সুমিত বিশ্বাস ও অমিতলাল সিং দেও, পুরুলিয়া ও মানবাজার: নো সিগন্যাল…। ওয়াকিটকিতেই ওভার! তবুও পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় আড়শার ধানচাটানি গ্রামের খুরুজারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোবাইল শ্যাডো জোন বুথে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার আগেই ৮০ শতাংশের বেশি ভোট হয়ে গেল। চাপমুক্ত হয়েই ভোটকর্মীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে জমিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারলেন, ডবল ডিমের কারি সহযোগে গরম ভাত। এই ছবিতেই স্পষ্ট অযোধ্যা পাহাড়ের এই দুর্গম বুথেও উৎসবের মেজাজে হয়ে গেল ষষ্ঠ দফা লোকসভা ভোট (2024 Lok Sabha Election)।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদই অযোধ্যা পাহাড়ের (Ayodhya Hill) দুর্গম এই বুথে ভোটকর্মীরা চলে আসেন। দাবদাহেও সন্ধ্যার পর থেকে শীতল হয়ে যায় এই পাহাড়। ফলে ভোটকর্মীদের কোনও সমস্যা হয়নি। এমনকি ম্যালেরিয়া কবলিত এলাকা বলে চিহ্নিত এই পাহাড়ে মশাও ছিল না। এই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার হরপ্রসাদ রজক বলেন, “কোনও কিছুতেই সমস্যা হয়নি। গ্রামের মানুষজনই রাত্রিবেলা ও শনিবার দুপুরে আমাদের রান্না করিয়ে খাইয়েছে। কিন্তু রাতে ঘুম হয়নি।”
আসলে অতীতে যে এই এলাকা ছিল মাওবাদী মুক্তাঞ্চল! তাই জঙ্গল ঘেরা এই এলাকায় একটা আতঙ্ক কাজ করছিল ভোটকর্মীদের। যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনীর (Central Force)হাফ সেকশন সিআইএসএফ ২৫১ / ৫১২ বি জওয়ানরা ছিলেন। সিভিল সেক্টর অফিসার জগৎচন্দ্র নন্দী বলেন, “বুথে কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। শুধু আসতেই ভয় ভয় লেগেছে। ঘন জঙ্গলে হাতি আতঙ্ক। সেইসঙ্গে পাহাড়ি রাস্তায় কষ্ট। এদিন পুলিশ সেক্টর অফিসার, উত্তরবঙ্গের (North Bengal) অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর শম্ভু লামা ওয়াকিটকিতেই দু’ঘণ্টা অন্তর-অন্তর আড়শা থানায় বুথের সার্বিক পরিস্থিতি জানাচ্ছিলেন। ২৯০ ভোটারের মধ্যে সাড়ে বারোটার আগেই ভোট পড়ে ২৪২ জনের। তিনি কখনও বুথ থেকে বেরিয়ে উঁচু জায়গাতে মেসেজ করার চেষ্টা করছিলেন।
প্রিসাইডিং অফিসারের কথায়, “সিগন্যাল না থাকায় ওয়েবকাস্টিং সেভাবে কাজ করেনি। হোয়াটস্যাপ কোনওভাবেই চলছে না। বহু কষ্ট করে উঁচু জায়গায় গিয়ে কোনওভাবে মেসেজ পাঠানো যাচ্ছিল।” ভোটকর্মী ও জওয়ানদের রান্না করে খাওয়ানোর কাজে যুক্ত থাকা শিবনাথ মান্ডি, লক্ষ্মী মান্ডি বলেন, “আগে আমাদের পাহাড় থেকে নেমে এসে রাজপুতিতে ভোট দিতে হতো। কিন্তু এখন বাড়ির সামনে ভোট দিতে পেরে খুশি। আর কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এখন ভয় লাগে না। এখন বন্ধুর মত হয়ে গিয়েছে। তাই জওয়ান থেকে শুরু করে ভোট কর্মীদের রান্না করে খাইয়েছি।” সিআইএসএফ (CISF) জওয়ান রাকেশ কুমার বলেন, “রুটি খেতে অভ্যস্ত আমরা। তবে চাউল ভালোভাবেই খেলাম। খাবার বেশ সুস্বাদু হয়েছিল।” হায়দরাবাদে মোতায়েন থাকা এই বাহিনী তেলেঙ্গানায় ভোটের ডিউটি করে আসার পর হুগলির মগরায় ছিল। সেখানের ভোট সম্পন্ন হওয়ার পর পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের এই ধানচাটানিতে আসেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.