সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাদ্রিদ জলবায়ু সম্মেলনের মঞ্চ থেকে রাষ্ট্রনেতাদের সতর্ক করে দিয়েছিল। এবার দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনেও ফের কিশোরীর কড়া বাক্যবাণ, শানিত প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে তাবড় রাষ্ট্রনায়কদের। সপ্তদশী সুইডিশ কিশোরী, পরিবেশবিদ গ্রেটা থুনবার্গ ইতিমধ্যেই বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়ে পৌঁছে গিয়েছে দাভোসের কাছে ক্লস্টার নামে একটি শহরে। সঙ্গে তার অন্তত ১০ হাজার সৈনিক। প্রত্যেকের হাতে জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল সংক্রান্ত পোস্টার। প্রতিস্পর্ধা নিয়ে তারা বলছে, ”এখনও তোমরা কিছুই দেখনি। আমাদের শেষটুকু দেখা তোমাদের বাকি আছে।”
সুইজারল্যান্ডের লুসানে শহরে সম্প্রতি বক্তব্য রাখতে দিয়ে গ্রেটা বলেছে, ”আমরা একটা নতুন দশকে পা দিয়েছি। গত দশকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল, তার কোনওটাই কার্যকর হতে দেখিনি। পৃথিবীতে ক্ষমতার শীর্ষে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের বলছি – আপনারা এখনও কিছুই দেখেননি। আমরা শেষপর্যন্ত কী করতে পারি, তা দেখা বাকি। এই বার্তা নিয়েই আমি পরের সপ্তাহে দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে আসছি।” সে আরও বলছে, ”কোটিপতিদের দিন শেষ। বিশ্ব তাঁদের ভার আর বইতে পারছে না।”
লুসান শহরে গ্রেটার সঙ্গীদের হাতে ধরে থাকা পোস্টারে লেখা – ‘ওঠো, দাবানলের ধোঁয়া আর গন্ধে পরিপূর্ণ বাতাসে শ্বাস নাও।’ কোথাও আবার লেখা – ‘দেরি হচ্ছে, কিন্তু একেবারে দেরি হয়ে যায়নি।’ গ্রেটার পাশে দাঁড়াতে ট্রেনে করে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সকলে হাজির হয়েছে ক্লস্টারে। সেখান থেকে দাভোস ঢিল ছোঁড়া দূরত্বমাত্র। লুসানে গ্রেটা ও তার দলবলের সমর্থনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেনিয়ার পরিবেশ কর্মী এনজোকি এনজেহু বলেন, ”দাভোসের মঞ্চ থেকে আমরা আওয়াজ তুলব যে আপনাদের সময় শেষ। অন্তত ২০টি দেশ একযোগে এর সমর্থনে সরব হবে।”
আগামী ২১ থেকে ২৪ জানুয়ারি, দাভোসে রাষ্ট্রনেতাদের সমাবেশে অর্থনীতি এবং রাজনীতি সংক্রান্ত আলোচনার মধ্যে দিয়ে স্থির হবে চলতি বছরের বিশ্বের কোন দেশ, কোন পথে হাঁটবে, তার রূপরেখা। সেই সমাবেশে যোগ দেবে গ্রেটা থুনবার্গও। তবে তার উপস্থিতিতে যে সম্মেলন খুব একটা মসৃণ হবে না, তার আগাম ইঙ্গিত তো এখনই দিয়ে রাখছে সপ্তদশী গ্রেটা। পরিবেশ রক্ষায় গাফিলতির জন্য বড়দের প্রশ্নের মুখে ফেলবে সে, তীব্র বাক্যবাণে বিদ্ধ করবে, প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিতে পারে। এবারে দাভোসের মঞ্চে শোরগোল ফেলতে পারে অস্ট্রেলিয়ার দাবানল। যদিও এর সঙ্গে বিশ্ব উষ্ণায়নকে সম্পর্কিত করতে নারাজ রাষ্ট্রনেতারা। কিন্তু এ যে উষ্ণায়নেরই অভিশাপ, তেমনটাই বলছে পরিবেশ বিজ্ঞানী মহল।
গত বছর দাভোস সম্মেলন থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদকে ‘ভুয়ো’ বলে গুরুত্বহীন করার চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি প্যারিস চুক্তি ভেঙে বেরতে চেয়েছিলেন। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে বেশ সমালোচনাও হয়েছিল। কিন্তু নতুন দশকে এই সমস্যা সত্যিই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে এবার পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্ব সহকারে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গ্রেটাদেরই তার অভিশাপ কুড়োতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.