সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শনিবার রাত থেকেই ইজরায়েলের আকাশে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্রের আনাগোনা। আত্মরক্ষার স্বার্থে লৌহবর্মে মুড়েছে তেল আভিভও। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে কেন এই যুদ্ধের মেঘ ঘনাল? হঠাৎ কেন তেল আভিভে আক্রমণ শানাল তেহরান? কী বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা?
রাষ্ট্রসংঘের চার্টারের ৫১ নম্বর ধারার উল্লেখ করে ইরান বলছে, আত্মরক্ষার স্বার্থেই এই আক্রমণ। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইজরায়েল। যেখানে অন্তত ১৩ জন প্রাণ হারান। মৃতদের মধ্যে ছিলেন দুজন ইরানি সেনাকর্তাও। এই হামলার পিছনে ইজরায়েলের ‘হাত’ দেখছে তেহরান। ইজরায়েলি আগ্রাসনের সামনে আত্মরক্ষার্থেই এই হামলা বলে দাবি ইরানের। রাষ্ট্রসংঘে দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইজরায়েল যদি আর একটা ভুল করে তাহলে শাস্তি হবে আরও কঠিন।
কূটনৈতিক মহলের একাংশের মত, ব্যাপারটা এতটাও সহজ নয়। ইরানের হামলার নেপথ্যে রয়েছে অন্য কারণও।
শুরু থেকেই গাজায় ইজরায়েলের ধ্বংসাত্মক হামলাকে ভালোভাবে নেয়নি ইরান। তেহরানের তরফে বারবার প্যালেস্তিনীয়দের উপর হামলার নিন্দা করা হয়। তবু পিছু হটেনি তেল আভিভ। বরং তারা আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়ায়। ইজরায়েলকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিল প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। মদত জোগাচ্ছিল তেহরান। কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি। তাদের কার্যত ল্যাজেগোবরে করে ছেড়েছে তেল আভিভ। আর তাই রাগে ফুঁসছিল ইরান।
ইজরায়েলকে মার দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ইরানের ‘ছায়াযোদ্ধা’ হাউথিও। কিন্তু তারাও সুবিধা করতে পারেনি। এদিকে লেবাননের হেজবোল্লারা চলে ইরানের রাইসি সরকারের ইশারায়। ইরাক-সিরিয়ায় মার্কিন ফৌজকে পালটা মার দিতে মিলিশিয়া গোষ্ঠীতেও টাকা ঢালছে তেহরান। কিন্তু কোনওদিকেই বিশেষ সুবিধা হয়নি। তাই এতদিন ‘জায়নবাদে’র বিরুদ্ধে তারা ‘ছায়াযুদ্ধ’ চালালেও চার দশকের মধ্যে এবারই সরাসরি ইজরায়েলে হামলা করল তারা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছে, ইজরায়েল-আমেরিকাকে বার্তা দিতেই এবার হামলা। কার্যত মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম রাষ্ট্রগুলির ‘প্রধান’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে ইরান। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যদি তারা এগিয়ে এসে পদক্ষেপ না করত, তবে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যেত। জল যাতে সেদিকে না গড়ায়, তার জন্য এই ব্যবস্থা। শুধু কি তাই?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইজরায়েলে হামলা করে আমেরিকাকেও বার্তা দিয়ে রাখল ইরান। ওয়াশিংটন যাতে ইজরায়েলের ‘আগ্রাসী’ মনোভাবকে কোনওভাবেই সমর্থন না করে। সমর্থন করলে ‘শেষ না হওয়া এক যুদ্ধে’ জড়িয়ে যাবে আমেরিকাও। কারণ, ইতিমধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে তারা। নতুন করে ‘ফন্ট’ খুললে বিপাকে পড়বে মার্কিন প্রশাসন। একাধিক যুদ্ধে জড়াতে শুরু করলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে বাহিনী সরাতে হবে। সেক্ষেত্রে খোলা মাঠ পেয়ে যাবে চিন। যা আমেরিক জন্য ভালো হবে না।
সবমিলিয়ে ইজরায়েলকে আক্রমণ করে ইরান একঢিলে একাধিক পাখি মেরে রাখল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.