নিজস্ব চিত্র
সুকুমার সরকার, ঢাকা: রাত পোহালেই পয়লা বৈশাখ। তার আগে আজ, শনিবার দেশে নানা আয়োজনে উদযাপিত হল চৈত্র সংক্রান্তি। এদিন গ্রামবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বসেছে মেলা, গাজন। আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ খাওয়া-দাওয়ার। এইভাবেই আনন্দ-উৎসব পালন করে চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় জানানো হল। কিন্তু প্রিয় ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় উৎসবের দিনেও মুখভার বাঙালির।
প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূলে গান, কবিতা ও নানা আয়োজনে নববর্ষকে বরণ করবে ছায়ানট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। থাকবে শিল্পকলা অ্যাকাডেমি-সহ বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজন। ছায়ানটের এবারের বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য ‘স্বাভাবিকতা ও পরস্পরের প্রতি সম্প্রীতির সাধনা’। এই অনুষ্ঠান ঘিরে এখন চলছে মঞ্চ তৈরি-সহ চূড়ান্ত প্রস্তুতি। ঢাকার রমনা পার্ক প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানস্থলের সীমারেখা টানা হচ্ছে।
এদিকে পয়লা বৈশাখ উদযাপনে পান্তা আর নানা পদের ভর্তার সঙ্গে খাবারের তালিকায় থাকে ইলিশ ভাজা। পান্তা আর ভাজা ইলিশ না হলে যেন বাঙালির বর্ষবরণই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতির চাপে পয়লা বৈশাখে ইলিশের দেখা মিলছে না পাতে। এখন সাধারণ সময়ে এক কেজি ইলিশ বিক্রি হয় ২৫০০ টাকায়। কিন্তু পয়লা বৈশাখে তার দাম উঠেছে ৩৫০০ টাকা। ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়তে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৪০০ টাকা। আর ৭০০ গ্রামের ইলিশের প্রতি কেজির দাম চাওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকা। ১ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বাজারে ইলিশ কম থাকায় বিক্রেতারাও দাম কমাচ্ছেন না। খুব জোরাজুরি করলে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকার মতো কম রাখছেন।
অন্যদিকে সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুরের ধারার মহড়াও চলছে। বর্ষবরণে সুরের ধারার ‘হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ’উৎসব হবে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সুরের ধারার শিক্ষক কেশব সরকার জানান, শেষ সময়ে মহড়া চলছে পুরোদমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কাজ। বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল ৯টা থেকে। তৈরি করা হয়েছে- মুখোশ, পুতুল, চাকাসহ দেশি ঐতিহ্যের বিভিন্ন প্রতীক। শিক্ষার্থীরা রংতুলি, কাগজ, বাঁশ, বেত, চাটাই নিয়ে কাজ করছেন ভাগে ভাগে। শনিবার চারুকলায় ছিল লোকগানের পরিবেশনা। এছাড়া সন্ধ্যায় চারুকলার বকুলতলায় চৈত্রসংক্রান্তির সাংস্কৃতিক আয়োজন। রাজধানী ঢাকার শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজারের বাসিন্দারা পঞ্জিকা অনুসারে পালন করছেন চৈত্রসংক্রান্তি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্ষবরণ ও বিদায়ের অনুষ্ঠান বৈসাবির আয়োজন হল রাজধানী ঢাকায়। বসবাসরত পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জাতির মানুষ বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে বৈসাবি উৎসবে অংশ নেন। প্রতিবছর এ উৎসবের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পাহাড়ি জাতির সংখ্যা ১৩। এর মধ্যে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের বর্ষবরণ ও বিদায়ের উৎসবের আদ্যক্ষর নিয়ে হয়েছে ‘বৈসাবি’। এর মধ্যে আছে ত্রিপুরাদের ‘বৈসুক’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমাদের ‘বিজু’। তবে অন্যান্য জাতির মানুষও বিষু, বিহু, সাংক্রায়ণ নামে এ উৎসব আয়োজন করেন পাহাড়ে। চাকমাদের ফুল হল বিজু। ত্রিপুরায় এই দিনটিকে বলেন ‘হারি বৈসুক’। এদিনে বিশেষ করে ত্রিপুরা জাতিসত্তার শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারীরা নদীতে ফুল ও প্রদীপ ভাসিয়ে মা গঙ্গার আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। তাঁদের বিশ্বাস, এতে অমঙ্গল দূর হবে, পুরনো বছরের জরাব্যাধি দূর হবে। চাকমাদের প্রার্থনার মধ্যেও এই মঙ্গল কামনাই থাকে। এখন নগরজীবনের বাস্তবতায় পাহাড়িদের অনেকেই রাজধানী ছেড়ে এলাকায় যেতে পারেন না। তাই বলে উৎসবকে তো ভুলে থাকা যায় না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.