঁচ রাজ্যের এক হাজারের মতো সিসিটিভি খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। সাত হাজারের মতো যাত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন পুলিশ কর্তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, লম্বা এক ব্যক্তি, যার পায়ে সমস্যা, সে ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছে। প্রতিটি সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে দেখা গিয়েছে, খুনের পর চাদর মুড়ে রাখা হয় খুন হওয়া যাত্রীকে। ধৃতের কাছ থেকে বেশ কিছু চাদরও পাওয়া গিয়েছে, যা খুন হওয়া যাত্রীদের গায়ে জড়ানো ছিল। বালির শিক্ষকের দেহেও চাদর জড়ানো ছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.