স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান: প্রত্যাশা মতোই বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বদল করা হল। নতুন দায়িত্ব পেলেন স্মৃতিকণা বসু। স্নাতকোত্তর স্মৃতিকণা আগে দলের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। মহিলা মোর্চার দায়িত্বও সামলেছেন। কাটোয়া সাংগঠনিক জেলায় বিজেপি এই প্রথম কোনও মহিলাকে সভাপতির পদে বসাল।
কিন্তু স্মৃতিকণাকে জেলা সভাপতি করা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন আদি বিজেপি নেতাকর্মীরা। সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন তাঁরা। এমনকী সামনের বিধানসভা নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে দাবি তাঁদের। কামিনী-কাঞ্চনভোগী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘আর নয় অন্যায়’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলনের বার্তা দিচ্ছে দলেরই একাংশ। তাঁরা তিন রাজ্য নেতা সুকান্ত মজুমদার, অমিতাভ চক্রবর্তী, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও কেন্দ্রীয় নেতা অমিত মালব্যকে নিশানা করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে অনেক কুরুচিকর পোস্টও হচ্ছে রাজ্য নেতৃত্ব ও নয়া সভাপতিকে নিয়ে।
স্মৃতিকণা মেমারি শহরের বাসিন্দা। পরিবারের কেউ সক্রিয় রাজনীতি করেননি। বিজেপির আদর্শ ও ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়েই প্রথম রাজনীতিতে এসেছিলেন তিনি। ২০১০ সালে দলের সদস্য হিসেবে যোগদান করেছিলেন। এরপর বিজেপি তাঁকে মণ্ডল সভাপতির দায়িত্ব দেয়। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেমারি এলাকায় মণ্ডল সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়ের মধ্যেই ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় তাঁকে মণ্ডল ইনচার্জ করা হয়। পরে ২০১৮ সালে বিজেপির তৎকালীন বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীর সময়ে তিনি বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। এরপর কিছুদিন কোনও পদ না থাকলেও দলের সাধারণ সদস্য ছিলেন তিনি।
পরে নতুন জেলা সভাপতি অভিজিৎ তায়ের সময় ২০২২ সালে তিনি জেলার সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। গত পুরসভা নির্বাচনের সময় মেমারি পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোট লড়ে ছিলেন তিনি। পরে সাংগঠনিকভাবে মেমারি কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত হয়। জেলা ভাগ হওয়ার পর ২০২৩ সাল থেকে তিনি কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এবার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
বিগত কয়েকটি নির্বাচনে কাটোয়া সাংগঠনিক জেলায় বিজেপির শোচনীয় ফল হয়েছে। এই সাংগঠনিক জেলার চারটি পুরসভার মধ্যে কোনওটিই দখল করতে পারেনি বিজেপি। গত বিধানসভা নির্বাচনেও সাতটি আসনের সব কটিতেই হারের মুখ দেখতে হয় গেরুয়া শিবিরকে। গত লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রে বিপুল ভোটে হেরেছে বিজেপি প্রার্থী। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ভরাডুবি হয়েছে। কয়েকটি আসনে জয়ী হয়েছে।
গোদের উপর বিষফোঁড়া দলের গোষ্ঠী কোন্দল। নয়া সভাপতিকে নিয়ে একটা বড় অংশ ক্ষুব্ধ। এই পরিস্থিতিতে ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে নতুন সভাপতি দলের হাল আদৌ ফেরাতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলবে। তবে হাল ছাড়ার পাত্রী নন বিজেপির এই মহিলা নেত্রী। সোমবার তিনি বলেন, “বিজেপি একটি পরিবার। একই পরিবারে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত থাকবে। তবে দলে এমন লোকও থাকতে পারে যাঁরা তৃণমূল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই ধরনের মন্তব্য করছেন। শাসক দল তাদের বিভিন্নভাবে দলবিরুদ্ধ মত প্রকাশ করার জন্য প্রভাবিত করছে।”
এর আগে এখানকার সভাপতি ছিলেন গোপাল চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণ ঘোষ। তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন নতুন সভাপতিকে। কিন্তু নীচুতলার ও আদি বিজেপির একটা বড় অংশ নতুন সভাপতিকে নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সামাজিক মাধ্যমে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.