সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শ্রীলঙ্কা বললেই চোখে ভেসে ওঠে বিদেশি পর্যটকে ঠাসা সমুদ্রসৈকত। ঝাঁ-চকচকে কলম্বো বা গলের রাস্তায় উদ্দাম নিশি উদযাপন। ঝলমলে বহুতল ও কালো মসৃণ মেটাল রোডে লম্বা লম্বা বহুমূল্য গাড়ি। কিন্তু কয়েকদিনেই বদলে গিয়েছে সেই ছবি। এখন বাড়িতে আলো জ্বালানোর মতো বিদ্যুৎ নেই দেশটায়। গৃহস্থের ঘরে রান্না করার গ্যাস নেই। টাকা থাকলেও বাজারে মিলছে না পণ্য। বড় বাড়ি ও গাড়ির মালিকও খাদ্যের অভাবে একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কাকে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থসাহায্য দিতে চলেছে বিশ্ব ব্যাংক (World Bank)।
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়ে কার্যত দেউলিয়া শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)। পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে জ্বালানি থেকে শুরু করে ওষুধ পর্যন্ত কিছুরই জোগান প্রায় নেই বললেই চলে। বিদেশি মুদ্রাভাণ্ডার শূন্য হয়ে যাওয়ায় আমদানি করা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার উপর রয়েছে ঋণের বোঝা। এহেন পরিস্থিতিতে মানবিকতার খাতিরে দ্বীপরাষ্ট্রটির পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। দীর্ঘ আলোচনার পর এবার কলম্বোকে খানিকটা স্বস্তি দিয়ে অর্থসাহায্যে রাজি হয়েছে বিশ্ব ব্যাংক বলে সূত্রের খবর। শ্রীলঙ্কার সংবাদপত্র ‘কলম্বো গেজেট’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার বিদেশমন্ত্রী জয় এল পেইরিসের সঙ্গে দেখা করেন বিশ্ব ব্যাংকের কানট্রি ম্যানেজার চিও কান্দা। বৈঠকে কান্দা জানান, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের সঙ্গে মিলিতভাবে শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়াবে বিশ্ব ব্যাংক। শ্রীলঙ্কাকে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আসন ছাড়লেও শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভ থামছে না। বিশেষ করে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। রাজাপক্ষে পরিবারের প্রতি ক্ষোভের সেই আঁচ পোহাতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহেকে (Ranil Wickremesinghe)। তাই পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে এবার যুবপ্রজন্মকে শাসন ব্যবস্থার অংশ হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। দেশের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খর্ব করে সংসদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রস্তাবটি তুলে ধরেন রনিল। জাতির উদ্দেশে বার্তায় তিনি জানান, আইনপ্রণেতা, বিশেষজ্ঞ ও যুবপ্রজন্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংসদীয় কমিটি গড়া হবে। বিক্রমসিংহের কথায়, “আজ তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তনের ডাক দিচ্ছে। বর্তমান পরিকাঠামো বদলে ফেলতে চাইছে তারা। বর্তমান পরিস্থিতি কী সেটা জানতে চাইছে তারা। তাই সরকারের ১৫টি কমিটির প্রতিটিতে চারজন করে যুবপ্রজন্মের প্রতিনিধি থাকুক এটা আমি চাই। “
উল্লেখ্য, তুমুল সংকটের জন্য ক্ষমতাসীন রাজাপক্ষে পরিবারকে দায়ী করে গণবিক্ষোভ করছে দেশটির মানুষ। তাঁরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করছে। চরম আর্থিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কার মানুষ গত এপ্রিল মাস থেকেই রাস্তায় নেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করছেন। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিক্ষোভ বেড়েছে। দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.