সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গুঞ্জন আগেই ছিল। রবিবার সমস্ত জল্পনা সত্যি করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেন জো বাইডেন। এই বর্ষীয়ান ডেমোক্র্যাট নেতার সিদ্ধান্ত জানার পরই প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতারা। তালিকায় রয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট ইসাক হেরজোগ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। অন্যদিকে, আমেরিকার আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য রেখেছে রাশিয়াও।
বাইডেনের এই ঘোষণার পর তাঁকে ‘মহান মানুষ’ বলে সম্বোধন করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘ বহু বছর ধরে আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেন চিনি। তিনি নিজের দেশকে ভালোবেসে কাজ করেছেন। ভালোবেসে দেশবাসীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরিচালনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি কানাডার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ও বিশ্বস্ত বন্ধু। তাঁকে এবং ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ‘ বলে রাখা ভালো, খলিস্তানি নেতা নিজ্জর খুনে সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও কানাডা। কিন্তু ‘বন্ধু’ দিল্লির পাশ থেকে সরে খানিক অটোয়ার হয়েই কথা বলতে দেখা গিয়েছিল ওয়াশিংটনকে। আমেরিকা জানিয়েছিল, এই বিষয়ে সবরকম তদন্তের অধিকার রয়েছে কানাডার। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় ভারতও।
২০২২ সালে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। দুদেশের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কিয়েভের পাশে রয়েছে বাইডেন প্রশাসন। বিরাট অংকের সামরিক প্যাকেজ বা অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র দিয়ে ‘বন্ধু’র পাশে রয়েছে আমেরিকা। সেই কথা স্মরণে রেখে বাইডেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘কঠিন হলেও এটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সবরকমভাবে আমাদের সাহায্য করেছেন। এর জন্যই আমরা পুতিনের দখল থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে পেরেছি। এখনও আমেরিকা এই ভয়ংকর যুদ্ধে আমাদের সাহায্য করে যাচ্ছে।’
বাইডেনের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসতেই আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেছে রাশিয়া। ক্রেমলিন সাফ জানিয়েছে, ‘আমেরিকার অন্দরে কী হচ্ছে তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও আমাদের কোনও আগ্রহ নেই। আমরা শুধু আমাদের লক্ষ্যে অটল। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে জয়লাভ করাই আমাদের উদ্দেশ্য।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন কতদিন চলবে তার উত্তর এখনও অধরা। বাইডেন সরে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচন থেকে। ফলে ট্রাম্প যদি ক্ষমতায় ফেরেন তা ইউক্রেনের জন্য কতটা মঙ্গল হবে সেনিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কারণ এই যুদ্ধ নানা মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিয়েভকেই সমঝোতার পথে হাঁটার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। এই রিপাবলিকান নেতা কতটা জেলেনস্কির দিকে সাহায্যের হাত বজায় রাখবেন সেটাই এখন প্রশ্ন।
এদিকে, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামাসের সঙ্গে লড়াই চলছে ইজরায়েলের। গাজায় মৃত্যুমিছিল নিয়ে সরব হলেও এই লড়াইয়ে ইহুদি দেশটির পাশে রয়েছে আমেরিকা। যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে সবরকম চেষ্টা করছে মার্কিন প্রশাসন। যুদ্ধ আবহেই ইজরায়েলে গিয়েছিলেন বাইডেন। সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে ইজরায়েলি প্রেসিডেন্ট হেরজোগ বলেন, “কয়েক দশক ধরে ইজরায়েলের মানুষদের পাশে রয়েছেন বাইডেন। যুদ্ধের মাঝেও তিনি আমাদের দেশে এসেছিলেন। যা দুদেশের মধ্যে মজবুত বন্ধুত্বের প্রতীক।” বাইডেন সরে যাওয়ার আগামিদিনে চাপ বাড়বে ইজরায়েলের উপরও। কারণ গাজা যুদ্ধ নিয়ে বাইডেনকে তোপ দেগে ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিতে শোনা গিয়েছে ট্রাম্পকে।
এছাড়াও বাইডেনের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ। দুজনেই বাইডেনের নেতৃত্বে আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে কার্যত নিশ্চিত ছিলেন বাইডেন। কিন্তু ৮১ বছরের এই নেতা কি আগামিদিনে আমেরিকাকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে সক্ষম? মার্কিন মুলুকে সেই প্রশ্নই উঠেছে বারবার। বিশেষত ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে’ রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে রীতিমতো বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল ডেমোক্র্যাট নেতাকে। বাইডেনকে প্রার্থী করা নিয়ে দ্বিধায় ছিল তাঁর দলও। এর মধ্যে জানা গিয়েছিল, শারীরিক কারণে বাইডেনের পরিবারও চাইছে না ফের ভোটে লড়াই করুন তিনি। অবশেষে আগামী নির্বাচন থেকে সরে আসার কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.