তরুণকান্তি দাস: দাই, ছোরি চাহিয়ে৷ গোরি গোরি ছোরি৷ মোদ্দা বাংলা করলে দাঁড়ায়, “দাদা, মেয়ে লাগবে৷” বিশেষণ, সে ফর্সা৷ সুন্দরী এমন গ্যারান্টি নেই৷ তবে সব খুল্লম খুল্লা৷ বিফলে মূল্য ফেরত৷
কাঠমাণ্ডু শহরের হৃৎপিণ্ডের অলিন্দ থামেলচকে সন্ধ্যা গাঢ় হলেই কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়৷ এমনিতে এই চত্বরটা যেন বিদেশি পর্যটকদের জন্য বরাদ্দ৷ ডলার-ইউরোর ছড়াছড়ি৷ সেখানে রাস্তার দু’ধারে হরেক মাল কেনাবেচার মধ্যে গজিয়ে ওঠা একের পর এক ডান্স বার৷ রাশিয়া থেকে বাংলাদেশি – ডান্সফ্লোরে কোন দেশের মহিলা নেই! নেপালি? তা আবার বলতে লাগে নাকি? গোরি ছোরিরা এদেশীয়, এবং শুধু এভারেস্ট বা অন্নপূর্ণা সার্কিটের টান নয়, এই নয়া শরীরী সার্কিটে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিদেশিরা৷ এবং শুধু কাঠমাণ্ডুর থামেল নয়, আর এক অতি আকর্ষণীয় মনোরম এলাকা পোখরাতেও হুমড়ি খাচ্ছে জনতা সেই একই আদিম রিপুর অদম্য আকর্ষণে৷ সংরক্ষণশীল, রাজতন্ত্রে একদা আস্থা রাখা বিশ্বের শেষতম হিন্দুরাষ্ট্র সত্যিই বদলে গিয়েছে৷ গত বছরের ভূকম্পন যদি তাদের অবশ্য-দ্রষ্টব্য হেরিটেজ সাইটগুলিকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে থাকে, তবে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে নিশ্চিতভাবে এই নয়া চক্কর৷ যা মনে করাচ্ছে এশিয়ার সেক্স টুরিজমের ভরকেন্দ্র ব্যাংকক ও কিছুটা তাসখন্দকে৷ কলকাতার বার-কালচার থেকে যা আলাদা৷
যেমন পাটায়ার ওয়াকিং স্ট্রিট বা ফুজেটের বাংলা রোড৷ দিনের বেলা হাঁটলে মনে হবে পাড়ার রাস্তায় হাঁটছি৷ সূয্যিমামা পশ্চিমে গেলেই ভোল বদলে মোহময়ী হয়ে ওঠা৷ নগ্নতার সংজ্ঞা বদলে ফেলে রোজ কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা দেওয়া তাইল্যান্ডের দুই চত্বর৷ নেপালে কাঠমাণ্ডু ও পোখরাতে দেখছি তারই ছায়া৷ সেই ডান্স ফ্লোর৷ সেই একটা বিয়ার হাতে নিয়ে ঢুকে পড়া বিদেশিদের কাছ থেকে বার-রুমে নানা অছিলায় কামাইয়ের ধান্দা৷ গায়ের উপর মহিলার উৎপটাং নাচ৷ যেন ‘কতদিনের চেনা’ এই শরীরী আবেদন নিয়ে হাজির হয়ে ড্রিংকস-এর পেমেন্ট করিয়ে নেওয়া৷ এবং সবই গোরি-গোরি ছোরি৷ ব্যাংকক, তাসখন্দ বা নেপাল সবই তো সফেদ, সাদা চামড়ার ভিড়৷ তাই মানচিত্র আলাদা হলেও পকেট ভরার পথ একই৷ তবে কি ঘুরে দাঁড়াতে এই দরজা খুলে দিল নেপাল?
বিমানবন্দর থেকে থামেলচক মেরেকেটে পাঁচ-সাত কিলোমিটার৷ সারি দিয়ে হোটেল৷ পার্কিং লট৷ সামান্য দূরেই নারায়ণহিতি প্রাসাদ৷ রাজতন্ত্র, রক্ষণশীলতার পতাকা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা রাজদরবার৷ চক অর্থাত্ এই মোড়-এর মাথায় জ্বলজ্বল করছে বিরাট বোর্ড৷ সার্ক এর সদর দফতর৷ স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে থাকা রক্ষীর মাথায় হেলমেট৷ জুলজুল করে তাকিয়ে থাকা চোখের সামনে প্রশ্ন করি, “ছোরি চাই বলছে যে!” আরও মজার চন্দ্রবিন্দুসম চোখ নাচিয়ে মৃদু হাসি বুঝিয়ে দেয়, মজা নিতে এসেছেন৷ মজা নিন৷ আম খান৷ গাছ দেখে কী হবে?
সত্যিই তাই৷ গোল্ডেন, প্রিন্স, রাকা দোস্ত নাম নিয়ে দুমদাম গানবাজনা চালিয়ে যাওয়া মেলের বারগুলি যেন পাটায়ার ঠিক প্রতিচ্ছবি৷ আর পোখরা লেকসাইড তো আরও সাংঘাতিক৷ কী নেই! হুকা বার থেকে গাঁজার পুরিয়া, বিলিতি থেকে পাহাড়ি ছাং৷ সব মিলবে৷ শুধু ডলার চাই৷ শুধু “ভারতীয়দের নিয়ে একটু নাক সিঁটকানো ভাব রয়েছে৷ কারণ আমাদের ধারণা ইন্ডিয়ানরা কৃপণ হয়৷” বলছেন নেপাল টুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা সাংদ্রুপ ভাণ্ডারি৷ আর পোখরা টুরিজম প্রমোশন কাউন্সিলের কর্তা বিনয় শ্রেষ্ঠ ছবিটা বদলে যাচ্ছে মেনেও লাজুক মুখে বলেন, “ব্যাংকক হয়ে যায়নি৷ বিদেশিদের কথা ভেবে উদার তো হতেই হয়৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.