অর্ণব দাস, বারাসত: বছর পাঁচেক হল বাবা-ছেলে মিলে শুরু করেছিলেন রেডিমেড পোশাকের ব্যবসা। অশোকনগরে সেই ব্যবসা ভালোই চলছিল। দশ মাস আগে ছেলের বিয়েও দেওয়া হয়। ইদ ও চৈত্র সেলের মুখে রমরমিয়ে বেড়েছিল পোশাক বিক্রি। বাড়তি লাভের আশায় শুক্রবার হাওড়ার অঙ্কুরহাটির হাটে সেই পোশাক বিক্রি করতে গিয়েই ঘটল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রাণ হারালেন অশোকনগরের ভুরকুণ্ডা পঞ্চায়েতের হিজলিয়ার বাসিন্দা কায়েম আটা এবং তাঁর ছেলে কবীর আটা। বাবার বয়স ৫০ বছর, ছেলে মাত্র ২৫ বছরের। ইদের মুখে একই পরিবারের উপার্জনক্ষম বাবা, ছেলের মৃত্যুর খবরে বিষাদের সুর নেমেছে গ্রামে। মৃত্যু হয়েছে আরও দুই বস্ত্র ব্যবসায়ীর। তাদের নাম আলিল মণ্ডল ও প্রশান্ত পাল। আলিল আটা পরিবারের প্রতিবেশী, আর প্রশান্তর বাড়ি পার্শ্ববর্তী বাণীপুর এলাকায়। এভাবে চারজনকে হারিয়ে শোকাহত পরিবারগুলি।
অশোকনগরের হিজলিয়া এলাকায় অনেকেই রেডিমেড পোশাকের ব্যবসা করেন। সাশ্রয়ের জন্য গ্রামের ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে গাড়ি ভাড়া করেই হাটে যান পোশাক বিক্রি করতে। সপ্তাহের এদিনের হাটে যাওয়ার আগের বৃহস্পতিবার রাত ১১টা পর্যন্ত অর্ডার অনুযায়ী প্যাকিংয়ের কাজ করেছিলেন কবীর। ইদের আগে ব্যবসায়ে লাভের আশায় কাজ সেরে খেয়ে বিশ্রাম না নিয়েই দুটোর সময় পিকআপ ভ্যানে পোশাক বোঝাই করে বাবা কায়েমকে সঙ্গে নিয়ে অঙ্কুরহাটির হাটের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী আলিল-সহ মোট ছ’জন বস্ত্র ব্যবসায়ী। আচমকা বালির নিবেদিতা সেতুতে তাঁদের গাড়ির একটি টায়ার ফেটে চলন্ত গাড়িটি ব্রিজের উপর রেলিংয়ের ধারে এসে হেলে পড়ে। গাড়ির মালপত্রের উপর বসে থাকা ছয়জন ব্রিজ থেকে একেবারে ৪০ ফুট নিচে রাস্তায় পড়ে যান।
ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মোট চারজনের। হাবড়ার বাসিন্দা বাকি ২ জন রাকেশ সাহা, তাঁর বয়স ২৮ বছর। আরেক মৃত শিবম সাহাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কবীরের নববিবাহিত স্ত্রী। একসঙ্গে স্বামী আর ছেলেকে হারিয়ে বুক চাপড়ে কাঁদছেন কবীরের মা। তাঁদের আত্মীয় নুরুল আলম আটা বলেন, “এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবেই পরিচিত ছিল বাবা এবং ছেলে। ইদের আনন্দ করার আগেই শোকের পরিবেশ তৈরি হল পরিবারের। কবীরের নববধূর শোকের কথা ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
আটা পরিবারের প্রতিবেশী মৃত আলিল মণ্ডলের বাড়িতে রয়েছে মা, স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তান। পরিবারের একমাত্র রোজগেরের মৃত্যুর খবরে দিশেহারা মণ্ডল পরিবারের লোকজন। মৃতের দাদা সাইফুল মণ্ডল বলেন, “হাট শেষ করে এদিন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার কথা ছিল ওর। ভাইয়ের উপার্জনেই চলত গোটা সংসারটা। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।” স্থানীয় বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী এনিয়ে জানান, ”অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। পরিবারকে সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই। আমরা পরিবারের পাশে আছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.