Advertisement
Advertisement

Breaking News

Bonedi Barir Durga Puja 2024

পুজোর বারো দিন আগেই ঘট বসে! আন্দুলের দত্তচৌধুরী বাড়িতে মা দক্ষিণমুখী ‘রাজরাজেশ্বরী’

এই পরিবারে দেবীর বোধন হয় কৃষ্ণনবমী তিথিতে।

Bonedi Barir Durga Puja 2024: Unique Durga Puja ritual of Dutta Chaudhury bari
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:September 19, 2024 9:19 pm
  • Updated:September 20, 2024 12:22 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৪৫৬ বছরে প্রাচীন দুর্গাপুজো। আন্দুলের দত্তচৌধুরী বাড়িতে দুর্গাপুজো (Bonedi Barir Durga Puja 2024) শুরু ১৫৬৮ সালে। জমিদার রামশরণ দত্ত তা চালু করেন। সেই থেকে আজও পরিবারের রীতি রেওয়াজ মেনে পুজো করে আসছেন সদস্যরা। দেবী এখানে ‘রাজরাজেশ্বরী’। এ পরিবারে দেবীর বোধন হয় কৃষ্ণনবমী তিথিতে।

তবে জমিদারির সময়কাল তারও আগের। সময়টা চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ ভাগ। কৌলিক পরিচয় দক্ষিণ রাঢ়ীয় কায়স্থ সমাজভুক্ত ‘বালির দত্ত’ কুলোদ্ভব তেকড়ি দত্ত সরস্বতী নদী তীরবর্তী আন্দুলে আসেন। সেখানেই জমিদারি শুরু করেন। বর্তমানে আন্দুল হাওড়া জেলাধীন হলেও সেই সময় এই জনপদ ছিল মুজঃপরফুর পরগনার অন্তর্ভুক্ত। ক্রমে তেকড়ি ভূস্বামী রূপে প্রভূত উন্নতি করেন। তাঁর জমিদারীর বর্গক্ষেত্র বিচার করে তৎকালীন স্বাধীন বাংলার সুলতান তাঁকে পরগনার রাজস্ব-আদায়কারী রূপে ‘চৌধুরী’ পদে অভিষিক্ত করেন। সেই থেকে তেকড়ির বংশধরদের ‘আন্দুলের দত্তচৌধুরী’ বা ‘আন্দুলের চৌধুরী’ বলে পরিচিত লাভ করেন। রামশরণ দত্ত ছিলেন বংশের ষষ্ঠ জমিদার।

Advertisement

দেবী এখানে মৃন্ময়মূর্তিতে দশভুজা, মহিষমর্দিনী। তিনি দক্ষিণা অর্থাৎ দক্ষিণমুখী। দেবী সরস্বতী,কার্ত্তিক, লক্ষ্মী ও গণেশ-সহ টানাচৌড়ি চালচ্চিত্রে মৃত্তিকার বেদির উপর পূজিতা হন। কুলদেবতা রাজরাজেশ্বর নারায়ণের ভগিনী রূপে এখানে দেবী ‘রাজরাজেশ্বরী’।

মৌজা মহিয়াড়ীর প্রশস্ত অঞ্চল থেকে ব্যাচারাম অধিকারী ও তাঁহার পুত্র সমীর অধীকারী ছিলেন এঁদের জাত পোটো। বর্তমান সময়ে সেই অঞ্চল থেকে অসিত হালদার মূর্তি তৈরি করেন।  দুর্গাদালানেই প্রতিমা নির্মাণকার্য হয়ে থাকে। আগে জগন্নাথদেবের ‘বাহুড়া’ যাত্রার দিন কাঠামো পুজো হত। এখন জন্মাষ্টমীর দিন হয়।

দেবী-সহ সরস্বতীর ও লক্ষ্মীর চালিতে অন্য দেবদেবীর চিত্র আঁকা থাকে। দুর্গার চালিতে থাকেন শ্রীঅনন্ত বিষ্ণুদেব। দেবী সরস্বতীর চালিতে অঙ্কিত থাকে দক্ষিণাকালীকার চিত্র। লক্ষ্মীর চালিতে থাকেন দেবী জগদ্ধাত্রী। এছাড়াও দুর্গার চালির উপর রয়েছেন ধ্যানস্থ মহাদেব। লক্ষ্মীর চালির উপর জয়া। সরস্বতীর চালির উপর বিজয়ার ক্ষুদ্রমূর্ত্তি নিহিত থাকে। লক্ষীর গাত্রবর্ণ তপ্তকাঞ্চন। সরস্বতীর শুভ্র। কার্ত্তিক পীতবর্ণ ও গণেশ গোলাপবর্ণ। লক্ষী ও সরস্বতী পদ্মের উপর দণ্ডায়মান।

এবাড়িতে মূল পুজোর বারো দিন আগে পুজো শুরু। এ পরিবারে দেবীর বোধন হয় কৃষ্ণনবমী তিথীতে। সমাপ্তি ঘটে দুর্গানবমীতে। সপ্তমী, মহাঅষ্টমী এবং মহানবমী এই তিন দিন দেবীর উদ্দেশ্যে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। সপ্তমী ও মহাঅষ্টমীতে খিচুড়ি। এবং মহানবমীতে দেওয়া পোলাও ভোগ। পুরাতন রীতি অনুসরণ করে বর্তমান প্রজন্মদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণের সময় ‘বাবা, রামশরণের কড়াই ধর’ শব্দের উচ্চারণ করা হয়। এর অর্থ এঁদের পূর্ব্বপুরুষ রামশরণের সময়তে পরিবারে যে চরম ক্ষতি হয়ে ছিল, তা পূরণ কর।

মহাঅষ্টমীতে কালো প্রদীপের আরতি দত্ত চৌধুরীদের বিশেষ রীতি। জীবন থেকে অন্ধকার দূর করে আলোকিত করে তোলাই উদ্দেশ্য। ছাগবলি অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার জায়গায় দয়া হয় আঁখ, চালকুমড়া বলি দেওয়া হয়। এবং চালের পিটুলি দিয়া মানুষাকৃতি তৈরী করে ‘শত্রু বলি’ হয়। মহানবমীর দিনে ব্রাহ্মণ ও অব্রাহ্মণ কুমারী পুজোর নিয়ম রয়েছে। দশমীর সন্ধ্যা বেলায় বেদি থেকে নামিয়ে মাকে দুর্গাদালানের সম্মুখে উত্তরমুখী করে রাখা হয়।

এককালে আন্দুল পরিসরে ঝোড়হাট গ্রামের রাজবংশী সম্প্রদায় দেবীমূর্তি নিজেদের কাঁধে করে শোভাযাত্রার সঙ্গে দুলেপাড়া নিয়া যেত। সেখানে দুলে সম্প্রদায়ের বধূরা মাকে বরণ করতেন। এই দুলেরাই এককালে এঁদের ডুলি, পালকাদি বহন করার কাজে নিযুক্ত ছিলেন।বরণের পর দেবীকে চৌধুরীবাড়ি এনে ঠাকুরদালানের সামনে জলাশয়ে নিরঞ্জন করা হত। এখনও সেই জলাশয়েই মায়ের বিসর্জন হয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement