Advertisement
Advertisement

Breaking News

Imran Khan

রাজনীতিতে সবাই শত্রু! পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের উপর হামলার নেপথ্যে কারা?

হাসপাতালে ইমরান খানের প্রথম প্রতিক্রিয়া, 'আল্লা আমায় আরও একটা জীবন দিলেন।'

Why Imran Khan was shot? Multiple reasons arise according his political stand | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:November 3, 2022 7:38 pm
  • Updated:November 3, 2022 7:38 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনি যখন ক্রিকেট ব্যাট তুলে রাখছিলেন, হৃদয় ভেঙেছিল গোটা পাকিস্তানের (Pakistan)। গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে সুর উঠেছিল, ‘কভি আলবিদা না কহেনা।’ তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের অনুরোধে সাড়া দিয়ে অবসর ভেঙে ফিরে এসেছিলেন। হাতে তুলে নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেনের আর্মব্য়ান্ড। তারুণ্য আর অভিজ্ঞতায় মেশানো একটা দল নিয়ে উড়ে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। পরের ঘটনা সবারই জানা। বিশ্বকাপ নিয়ে ফিরেছিলেন পাকিস্তানে।

ইমরান খান (Imran Khan) গোটা দেশের কাছে অধিনায়ক, কিন্তু সতীর্থদের কাছে বড় ভাই। নিজের রাজনৈতিক দলের উপরও ছিল তাঁর দারুণ কর্তৃত্ব। খেলার মাঠে অবিসংবাদী নেতা হলেও পাক রাজনীতিতে তিনি মোটেও অজাতশত্রু নন। বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণ, মিথ্যা প্রচার, ষড়যন্ত্র ইমরান খানকে গদিচ্যুত করে। কিন্তু তিনি তো চিরকালের ফাইটার। চক্রব্যুহ ভেদ করে বারবার ফিরে আসাকেই অভ্যেসে পরিণত করে ফেলেছিলেন। রাজনীতির ময়দানেও সেই একই ছন্দে ধরা দিচ্ছিলেন বহু যুদ্ধের নায়ক ইমরান। সরকার বিরোধী অবস্থান নিয়ে গোটা দেশে ‘রিয়েল ফ্রিডম’ শুরু করেছিলেন। তাঁর সেই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। ইমরানের ক্যারিশমাই তো এরকম। খুব সহজেই জিতে নিতে পারতেন সতীর্থদের হৃদয়। জেতার জন্য ছক ভেঙে বারবার বেরিয়ে আসতেন। ৯২’র বিশ্বকাপ ফাইনালে নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে তুলে এনেছিলেন ৩ নম্বরে। মারমুখী ৭২ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে পৌঁছে দিয়েছিলেন নিরাপদ আশ্রয়ে। লড়াই যে তাঁর রক্তে, লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে কোনওদিনই পালিয়ে আসেননি। তাই তো বৃহস্পতিবার ওয়াজিরাবাদে বুলেট লেগে রক্তাক্ত হওয়ার পরে ইমরানের প্রথম প্রতিক্রিয়া, “আল্লা আমায় আরও একটা জীবন দিলেন। আল্লার ইচ্ছেয় আমি আবার লড়াই করব।” ইমরান খান নতুন করে দেখছিলেন পাকিস্তানের তখত।

Advertisement

[আরও পড়ুন: খারিজ প্রাণরক্ষার আরজি, লালকেল্লা হামলার মূল চক্রী আরিফের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট]

কথায় বলে, বন্যেরা বনে সুন্দর, ইমরান ক্রিকেট মাঠে। রাজনীতি বারবার রক্তাক্ত করেছে তাঁকে। কার্যত জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ নিয়ে বাস করছিলেন তিনি। নিজের দলের উপর রাশ থাকলেও পাকিস্তানের ‘ভাগ্যবিধাতা’ পাক সেনা কিংবা দেশের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই, কারওর সঙ্গেই বিশেষ সদ্ভাব ছিল না ইমরানের। এমনকী, স্বভাববিরুদ্ধভাবে আমেরিকার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে সদ্ভাব তৈরি করছিলেন তিনি। লোকে বলে, আমেরিকা-ISI-পাক সেনার ষড়যন্ত্রেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন সামরিক গুপ্তচর শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ অঞ্জুম। দাবি করেন, ইমরান সেনার সমালোচনা করছেন, কারণ সেনা তাঁর কথা মতো অসাংবিধানিক কাজ করতে সম্মত হয়নি। শুধু তাই নয়, আইএসআই প্রধান আরও অভিযোগ করেন, নিজের সরকার টিকিয়ে রাখতে মদতের বিনিময়ে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে একটি ‘লোভনীয়’ প্রস্তাবও দিয়েছিলেন ইমরান। অভিযোগের পালটা দিয়ে ইমরান বলেছিলেন,”চাইলে আইএসআইয়ের মুখোশ খুলে দিতে পারতাম। কিন্তু দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই কাজ করিনি।” প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর এমন খুল্লামখুল্লা হুঁশিয়ারিকে মোটেও ভালভাবে নেয়নি ISI। এদিনের এই হামলা সেই বৈরিতার ফল কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

শুধু ISI কিংবা পাকিস্তানি সেনা নয়, ইমরান চক্ষুশূল ছিলেন সে দেশের ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন)-এরও। গদিচ্যুত হওয়ার পরও দমে যাননি তিনি।বরং ফাইট ব্যাক করেছেন। ইমরান ভোটে দাঁড়াতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। তারপরেও দেশজুড়ে ‘রিয়েল ফ্রিডম’ যাত্রা শুরু করেছেন। যার একমাত্র উদ্দেশ্য বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করে নিজের পালে হাওয়া টানা। দেশজুড়ে শাহবাজ শরিফ বিরোধিতার আবহ তৈরি করা। ইমরানের ক্রমাগত রাজনৈতিক আন্দোলন চাপ তৈরি করছিল সরকারের উপর। সেই চাপ কাটাতেই কি নিশানা করা হল তাঁকে?

[আরও পড়ুন: ইমরান খানের মিছিলে হামলা, গুলিবিদ্ধ প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে]

রাজনীতির ময়দানে শক্রর অভাব ছিল না নেতা ইমরানের। তাঁকে রক্তচক্ষু দেখিয়েছিল তেহরিক-ই-তালিবানও (টিটিপি)। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাদের সঙ্গে আলোচনার পথে হেঁটেছিলেন ইমরান। কিন্তু লাভ হয়নি। তেহরিক-ই-তালিবান জানিয়েছিল, তারা পাক সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করবে না। ফলে নাশকতার আশঙ্কা বাড়ে। সরকারের সঙ্গে গোপনে আলোচনা চালাচ্ছিল তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি)। জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান মুফতি নুর ওয়ালি নিজে বিষয়টি দেখছিল। সরকারের তরফ থেকে তাদের অস্ত্র ছেড়ে আলোচনায় ফিরে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেসব শর্ত মানতে রাজি হয়নি সংগঠনটি। ইসলামাবাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে টিটিপি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিল, কোনও ধরনের সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণার আগে পাকিস্তানের জেল থেকে তাদের বন্দি সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে। এই আলোচনা চলাকালীনই ক্ষমতা হারান ইমরান। ফলে এবার তারাই কি নিশানা করল প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীকে? সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

পাকিস্তান থেকে কাট টু অস্ট্রেলিয়া। সেই দেশের মাটিতেই পাকিস্তানের জয়ধ্বজা উড়িয়েছিলেন ক্যাপ্টেন ইমরান খান। ওয়াজিরাবাদ যখন উত্তপ্ত, সরকার বিরোধী স্লোগানে এলাকা কাঁপছে, ঠিক তখনই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও বিশ-বিশের যুদ্ধে টিকে থাকার মরিয়া লড়াই চালাচ্ছেন বাবর আজম-রিজওয়ানরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তো লড়াই জিতে নিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু গুলি হজম করেও ইমরান কি পারবেন আবার ফিরে আসতে? জলে কুমির-ডাঙায় বাঘের সঙ্গে লড়াই করে পাকিস্তানের ভাগ্যবিধাতা হয়ে উঠতে? ইমরানকে ঘিরে প্রশ্ন গোটা পাকিস্তানজুড়ে। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement