Advertisement
Advertisement
Bonedi Barir Durga Puja

৯ বার গর্জে উঠল কামান, মন্দিরে এলেন ‘বড়ঠাকুরানি’, শুরু মল্লরাজদের পুজো

১০২৮ বছরের প্রাচীন এই পুজোয় অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে রাজ প্রথা মেনে উগ্রচণ্ডা বিশালাক্ষীর পুজো করা হয়।

Bonedi Barir Durga Puja: The Durga Puja of Mallaraj begins in Bishnupur
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:September 26, 2024 9:19 pm
  • Updated:September 27, 2024 3:59 pm  

অসিত রজক, বিষ্ণুপুর: বৃহস্পতিবার সকালে শহর কাঁপিয়ে পর পর ৯ বার তোপের শব্দ। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ পরিবারে ব্যস্ততা চরমে । না কোনও অঘটন না। অকাল বোধনের আগেই শুরু হল পুজো(Bonedi Barir Durga Puja)। আদ্রা নক্ষত্র যোগে নব্যমাদিকল্পে ‘বড়ঠাকুরানি’কে মন্দিরে আনা হল। তাঁর আগমনকে স্বাগত জানানো হয় ৩টি তোপধ্বনির মাধ্যমে। এর পর গোপাল সায়রের ঘাটে দেবীর শুদ্ধাচারের পর প্রবেশ করলেন রাজদরবার সংলগ্ন মৃণ্ময়ীর মন্দিরে। মন্দিরের অদূরে তখনও ৩ বার গর্জে উঠল কামান। সেখানেই দেবীকে অন্নভোগ নিবেদন করলেন রাজ পরিবারের কুলপুরোহিত। ফের ৩ বার গর্জে উঠল মল্লরাজদের ঐতিহ্যের তোপ।

বুধবার জিতাষ্টমীর সন্ধ্যায় রাজ পরিবারের পুজো শুরুকে দেবী মৃণ্ময়ীর বিল্ল-বরণের মাধ্যমে। ওইদিন মায়ের বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস সম্পূর্ণ হয়েছে। হাজার বছরের প্রাচীন এই মৃণ্ময়ী দেবীর শারদীয়া অকাল বোধনের পর বিষ্ণুপুরে শুরু হয়ে গেল পুজো। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুপুরের ১৯ তম মল্লরাজ জগৎমল্ল জিতাষ্টমী তিথিতে পিতৃপক্ষেই শুরু করেছিলেন রাজ পরিবারের আরাধ্য দেবী মৃণ্ময়ীর এই শারদীয়া পুজো। পরম্পরার সেই ধারাবাহিকতা আজও অপরিবর্তিত। দুর্গা সপ্তমীর সকালে মন্দিরে প্রবেশ করবেন পটের দেবী মহালক্ষ্ণী বা মেজঠাকুরানি ও মহাসরস্বতী বা ছোটঠাকুরানি। সেই সময় ফের সেই তোপে আগুন দেওয়া হবে।

Advertisement

কথিত রয়েছে জঙ্গলাকীর্ণ বিষ্ণুপুরে বর্তমান মৃণ্ময়ী মন্দিরের কাছে শিকার করতে এসেছিলেন মহারাজা জগৎমল্ল। তখন কিছু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন তিনি। এর পর দেবী মৃণ্ময়ীর স্বপ্নাদেশ পান মহারাজ। কথিত দেবী রাজাকে জানান, যেখানে তিনি শিকার করতে গিয়েছেন ওই জায়গাতেই রয়েছেন তিনি। সেখানে মন্দির নির্মাণ করে নিয়মিত পুজো করার নির্দেশ পান জগৎমল্ল। এর পরই মহারাজ ওই মন্দির নির্মাণ করানোর পাশাপাশি গঙ্গামাটির তৈরি মৃণ্ময়ীর মূর্তিটি তৈরি করিয়ে প্রতিষ্ঠা করান। তখন থেকেই দেবী মৃণ্ময়ীই হয়ে ওঠেন মল্লরাজ পরিবারের কুলদেবী।

১০২৮ বছরের প্রাচীন এই দেবীমূর্তির সারাবছর পুজো হলেও। আশ্বিনের পিতৃপক্ষে জিতাষ্টমীতে শুরু হয় অকালবোধন শারদীয়া পুজো। রাজ পরিবারের নিয়মে যা চলে টানা ১৫ দিন, দশমী পর্যন্ত। রাজ পরিবারের আরও এক রীতি অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দরবার সংলগ্ন মুর্চার পাহাড়ে ৩ বার বড় কামান দাগা। বংশ পরম্পরায় ধরে সেই ধারা এখনও চলে আসছে। ওই অষ্টমীতেই দেবীর মন্দিরে আনা হয় পরিবারের প্রাচীন অষ্টধাতুর বিশালাক্ষী বা মা উগ্রচণ্ডার মূর্তি।

অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে রাজ প্রথা মেনে উগ্রচণ্ডা বিশালাক্ষীকে ‘স্বর্ণচাঁপা’ দয়ে ‘রজ অঞ্জলি’ দেওয়া হয়। সেই অঞ্জলি দেওয়াটাও শুধুমাত্র বর্তমানে বংশের বড়দের পুরুষদের অধিকার। ওই রাতেই মন্দিরের অন্দরে হয় মহামারির দেবী খচ্চরবাহিনীর পুজো। নিঝুম অন্ধকারে শুধুমাত্র একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে সেই পুজো হয়। ওই পুজো দেখার অনুমতি কারও নেই। পুরোহিত নিজেও দেবীর দিকে পিছন ফিরে পুজো সমাপন করেন। দশমীতে পটচিত্রের দেবীদের প্রতীকী বিসর্জনের পর দেবী উগ্রচণ্ডার সামনে রামচন্দ্রের পুজো করা হয়। তার পরই অষ্টধাতুর বিশালাক্ষী ফিরে যান রাজবাড়ির অন্দরমহলে।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যপাট হারায় মল্ল রাজপরিবার। কিন্তু আজও পুজো এলেই অতীত ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের টানে রাজ দরবারে ছুটে আসেন রাজ পরিবারের সদস্যরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement