Advertisement
Advertisement
Jaynagarer Moa

চাহিদার জেরে ‘নকলে’ ভরছে বাজার, জয়নগরের মোয়ার ব্যবসায় মন্দা! কী বলছেন বিক্রেতারা?

২০১৫ সালে জয়নগরের মোয়া জিআই ট্যাগ পায়।

Current status of Jaynagarer Moa Business

ছবি: পিন্টু প্রধান।

Published by: Subhankar Patra
  • Posted:December 7, 2024 5:52 pm
  • Updated:December 7, 2024 7:03 pm  

শুভঙ্কর পাত্র: রাতের ট্রেন। কামরায় বেশ ভিড়। শীতের দাপুটে হাওয়ায় বন্ধ জানলা। হঠাৎ হাতে একটি রঙিন বাক্স নিয়ে এক ব্যক্তির চিৎকার, “দাদা এনেছি জয়নগরের মোয়া। খেলেই যাবেন গোয়া। না খেলে আমার কিছুই যাবে না খোয়া।” পাশ থেকে এক যাত্রীর বিড়বিড় করে বলে চললেন, “সত্যি তো, শীতে জয়নগরের মোয়ার কোনও বিকল্প নেই।” এক ক্রেতা আবার বলে উঠলেন, দাদা অরিজিলান তো? হ্যাঁ, এমন প্রশ্ন অনেক মোয়াপ্রেমীর মনেই উঁকি মারে। সেই উত্তরের খোঁজেই ঢুঁ মারতে হল মোয়ার জন্মভূমি জয়নগরে।

২০১৫ সালে জিআই ট্যাগ পায় জয়নগরের মোয়া। তবে শুরুটা অনেককাল আগে। কথিত আছে, শ্রীচৈতন্যদেবের সময়কালে জয়নগর সংলগ্ন বহড়ু গ্রামে যামিনীবুড়ো নিজের জমিতে কনকচূড় ধান চাষ করেন। সেই খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড় মিশিয়ে তৈরি করেন মোয়া। তা পরিবেশন করেন এক অনুষ্ঠানে। এর পরই লোকমুখে জনপ্রিয়তা লাভ করে বহড়ুর মোয়া। যামিনীবাবুর মোয়ায় খই ও নলেন গুড় ব্যতীত আর বিশেষ কিছু ছিল না। এই মোয়াকেই পরবর্তীকালে নতুন রূপে ও স্বাদে প্রস্তুত করেন পূর্ণচন্দ্র ঘোষ (বুঁচকিবাবু) ও নিত্যগোপাল সরকার। সেইসময় প্রাচীন জনপদ বহড়ুতে কোনও বাজার ছিল না। কাজেই মোয়া প্রস্তুতকারকদের তা বিক্রি করতে যেত হত জয়নগরের হাটে। সেই থেকেই জয়নগরের মোয়ার নাম ছড়িয়ে পড়ে।

Current status of Jaynagarer Moa Business
তৈরি হচ্ছে মোয়া। ছবি: পিন্টু প্রধান।

শীতের শুরুতে খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড় বাজারে আসতেই শুরু হয় মোয়া তৈরির কাজ। প্রস্তুতকারকরা খোয়াক্ষীর, পেস্তা, কাজুবাদাম দিয়ে তৈরি করেন মোয়া। তবে সবাই এক বাক্যে মেনে নেন জাঁকিয়ে শীত না পড়লে ভালো গুড় পাওয়া যাবে না। ফলে মোয়ার গুণগতমানও ভালো হবে না।

তিনপুরুষ ধরে মোয়ার ব্যবসা করা জয়নগরের অন্নপূর্ণা মিষ্ঠান্ন ভাণ্ডারের বর্তমান মালিক অভিজিৎ দাস বলেন, “মোয়ার বিষয়টা শীতের উপর নির্ভর করে। আমরা এখন তৈরি করা শুরু করেছি বটে, কিন্তু নলেন গুড় বাজারে না আসলে মোয়ার সেই স্বাদটা পাওয়া যাবে না। যা নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর। আমাদের তৈরি মোয়া এবার বাজারে ছাড়া হবে।” তাহলে ট্রেনে, বাজারে জয়নগরের বলে যে মোয়া বিক্রি হচ্ছে তা কি আসল নয়? বিষয়টি তেমন নয় বলে অভিজিৎবাবু জানালেন, “এখন বাজারে অনেক মোয়ার দোকান। তৈরিও হচ্ছে। তবে তার স্বাদ খুব ভালো হবে না। এইটুকু বলতে পারি।”

Current status of Jaynagarer Moa Business
ছবি: পিন্টু প্রধান।

এই সূত্র ধরে বললে বাজারে মোয়ার চাহিদা ভালোই। অভিজিৎবাবুর কথায়, “বাজারে এখন অনেক প্রতিযোগিতা। চাহিদা মেটাতে অনেকেই এই ব্যবসায় নামছে। ফলে আমাদের ব্যবসায় গতি তেমন নেই। তাছাড়া আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা প্রভাব ফেলছে। করোনা পরবর্তীকালে ব্যবসা অনেকটা কমেছে। আগে এই সময়টা প্রায় ৮ কুইন্টাল মোয়া বিক্রি হয়ে যেত। এখন তা ২ কুইন্টালে গিয়ে ঠেকেছে।”

অনেক দোকান। প্রতিযোগিতাও প্রচুর। সব মোয়া জয়নগরের কি না, তা নিয়ে তাই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে মুখে দিলে বাঙালি সঠিক স্বাদের মোয়াই বেছে নেবেন বলে আশাবাদী জয়নগরের ব্যবসায়ীরা। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
News Hub