Advertisement
Advertisement

Breaking News

Lok Sabha Election Result 2024

এথিক্স কমিটিতে ‘বহিষ্কার’ ফিরল ‘পুরস্কার’ হয়ে, লড়াই করে সংসদের রুদ্ধপথ খুললেন মহুয়া

জনতার দরবারে ধুয়ে মুছে সাফ হল 'দেশদ্রোহী'র ছাপ্পা।।

Lok Sabha Election Result 2024: Mahua Moitra win Lok Sabha election from krishnanagar
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:June 4, 2024 4:06 pm
  • Updated:June 4, 2024 5:51 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘বহিষ্কার’ যেন ফিরল ‘পুরস্কার’ হয়ে! অভিযোগের কাঁটা বিছানো রুদ্ধপথে এখন মহুয়া-সুবাস। অনুযোগের গলিপথ নয়। লড়াই করে জনতার রায়েই ফের সংসদের রাজপথ ধরলেন মহুয়া মৈত্র।

পাশে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তৃণমূল পরিবার। রাজ্যের মানুষ। আর সুকান্ত ভট্টাচার্য (Sukanta Bhattacharya)। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর অপমানিত-লাঞ্ছিত হয়ে যখন সংবিধানের মন্দির ছাড়তে হল মহুয়াকে (Mahua Moitra), তখন কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন সুকান্ত-পঙক্তি। বলেছিলেন, ‘আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই, স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই’। তা তুলেছেন বটে! ঘৃণার বিরুদ্ধে, মিথ্যের বিরুদ্ধে, বিদ্বেষের বিরুদ্ধে, দম্ভের বিরুদ্ধে মানবিকতার অগ্নিশুদ্ধির যে শপথ নিয়েছিলেন, অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করেছেন।

Advertisement

মহুয়া কি শুধু ভোটের লড়াই লড়েছেন? বহিরঙ্গে সেটুকুই। কেন্দ্র কৃষ্ণনগর (Krishnanagar)। প্রতিপক্ষ ছিলেন বিজেপির অমৃতা রায় (Amrita Roy) । মেঘনাদের মতোই আড়াল থেকে সে লড়াইয়ে শক্তি জুগিয়েছে বিজেপির তুখোড় ভোট মেশিনারি। সে লড়াইয়ে মহুয়া তো প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেইছেন। তবে, মহুয়ার এবারের লড়াই ছুঁয়ে ফেলেছিল অন্য মাত্রা। সে লড়াই গণতন্ত্রের। প্রশ্ন করার অধিকার বজায় থাকার। ক্ষমতার দিকে আঙুল তোলার স্পর্ধার লড়াই। আর ব্যক্তিগত ভাবে মহুয়ার কাছে এ লড়াই ছিল মর্যাদার। আত্মপ্রতিষ্ঠার।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মতার গ্যারান্টি আর অভিষেকের পরিশ্রমেই ‘এভারগ্রিন’ বাংলা]

নরেন্দ্র মোদি (Narendra  Modi) এবং গৌতম আদানিকে (Gautam Adani) নিয়ে লোকসভায় বড় প্রশ্ন তুলেছিলেন মহুয়া। তারপর কী কী হয়েছে গোটা দেশ তার সাক্ষী থেকেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি নাকি টাকা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। আরও অভিযোগ ছিল যে, তিনি সংসদের ওয়েবসাইটের লগ-ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দর্শনের অফিসকে দিয়েছিলেন। পাসওয়ার্ড দেওয়ার অভিযোগ মহুয়া অস্বীকার করেননি। তবে টাকা নিয়ে প্রশ্নের সম্ভাবনা হেলায় উড়িয়ে ছিলেন। তবু সংসদের এথিক্স কমিটি (Ethics committee) বহিষ্কার করে তাঁকে। বহিষ্কারের পর মহুয়া বলেছিলেন, ফিরে আসবেন। এলেন। জনতার দরবারে ধুয়ে মুছে সাফ হল ‘দেশদ্রোহী’র ছাপ্পা।

বহিষ্কারের সময় মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইন্ডিয়া জোটের তাবড় নেতারা। আর তাঁর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কৃষ্ণনগর আসন থেকে ফের তাঁকেই প্রার্থী করবে দল। ব্রিগেডের (Brigade) সভায় মহুয়ার নাম ঘোষণা হতেই শোনা গিয়েছিল ‘জনগর্জন’। তবে একটা সভায় জনতার উচ্ছ্বাস ও লোকসভার লড়াই এক নয়, তা মহুয়া ভালো করেই জানতেন। আর তাই সে লড়াইয়ের প্রস্তুতি তিনি নিয়েছিলেন বেশ ভালো করেই। আক্ষরিক অর্থেই তৃণমূল স্তর থেকে জারি ছিল মহুয়ার সংগ্রাম।

ভোটের অঙ্কের সম্ভাব্য সকল হিসাবই মহুয়া আগেভাগেই কষে নিয়েছিলেন। মার্কিন সংস্থা জে পি মরগানের উচ্চপদ ছেড়ে রাহুল গান্ধীর ‘আম আদমি কা সিপাহি’ থেকে মমতার সৈনিক হওয়া মহুয়া এবারের ভোট(Lok Sabha Election Result 2024) লড়াইয়ে নেমে ভাল মতোই বুঝতে পেরেছিলেন, গতবারের থেকে এবারের লড়াই অনেকটাই আলাদা। পাঁচ বছরে মেরুকরণের রাজনীতি আরও শিকড় ছড়িয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় হিন্দুদের মধ্যে সিএএ বড় প্রভাব ফেলেছিল। রাম মন্দির ও মোদি হাওয়া তো ছিলই। তাঁর সঙ্গে জুড়েছিল রাজ্য সরকারের শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে রেশন, কয়লা, গরু পাচারের মতো ইস্যু। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু থেকেই ‘ফণা’ তুলে ছিল। যা বিপদ বাড়িয়েছিল ‘ঠোঁটকাটা’ মহুয়ার।

শোনা যেত যে, শুরু থেকেই স্থানীয় স্তরে দলের একটা অংশ নাকি তাঁর বিরুদ্ধে। এদিকে কৃষ্ণনগর (Krishnanagar) শহর বরাবরই বিজেপির শক্ত জায়গা বলেই পরিচিত। কৃষ্ণনগর দক্ষিণ ও উত্তর বিধানসভা চাপে রেখেছিল যথেষ্ট। উনিশের তৃণমূলের মূল ভরসার জায়গা ছিল চাপড়া, পলাশিপাড়া, নাকাশিপাড়া ও কালীগঞ্জ বিধানসভা। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিধানসভাগুলিতে ভালো লিড পেয়েছেন কিন্তু এবার এই বিধানসভাগুলিতেও সমস্যা ছিল। পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এখন জেলে। তেহট্ট, চাপড়ায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মহুয়ার কপালে ভাঁজ ফেলেছিল।

[আরও পড়ুন: জুতো বদলে ট্রেন্ড বদল! ভোটগণনায় পিছিয়ে যেতেই চটি ছেড়ে জুতোয় পা পুরুলিয়ার বিজেপি প্রার্থী]

বিজেপি প্রার্থী রাজ পরিবারের সদস্যা অমৃতা রায়ও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল মহুয়ার কাছে। কৃষ্ণচন্দ্রের আবেগ বড় প্রভাব ফেলেছিল কৃষ্ণনাগরিকদের মধ্যে। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো জাঁকিয়ে বসেছিলেন সিপিএমের এস এম সাদি (S. M. Sadi) । তিনি যে বেশ ভোট কাটবেন, তার আভাস আগেই ছিল। এদিকে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা (Amit Shah) যত হিন্দুত্ব, সিএএ (CAA), একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে আক্রমণ করেছেন, ততই ৩৭ শতাংশ মুসলিম ভোট তৃণমূলে আশ্রয় খুঁজেছে। সঙ্গে রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো সামাজিক প্রকল্পের সরাসরি সুবিধা পেয়েছেন তিনি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মহুয়ার নিজস্ব লড়াকু মনোভাব। ভোটের যুদ্ধে নেমে আগেও দেখিয়েছেন, এবারও বুঝিয়েছেন যে, তিনি যুদ্ধটা যুদ্ধের নিয়ম মেনেই করতে জানেন। সে যুদ্ধের প্রথম ও প্রধান শর্ত জনতার সমর্থন। ভোটের যাবতীয় অঙ্ককে স্বীকার করেও মহুয়া তা আদায় করে নিতে পেরেছেন নিজস্ব দক্ষতায়। অতএব যে বিজয়আবির আজ কৃষ্ণনগরের বাতাসে, আদতে তা মহুয়ার বিজয়পতাকাই। গণতন্ত্রেরও। মহুয়ার সঙ্গেই যেন জিতে গেল গণতন্ত্রে প্রশ্ন তোলার অধিকারও।

সংসদের সিলেবাসে মহুয়া অভিজ্ঞ। চমৎকার আলোচনায় ফালাফালা করে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে। প্রশ্ন করতে পারেন আরও চমৎকার। সবথেকে বড় কথা, মহুয়া নির্ভীক। অতএব সংসদে তিনি ফিরে আসার অর্থ জাতীয় রাজনীতিতে (National Politics)  বিজেপি-বিরোধী লড়াই আরও ধারাল হল তৃণমূলের (TMC)। আগামী দিনে সংসদে মহুয়া-ঝড়ের দিকেই তাকিয়ে থাকবে গোটা দেশ। একদা সংসদের এথিক্স কমিটি তাঁকে এক্সিটের রাস্তা দেখিয়েছিল। জনতার ‘এথিক্স কমিটি’কে পাশে পেয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে ফের এন্ট্রি নিয়ে মহুয়া যেন বুঝিয়ে দিলেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়…।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ