কৃষ্ণকুমার দাস: চা-প্রেমী বাঙালির জন্য বড় দুঃসংবাদ! কারণ তার বিবিধ। প্রথমত, চায়ের দাম কেজিতে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, নিম্নমানের ‘নেপালি চা’ গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে ‘দার্জিলিং চা’ নাম নিয়ে বাজারে ঢুকে পড়ছে। আবার ঘুরপথে অসমের চা-ও বাংলায় প্রবেশ করছে। আর এই ত্রিফলায় চা প্রেমীদের স্বাদে বিস্বাদ ঠেকছে। তরাই-ডুয়ার্সের চা বাণিজ্যিকভাবে পিছিয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। নতুন বছরে খোলাবাজারে খুচরো বিক্রেতারাও বেশি দামে ‘ভালো চা’ বিক্রি করতে বাধ্য হবেন বলে ‘চা উন্নয়ন পর্ষদ’ সূত্রে খবর। তবে খোলাবাজারে আরও অনেকটাই দাম বাড়বে বলেই সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে।
একদিকে, আবহাওয়ার কারণে চায়ের উৎপাদন চলতি বছরে প্রায় ৭ লক্ষ কেজি কম হওয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। অন্যদিকে নেপালের কীটনাশক স্প্রে দিয়ে উৎপাদন করা ক্ষতিকারক ও নিম্নমানের চা গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে রাজ্যে ঢুকে ‘দার্জিলিং চা’ লেবেল লাগিয়ে বিক্রি হচ্ছে। বস্তুত সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নকল ‘দার্জিলিং চা’য়ের অনুপ্রবেশ রুখতে তড়িঘড়ি ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলা সীমান্তে কোচবিহার ও পানিট্যাঙ্কিতে দুটি বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি বসাচ্ছে রাজ্য সরকার। ল্যাবরেটরিগুলি হবে FSSAI-এর অনুমোদন মেনে। নেপাল ও অসম থেকে কোনও ‘নকল চা’ সীমান্ত পেরিয়ে ঢোকামাত্রই ওই দুই ল্যাবরেটরিতে মাত্র আধঘণ্টা পরীক্ষা করেই জানা যাবে, কোনটি আসল দার্জিলিং চা। মাত্র কিছুদিন আগে দার্জিলিং সফরে দিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী গোপনে নেপাল থেকে ‘কীটনাশক দেওয়া চা’ ঢুকে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
আর তারপরই শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের নেতৃত্বে চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহলকে নিয়ে বৈঠক করে রাজ্য সরকার। চা শ্রমিকদের কথা বলতে এগিয়ে আসেন তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত ভট্টাচার্য ও চা শিল্পের বিশেষজ্ঞরা। আর তার পরই শ্রমমন্ত্রীর উদ্যোগে দুই সীমান্তে দু’টি ল্যাবরেটরি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। চা শিল্পে যুক্ত তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের অভিযোগ, “নেপালি ভুয়া চায়ের আগ্রাসনের খবর কেন্দ্রীয় সরকার জেনেও চুপ করে বসে আছে। আর লোকসানের ঠেলায় দার্জিলিংয়ে ৮৭টি বাগানের মধ্যে ১৬-১৭টি গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” নতুন দুটি ল্যাবরেটরি বসানোর সিদ্ধান্তকে এদিন স্বাগত জানিয়েছেন সিআইএসটিএ সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী।
কিন্তু সাধারণ চা-প্রেমীদের জন্য চরম দুঃসংবাদ হল, উৎপাদন কম হওয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে চায়ের দাম বাড়ছে। চা শিল্প উন্নয়ন পরিষদ সূত্রে খবর, ২০২২ সালে যেখানে ৪১.৪ লক্ষ কেজি, ২০২৩ সালে ৪৩.৩ লক্ষ কেজি এবং এবছর অক্টোবর মাস পর্যন্ত মাত্র ৩১.৬ লক্ষ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। স্বভাবতই ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্য সরকারের অনুমান, আবহাওয়ার কারণে প্রায় সাত লক্ষ কেজি উৎপাদন কম হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে একশ্রেণির অসাধু চা ব্যবসায়ী। বিশেষ করে নামী দু-তিনটি চা কোম্পানি এবছর রাজ্যে উৎপাদন কম হওয়ার সুযোগ নিয়ে ‘প্যাকেজিং’ করে পণ্য করার ক্ষেত্রে আরও দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে রাজ্য সরকারের কাছে খবর এসেছে। দেশের অন্যতম ‘ভেষজ চা’ প্রস্তুতকারক সংস্থার অন্যতম শীর্ষকর্তা ইন্দ্রনীল ঘোষ এদিন স্বীকার করেছেন, “ইতিমধ্যে চায়ের দাম অকশন করার ক্ষেত্রে যেমন বেড়েছে, তেমনই খোলা বাজারেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন বছরের শুরুতে এই দাম আরও বাড়বে।” চা উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রে খবর, ২০২২ সালে যেখানে অকশনে কেজি প্রতি চায়ের দাম ছিল ১৭৭.২৭ টাকা, ২০২৩ সালে ১৬৪.১৬ টাকা। এবছর নভেম্বর শুরুতে ১৯০.৬৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে সেই দাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.