সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অবাধ হবে বলে মনে করেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তাই নির্বাচনে পরাজিত হলেও নৈতিকভাবে হার না-ও স্বীকার করতে পারেন রিপাবলিকান প্রার্থী৷ যদিও মার্কিন গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যে এটাই দীর্ঘদিনের প্রথা৷ ক্ষমতা হস্তান্তরের এই রীতিকে অস্বীকার করে গোটা রাজনৈতিক মহলকে চমকে দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী৷
নির্বাচনের আগে শেষ সরাসরি বিতর্কে গত বুধবার রাতে মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প ও তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন৷ সেখানেই ট্রাম্প এই অবস্থান ঘোষণা করে জানান, সময় হলেই তিনি এ ব্যাপারে মুখ খুলবেন৷ আপাতত রহস্যটাই বজায় থাকুক৷ স্বাভাবিকভাবেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি হিলারি৷ প্রতিদ্বন্দ্বীর এই মনোভাব ‘অত্যন্ত ভয়ঙ্কর’ বলে আক্রমণ করেন তিনি৷ ইউনিভার্সিটি অফ নেভাদায় বিতর্কমঞ্চ থেকে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “৮ নভেম্বর নির্বাচনের ফল বেরনো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন৷ এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি৷ তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী ঘোষণা করব৷” যদিও প্রায় দেড় ঘণ্টার বিতর্কে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন অবাধ হবে বলে তিনি মনে করেন না৷ ট্রাম্প বলেন, “সংবাদমাধ্যম অত্যন্ত অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত৷ ওদের উপর চাপও প্রচণ্ড৷ ভোটারদের মনে ওরা বিষ ঢোকাচ্ছে৷ এমনকী, ওরা কোনও কিছুর পরোয়া করে না৷ কিন্তু ওদের দুর্ভাগ্য, মানুষ মিথ্যার জাল কেটে বেরিয়ে আসবে৷”
তবে ট্রাম্প যা-ই বলুন, লাস ভেগাসে তাঁর মন্তব্য অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে মনে করে সিএনএন৷ আধুনিক যুগে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দু’-তিন সপ্তাহ আগে এমন ঘটনা আগে দেখা যায়নি৷ সিএনএন জানিয়েছে, “মার্কিন রাজনীতির অন্যতম মৌলিক আদর্শকে চ্যালেঞ্জ করছেন ট্রাম্প৷ শান্তিপূর্ণ, বিতর্কহীন ক্ষমতা হস্তান্তরের যে রীতি, নির্বাচনে জয়ের পর স্বীকৃত উত্তরসূরির হাতে শাসনভার তুলে দেওয়ার প্রথা তিনি অস্বীকার করতে চাইছেন৷” কারণ, প্রথা অনুযায়ী নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর পরাজিত প্রার্থী প্রকাশ্যে হার স্বীকার করে বিজয়ীকে অভিনন্দন জানান৷ বিতর্কসভার সঞ্চালক ফক্স নিউজের ক্রিস ওয়ালেসের প্রশ্নের জবাবে সেই রীতিকেই অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প৷
যথারীতি প্রতিদ্বন্দ্বীকে আক্রমণ করে ট্রাম্পকে ‘রাশিয়ার হাতের পুতুল’ বলে কটাক্ষ করেন হিলারি৷ তাঁর দাবি, “ট্রাম্প আমাদের গণতন্ত্রকে অস্বীকার ও মর্যাদাহানি করছেন৷ কোনও প্রধান রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী এমন অবস্থান নিতে পারেন, ভেবেই অবাক হচ্ছি৷ যখনই ডোনাল্ড বুঝতে পারেন ঘটনাপ্রবাহ তাঁর পক্ষে নেই, তখনই রিগিংয়ের অভিযোগ তোলেন৷ কিন্তু এখানে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়৷ পছন্দ না হলেও জনতার রায় আমরা মেনে নিই৷ নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীর সেটা মেনে নেওয়া উচিত৷” এই বিতর্কেও দুই প্রার্থীর রেষারেষি চরমে উঠেছিল৷ অনুষ্ঠান শুরুর আগে তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে করমর্দনও করেননি৷ মহিলাদের দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার মিথ্যা অভিযোগ করানো হচ্ছে বলে ক্লিনটনের দিকে আঙুল তুলেছেন ট্রাম্প৷ তাঁর দাবি, নির্বাচনে হিলারিকে লড়তে দেওয়াই উচিত হয়নি৷ ই-মেল কাণ্ড, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব-সহ নানা অভিযাগে হিলারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে তাঁর দাবি৷
ট্রাম্প আরও বলেন, যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে হেনস্তার কথা বলছেন, প্রত্যেকেই দশ মিনিটের জন্য বিখ্যাত হতে চান৷ তাঁদের প্রতিটি কথাই মিথ্যা, ভিত্তিহীন৷ সে জন্য স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের কাছে তিনি ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন বোধ করছেন না৷ আয়কর ফাঁকি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় হিলারিকে ‘নোংরা মহিলা’ বলতেও ছাড়েননি ট্রাম্প৷ যদিও বারবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, জনমত সমীক্ষায় হিলারি এগিয়ে থাকায় তিনি কতটা হতাশ৷ তাই অবৈধ অনুপ্রবেশ, গর্ভপাতের অধিকার ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয় তুলে কট্টরপন্থীদের সমর্থন পেতে চেয়েছেন৷ এদিনের বিতর্কে দর্শকদের বিচারে হিলারিকেই ১৩ পয়েণ্টে বিজয়ী বলে মনে করে সিএনএন৷ উল্লেখ্য, তিনটি বিতর্কসভাতেই দর্শকদের বিচারে হিলারি এগিয়ে৷ কিন্তু তৃতীয় তথা শেষ বিতর্কে দুই প্রার্থীর ব্যবধান সবচেয়ে কম৷ পাশাপাশি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা রেকর্ড কুড়ি কোটি ছাড়িয়েছে৷ তবে এই হিসাব ডেমোক্র্যাট দলের তথ্য অনুযায়ী৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.