ছাটিয়ারে সামাজিক স্বীকৃতি পেল শিশুরা। নিজস্ব চিত্র
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: তাদের ডাকনাম আছে কিন্তু পরিচয় নেই। নেই স্বীকৃতিও। কারণ আদিবাসী সমাজে অনুষ্ঠান করে নাম-পরিচয়ের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এমনই ১৮০ শিশুর নামকরণে ‘ছাটিয়ার’ উৎসব পালিত হল।
রামপুরহাট এক ব্লকের হরিনাথপুর গ্রাম আদিবাসী অধ্যুষিত। আদিবাসী সমাজের রীতি শিশু জন্মের পরে তাদের সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নামকরণ ও নাচগানের অনুষ্ঠান করতে হয়। অনেকটা মুখেভাত বা অন্নপ্রাশনের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান। আদিবাসী সমাজে যার নাম ‘ছাটিয়ার’। হরিনাথপুর গ্রামের এই ১৮০ জন শিশুর সকলেরই একটা ডাকনাম ছিল। কিন্ত তাদের কোনও সামাজিক নাম ছিল না। এদের কারও বাবা আছে, কারও মা নেই। কোনও পরিবারের সকলে থাকলেও তাদের ‘ছাটিয়ার’ করার সামর্থ নেই। কারণ তারা বেশিরভাগই দুঃস্থ। দিন আনি, দিন খাই পরিবার। ফলে আদিবাসীদের সামাজিক অনুষ্ঠানে ‘ছাটিয়ার’হীন শিশুরা যোগ দিতে পারত না।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর উদ্যোগে গ্রামে তিনদিন ধরে অনুষ্ঠান করে তাদের ‘সামাজিক’ করা হল। তিনদিন ধরে গ্রামে অনুষ্ঠান শেষে রবিবার ছিল ভূরিভোজ। গ্রামের সাতশো মানুষ পাত পেরে খেয়ে আনন্দ করে ১৮০ জন শিশুকে নিজেদের সমাজভুক্ত করলেন। মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, তরকারি, মাছ, চাটনি,মিষ্টি, দই, পাঁপড়। সব খরচই করলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী জহরুল ইসলাম। তিনি জানালেন, “এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আদিবাসী সমাজে তাদের রীতি ধরে রাখা হল। অন্যদিকে ১৮০ জন শিশুর সামাজিক স্বীকৃতির জেরে তাদের সমাজ গ্রহণ করল। রমজান মাসে এই আনন্দদান আমাদের তৃপ্ত করেছে।”
এক শিশুর অভিভাবক কীর্তি মুর্মু জানান,”বাড়িতে একটা ডাকনামে ছেলে মেয়েদের ডাকতাম। কিন্তু টাকা জোগার করতে না পারায় ছাটিয়ার দিতে পারিনি। সে নিয়ে আমাদের চিন্তা ছিল। আমরা বনহাট অঞ্চলের জহরুল সাহেবকে বলি। তিনি উদ্যোগ নিতেই গ্রামের এত ছেলেমেয়েকে আমাদের সমাজ গ্রহণ করল।” আদিবাসী দিশম গাঁওতার রাজ্য সভাপতি রবীন সরেন বলেন, “আদিবাসীরা এখনও সমাজবদ্ধভাবেই থাকে। সামাজিক রীতি মেনেই চলে। ছাটিয়ার দিয়ে সমাজের সকলকে জানানোর মধ্যে একটা লৌকিকতা আছে। যিনি এই উদ্যোগে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাকে সমাজের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.