সম্যক খান, মেদিনীপুর: কেউ ভোটে লড়ছে স্রেফ শখে। তাই মনোনয়ন দাখিল করার পর আর আসেননি। বাড়িতেই হয়ত ঘুমোচ্ছেন। কেউ আবার লোকজন না পেয়ে নিজের গাড়ি চালককে সঙ্গে নিয়েই পোস্টার সাঁটাচ্ছেন। কেউ আবার দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে বর্তমান যুগের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী ময়দানে থেমে থাকছেন না এসইউসিআই, আমরা বাঙালি পার্টির মতো ছোটখাটো দলের প্রার্থীরা। নিজেদের সীমিত শক্তি নিয়েই তাঁরা মিছিল মিটিং, পথসভার মধ্যে দিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (2024 Lok Sabha Election) মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে মোট নজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের তালিকায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থী সংখ্যা ৫। বাকি চারজনের মধ্যে একজন আদিবাসী কুড়মী (Kurmi) সমাজের প্রার্থী। একজন ‘আমরা বাঙালি’ দলের প্রার্থী। আর নির্দল হয়ে লড়ছেন দুজন। ঘটনাচক্রে দুজনই আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সন্তোষপুরের বাসিন্দা। একজন সঞ্জীব দে, অপরজন বিশ্বজিৎ দাস। দুজনেই ছোটখাটো ব্যবসা করেন। নির্বাচন কমিশনের তালিকায় ঠিকানা দেখে সহজেই মনে হবে যে তারা যেন এলাকার দুই বন্ধু বা প্রতিবেশী। তবে দুজনের কেউই তা স্বীকার করেননি।
ভোটে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের যুক্তিও অদ্ভুত। সঞ্জীববাবুর কথায়, ”ভোটে একবার দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছিল। মেদিনীপুরের (Medinipur) কিছু বন্ধুবান্ধবও পরামর্শ দিল। শখ মেটানোর জন্যই ভোটে দাঁড়িয়েছি।” তাই মনোনয়ন দাখিলের পর আর তাঁকে দেখা যায়নি। আর বিশ্বজিৎবাবু বলছেন, ”ফল তো কী হবে, তা সকলেরই জানা। রাজনৈতিক দলগুলি যে হারে খরচ করছে, তা করার সাধ্য তো আমাদের নেই। ছোটখাটো ব্যবসা করি। যেটুকু সামর্থ্য আছে, তা দিয়েই নির্বাচনে লড়ব।” তবে দুজনের কাউকেই আর আজ পর্যন্ত মেদিনীপুরে দেখা যায়নি। প্রচার তো দূর অস্ত। মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী তৃনমূলের জুন মালিয়া ও বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালের কাছে প্রচারে পাত্তাই পাচ্ছে না অন্য কোনও দল। দুই প্রার্থীই ব্যক্তিগতভাবে কোটিপতি। আবার তাঁদের হয়ে রাজনৈতিক দলগুলিই প্রচারের যাবতীয় দায়ভার কাঁধে তুলে নিয়েছে।
জুন-অগ্নিমিত্রার তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে আছেন বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী সিপিআইয়ের বিপ্লব ভট্ট। তবে ছোটখাটো দলগুলির মধ্যে প্রচার সবথেকে বেশি চোখে পড়ছে এসইউসিআই প্রার্থীর। প্রায় প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রজুড়েই মিছিল ও পথসভা করে চলেছেন প্রার্থী অনিন্দিতা জানা। সব বিধানসভায় না হলেও মেদিনীপুর সদর, শালবনি ও খড়গপুর গ্রামীণে জোরদার প্রচারে আছেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের প্রার্থী কমলেশ মাহাতো। তিনি আবার ওই সংগঠনের জেলা সভাপতিও। ফলে কুড়মি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে যথেষ্ট প্রচারও আছে তার। অপরদিকে ‘আমরা বাঙালি’ সমাজের প্রার্থী সুকেশচন্দ্র পলমল এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী অঞ্জন মণ্ডলের প্রচার সেভাবে চোখে পড়ছে না।
যেখানে নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা উড়ছে সেখানে সুকেশবাবুর স্বীকারোক্তি, তাঁদের নির্বাচনী খরচের বাজেট সর্বসাকুল্যে ৭০ হাজার টাকা। এতেই যেটুকু হয় আর কি! পেশায় শিক্ষক বহুজন সমাজবাদী পার্টির আবার জেলা সভাপতি অঞ্জনবাবু তো খরচখরচা বেশি করতে না পেরে নিজের গাড়ির চালককে সঙ্গে নিয়েই কিছু এলাকায় দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার সাঁটাচ্ছেন। অঞ্জনবাবুর কথায়, ”দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার লড়াই একা হলেও চালিয়ে যাব। বন্ধুবান্ধবরা কিছু সাহায্য করছেন। ইতিমধ্যে প্রচারে তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে কিছু ঋণও নিতে হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.